অবশেষে হলুদের ঢেউ উঠলো লাস ভেগাসের অ্যালিগেন্ট স্টেডিয়ামে। ভিনিসিয়ুস, সাভিনহো, লুকাস পাকেতা আর রদ্রিগোদের সেই হলুদের ঢেউয়ে ভেসে গেলো প্যারাগুয়ে। ৪-১ গোলের বিশাল জয়ে কোপা আমেরিকার কোয়ার্টারের পথে অনেকটাই এগিয়ে গেলো অন্যতম ফেবারিট ব্রাজিল।
কোস্টারিকার জমাট রক্ষণে ধাক্কা খেয়ে প্রথম ম্যাচে যখন একের পর এক গোল ফিরে আসছিলো, তখন ব্রাজিল সমর্থকদের হৃদয়ে হাহাকারের ঢেউ ওঠে। শঙ্কা দেখা দেয়, প্যারাগুয়ের বিপক্ষে না জানি হেরে যায়।
কিন্তু ব্রাজিল কোচ কৌশল পরিবর্তন করেন। রাফিনহার পরিবর্তে সাভিনহোকে মাঠে নামান আজ। ফলে ব্রাজিলের আক্রমণের ধার বেড়ে যায়। ভিনিসিয়ুসের সামনে প্যারাগুয়ের রক্ষণ পুরো উন্মুক্ত হওয়ার সুযোগও তৈরি হয়। যে কারণে জোড়া গোল করতে সক্ষম হন রিয়াল মাদ্রিদ তারকা। সাভিনহোর গোলেও ছিল তার অবদান।
শুধু তাই নয়, দারুন এক হ্যাটট্রিকের সুযোগ পেয়েছিলেন ভিনিসিয়ুস। দ্বিতীয়ার্ধের পেনাল্টি শটটা চাইলে তিনি নিতে পারতেন; কিন্তু প্রথমার্ধে লুকাস পাকেতা পেনাল্টি মিস করে যে আত্মগ্লানিতে ভুগছিলেন, তাতে তিনি যেন সেখান থেকে বের হতে পারেন, তাই ভিনি পাকেতাকেই পূনরায় পেনাল্টি কিক নেয়ার সুযোগ করে দেন। পাকেতাও দারুণ বুদ্ধিদীপ্ত শটে গোল করে ব্রাজিলকে ৪-১ ব্যবধানে জয়ে ভূমিকা রাখেন।
প্রথম ম্যাচে কোস্টারিকার সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে ভক্তদের হতাশ করেছিল ব্রাজিল। দ্বিতীয় ম্যাচেই খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসলো ব্রাজিল ফুটবলাররা। খেললো সাজানো-গোছানো ছন্দময় ফুটবল।
প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে টানা ৫ ম্যাচে জয় ছিল না ব্রাজিলের। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ৪ ম্যাচে (তিন ম্যাচেই হার) এবং কোপায় কোস্টারিকার বিপক্ষে জয়হীন ছিল সেলেসাওরা। ৬ষ্ঠ ম্যাচে এসে জয়ের দেখা পেলো তারা। তবে, নতুন কোচ দরিভাল জুনিয়রের অধীনে টানা ৬ ম্যাচ অপরাজিত তারা।
লাস ভেগাসের অ্যালিগেন্ট স্টেডিয়ামে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে ব্রাজিল। ম্যাচের ২য় মিনিটে ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের অ্যাসিস্ট গোলবারের বাইরে দিয়ে মারেন লুকাস পাকেতা। ৬ মিনিটে রদ্রিগোর এটি অ্যাসিস্ট হুয়াও গোমেজ গোলবারের উপর দিয়ে গ্যালারিতে নিয়ে যান। এরপর দুটি ঝটিকা আক্রমণ করে প্যারাগুয়ে।
৩১ মিনিটে দারুণ সুযোগ পেয়ে যায় সেলেসাওরা। গোল এরিয়ায় প্যারাগুয়ের আন্দ্রিস কোবাসের হ্যান্ডবল হলে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন রেফারি। কিন্তু গোল করার সেই সুযোগ মিস করেন পাকেতা। গোলবারের বাঁ-পাশ দিয়ে বল বাইরে মেরে দেন ব্রাজিলের এই মিডফিল্ডার ।
তবে পেনাল্টি মিসের হতাশা বেশিক্ষণ ছিল না ব্রাজিলের। ৪ মিনিট পরই গোল করেন ভিনিসিয়ুস। পেনাল্টি মিস করা পাকেতার অ্যাসিস্টে বাঁ-পায়ের দুরন্ত শটে জাল খুঁজে নেন রিয়াল মাদ্রিদের এই তারকা।
৪৩ মিনিটে আবারও গোল করে ব্রাজিল। কাছ থেকে বাঁ-পায়ের শটে গোল করেন সাভিনহো। রাফিনহার পরিবর্তে এই ম্যাচের শুরুর একাদশে মাঠে নামানো হয় সাভিনহোকে। কোচ দরিভালের আস্থার প্রতিদান দিলেন তিনি। ২-০ গোলে এগিয়ে যায় ব্রাজিল।
প্রথমার্ধের ইনজুরি সময়ে এসে আবারও গোল। ৪৫+৫ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন ভিনিসিয়ুস। এতে ব্যবধান দাঁড়ায় ৩-০। এই ব্যবধান নিয়েই বিরতিতে যায় ব্রাজিল।
দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে প্যারাগুয়ে। ৪৮ মিনিটে একটি গোল শোধও করে তারা। ওমর আলদারেদ বাঁ-পায়ের দূরপাল্লার শটে ব্রাজিলের জাল কাঁপান (৩-১)। এরপর আরও কয়েকটি আক্রমণ করে প্যারাগুয়ে। এ সময় ব্রাজিলে কিছুটা রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে দেখা যায়।
৬৩ মিনিটে দ্বিতীয়বারের মতো গোল এরিয়ায় হ্যান্ডবল করে প্যারাগুয়ে। রদ্রিগোর করা শট কব্জির সামান্য একটু উপরে লাগে মাথিয়াস ভিলাসান্তির।
এবারও পেনাল্টি নেওয়ার সুযোগ দেয়া হয় প্রথম পেনাল্টি মিস করা পাকেতা। চাইলে ভিনিসিয়ুসও নিতে পারতেন শটটা। তাতে তার হ্যাটট্রিক হয়ে যেতো। কিন্তু পাকেতা নিলেন শট এবং তিনি সফল হন। বাঁ-পায়ের আলতো শটে ভালোভাবেই প্যারাগুয়ের জাল খুঁজে নেন তিনি। এতে ৪-১ গোলে এগিয়ে যায় ব্রাজিল।
৮১ মিনিটে উগ্র আচরণের কারণে লালকার্ড দেখেন প্যারাগুয়ের আন্দ্রিস কোবাস। এতে ১০ জনের দলে পরিণত হয় তারা। একজন কম খেলে আরও একবার ব্রাজিলের জালে বল পাঠাতে সক্ষম হয় প্যারাগুয়ে। তবে অফসাইডের কারণে গোলটি বাতিল করে দেন রেফারি।
শেষ পর্যন্ত প্যারাগুয়েকে ৪-১ ব্যবধানে উড়িয়েই চলতি কোপা আমেরিকায় প্রথম জয় পেল ব্রাজিল।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।