পিরোজপুর প্রতিনিধি: পেশায় একজন ভ্যানচালক হায়দার আলী। পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার শেখ মাটিয়া ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের মৃত কাঞ্চন খানের ছেলে। অভাব অনটন আর নিয়তির সঙ্গে লড়াইটা সেই শৈশব থেকে। তবে পরাজিত সৈনিক নয়, বরং অপরাজিত নায়কের মতো বাঁচার প্রত্যয়ে চলছে তার জীবন সংগ্রাম। কখনো ভ্যান চালানো, দিন মজুরের কাজ কিংবা মাছ ধরার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি।
এভাবে এসএসসি, এইচএসসি পাশ করেন হায়দার আলী। এরপর ২০১৮ সালে নাজিরপুর কলেজে ডিগ্রিতে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাউবি) ভর্তি হন তিনি। গত বৃহস্পতিবার বাউবির বিএ/বিএসএস এর প্রকাশিত ফলাফলে ২.৮৩ (জিপিএ) পেয়ে উত্তীর্ণ হন হায়দার আলী।
তার বিএ পাশ করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাউবির তথ্য ও গণসংযোগ বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল হাই বাবু।
ব্যক্তিগত জীবনে হায়দার আলী চার সন্তানের জনক। তিনি ১৯৯৪ সালে প্রথম বিভাগে মাধ্যমিক পাস করেন। সংসারের অভাব অনটনের কারনে অনেকটা বাধ্য হয়ে শিক্ষা জীবনের ইতি টানতে হয় তার। দীর্ঘ শিক্ষা বিরতীর পর ২০১৩ সালে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে এইচএসসিতে ভর্তি হন। পরিবারের ঘানি, স্ত্রী-সন্তানদের ভরণ-পোষণ আর দায়িত্ব পালনের পরেও ৩.৮৩ পেয়ে এইচএসসিতেও এলাকায় চমক দেখান তিনি।
জীবনে কোন কিছুই বাঁধা হতে পারেনি হায়দার আলীর শিক্ষা অর্জনের পথে। ভ্যান চালানোর পাশাপাশি লেখাপড়া শেখার অদম্য আগ্রহের কারণে রাতে পরিবারের সকলে ঘুমিয়ে পড়লে এবং দিনে ভ্যান চালানোর ফাঁকে ফাঁকে পড়ালেখা চালিয়ে যেতেন হায়দার। ইংরেজিতে তার বেজায় দখল। কথায় কথায় ইংরেজি বলার প্রাকটিস ও নতুন শব্দ শেখার আগ্রহ তাঁর শব্দ ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে।
হায়দার আলী বলেন, এবার আমার স্বপ্ন উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন। যত বছরই লাগুক, আমি এমএ পাস করব-ই করবো। চাকরির জন্য না, উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার বাসনা থেকে এ শিক্ষা অর্জন করছি।
বাউবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, হায়দার আলী একটি সাহসের নাম। সংগ্রামী, পরিশ্রমী, দৃঢ়, অপরাজিত, স্বপ্নবান একজন। শিক্ষাবঞ্চিত মানুষের আদর্শ তিনি। এ রকম মানুষের পাশে সব সময় রয়েছে বাউবি। প্রযুক্তির কল্যাণে আমাদের শিক্ষাক্রম এখন সারা দেশেই সব বয়সের, পেশার নাগরিকের ঘরে বসে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ করে দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, জনকল্যাণের জন্য সম্প্রতি গবেষণার সুযোগকে অবারিত ও বিস্তৃত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বাউবি।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।