হাফিজা বিনা : আগাম ধান ঘরে তুলে সেই জমিতে আগাম আলু চাষে নেমে পড়েছেন বগুড়ার চাষিরা। এরই মধ্যে ওই জমিতে আলুর জন্য হালচাষ, পরিচর্যা, সার প্রয়োগ, বীজ সংগ্রহ ও বপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। জেলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২২০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের আলু বীজ বপণ হয়েছে।
গত বছরের তুলনায় এবছর বীজের দাম বেশি ও শ্রমিকের মজুরি বাড়ার কারণে আলু চাষের খরচ বাড়বে বলে জানিয়েছেন আলু চাষিরা। তবুও তারা দ্বিগুণ লাভের স্বপ্ন দেখছেন এবং আশা করছেন, অগ্রহায়ণ মাসের প্রথমেই ভোক্তাদের কাছে নতুন আলু তুলে দিতে পারবেন।
বগুড়া সদরের মাটিডালি ও শাখারিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন প্রকার জৈব ও রাসায়নিক সার দিয়ে আলু চাষের জন্য জমি তৈরি করছেন কৃষকরা। আবার কেউ জমি তৈরি করে বীজ আলু জমিতে লাইন ধরে বপণ করছেন। অগ্রহায়ণ মাসে আলু চাষের মৌসুম হলেও বেশি দাম পাওয়ার আশায় আশ্বিন মাস থেকে আগাম আলু চাষ করেন এ এলাকার কৃষকরা।
তারা জানান, বীজ আলু বপণের দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যেই আগাম আলু তুলে বাজারজাত করতে পারেন এবং দাম ভালো পান বলেই আগাম আলু চাষে কৃষকের আগ্রহ বেশি। বর্তমানে বাজার থেকে লাল পাকড়ি, রোমানা আলুর বীজ কিনছেন প্রতিকেজি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। আর কার্ডিনাল, ডায়মন্ড জাতের বীজ প্রতিকেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় কিনছেন কৃষকরা। কৃষকেদের দাবি চলতি বছর আলুর বীজের দাম অনেক বেশি।
বগুড়া সদরের শাখারিয়া এলাকার কৃষক মতিয়ুর রহমান বলেন, ‘বাজারে আগাম জাতের আলুর চাহিদা এবং দাম বেশি হওয়ায় আর্থিকভাবেও লাভবান হওয়া যায়। বপণের দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যেই বাজারজাত করা যায়। এবছর তিনি ছয় বিঘা জমিতে আগাম সেভেন জাতের আলু লাগিয়েছেন। প্রতিকেজি বীজ আলু কিনেছেন ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। গতবারের তুলনায় খরচটা বেড়েছে। ভালো ফলন হলে সারা বছরের ক্ষতি পুশিয়ে নিতে পারব। এজন্যই ধান কাটার সাথে সাথে আগাম আলু চাষ করি।’
মাটিডালি এলাকার কৃষক ফজলু জানান, এবার তিন বিঘা জমিতে অ্যাস্টেরিক ও কার্ডিনাল জাতের আলু বপণ করেছেন। এক বিঘা জমিতে আলুর বীজ, সার, শ্রমিক ও কীটনাশক মিলিয়ে খরচ পড়বে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। সেই জমিতে আলু উৎপাদন হবে ৬০ থেকে ৭০ মণ। খরচ বাদ দিয়েও লাভ থাকবে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ফলন ও দাম ভালো পেলে এই আলু বিক্রি করে বেশ লাভবান হবেন বলে আশা করছেন।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান জানান, আগাম আমন ধান কাটার পর দ্বিগুষ লাভের আশায় এ এলাকার কৃষক আগাম আলু চাষ করেন। এবছর বগুড়ায় সাড়ে ৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর মধ্যে আগাম জাতের আলু চাষ হবে দুই হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে। এ পর্যন্ত প্রায় ২২০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের আলু বীজ বপণ হয়ে গেছে। কয়েকদিনের মধ্যে আগাম আলু বীজ বপণ শেষ হবে আশা করা যাচ্ছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।