ক্রেতাদের বেশিরভাগই তরুণ ও শিশু
হাফিজা বিনা : আট বছরের আইয়ান কিনবে ঠাকুরমার ঝুলি, মোটু পাতলু বই। কিন্তু মা জোর করে আইয়ানকে কিনে দিলেন স্কুলভিত্তিক বিজ্ঞান প্রজেক্ট এবং নলেজ ব্যাংক নামের বইটি। শিশু আইয়ান তো রাগে মুখে কুলুপ এঁটেছে। কথা বলবে না মায়ের সাথে। মায়ের দাবি টাকা দিয়ে জ্ঞানের বই কেনাই ভালো। এভাবেই প্রায় প্রতিদিন মেলায় আসা ছোট ছোট শিশুরা বই কিনতে গিয়ে এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
বিক্রতারা বলছেন শিশুরা মেলায় এলেও তারা নিজেদের পছন্দের বইটি কিনতে পারছে না। কিনতে হচ্ছে মায়ের বা বাবার পছন্দে। তবে এ ব্যাপারে তরুণরা তাদের পছন্দের ব্যাপারে কোন ছাড় দিচ্ছে না। কিনছে নিজের মত করে। বগুড়ায় এবারের অমর একুশে বই মেলায় ক্রেতা হিসেবে তরুণরাই সবচেয়ে বেশি। এরপরে আছে শিশুরা। বিক্রেতাদের দাবি মুখে বই মেলার সময় একদিন বেড়েছে। শেষ হবে আগামীকাল ১ মার্চ।
বগুড়ার শহীদ খোকন পার্কে গত ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে শহরের শহীদ খোকন পার্কে ১০ দিন ব্যাপি বই মেলার উদ্বোধন হয়। মেলার প্রথম দিন তেমন জমজমাট না হলেও শেষে এসে বেশ জমে উঠেছে। সকাল থেকে মেলায় দর্শনার্থীদের ভিড় না থাকলেও বিকেল থেকে ক্রেতা-বিক্রেতা ও দর্শনাথীদের ভিড় হয় চোখে পড়ার মতো। মেলায় আগতরা স্টলে ঘুরে ঘুরে বই দেখছেন, দরদাম করছেন কিনছেন, সাথে বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে মুর্হূমুর্হূ সেলফিবাজি করছেন।
বিক্রেতারা জানিয়েছেন মেলায় যে পরিমান দর্শনার্থী ভিড় করছেন তার ৫০ শতাংশও বই কিনছেন না। শুধু ভিড় করছেন এবং ছবি তোলাতেই ব্যস্ত হয়ে পরছেন। এরপরেও অনেক বুক স্টলের মালিক বলেছেন করোনার পর এবারই বেচাকেনা ভাল।
গতকাল বুধবার দুপুর ১২টা। অনেকেই দল বেঁধে বইমেলায় এসেছেন। কেউ কেউ বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে, কেউবা পরিবার পরিজন, প্রিয় মানুষকে নিয়ে। শিশু, কিশোর-কিশোরীরাও এসেছে। মেলায় আগতরা ঘুরে ঘুরে দেখছেন নিজের প্রিয় লেখকদেরসহ নতুন বছরে প্রকাশিত বইগুলো। এ স্টল থেকে ওই স্টলে ঘোরাঘুরিতে কাটিয়ে দিচ্ছে সময়। পছন্দমত বইও কিনছে।
এবারের মেলায় যে সকল বই বেশি বিক্রি হচ্ছে তার মধ্যে ইলমা বেহরোজ এর লেখা ‘পদ্মজা’ বইটর কাটতি সবচেয়ে বেশি। এরপর আছে হুমায়ুন আহম্মেদের ‘অপেক্ষা’, আরিফ আজাদের প্যাডক্সিক্যাল সাজিদ, মুহাম্মদ জাফর ইকবালের ‘জিটুৎসি’ ও কিগো টুনটুনি কিগো চোটাচ্চু’ বইটি বেশি কিনছে তরুণ-তরুণীরা।
এছাড়াও শিশুদের বইয়ের মধ্যে সিসিমপুর, ভুতের গল্প, মোটুপাতলু, শিবা দ্যা গ্রেড, ঠাকুরমার ঝুলি, নলেজ ব্যাংক, বিজ্হান প্রজেক্ট, বিজ্ঞান বিচিত্রা, চিলড্রেন নলেজ এনসাইক্লোপিডিয়াসহ ড্রইং বইও বেশ বিক্রি হচ্ছে।
মেলায় দেখা হয় এমনই গুনগুন, রাইসা, স্প্রিহাসহ কয়েক কিশোরীর সাথে। তারা সবাই বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এবছর এসএসসি পরীক্ষা দিবে। মেলায় মায়েদের নিয়ে বই কিনতে এসেছে। তারা প্রতিটি স্টলে ঘুরে ঘুরে কিনেছে দ্যা সাইলেন্ট কিলার, অপরাজিতা, পদ্মজা, ইন্দুবালা ভাতের হোটেল, দেনা-পাওনা, বহুব্রীহি ইত্যাদি।
বগুড়া নিউজ কর্ণার পাবলিশিং এন্ড প্রিন্টার্সের সত্ত্বাধিকারী কালিপদ সেন টিপু বলেন, চমৎকার আয়োজনের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে এবারের বইমেলা। করোনার পর এবারই বই মেলা জমে উঠেছে এবং বিক্রিও ভাল হচ্ছে। তিনি আরও জানান, মেলার সময়টা বাড়ানো উচিত।
ভাষার মাস জুড়েই এই মেলা অনুষ্ঠিত হলে প্রকাশকরা লাভবান হবেন এবং পাঠকও দেখেশুনে পছন্দের বইটি কিনতে পারবেন। এছাড়াও মেলায় প্রতিদিন অনুষ্ঠান থাকায় দর্শনার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। একদিন মেলার সময় বাড়ানোর জন্য তিনি আশা করছেন শেষ দিনে সরকারি ছুটির দিন মেলা বেশ জমবে।
মেলায় স্টল নেয়া শিশু সাহিত্য কর্ণার এর সত্ত্বাধিকারী রায়হান আলী মৃরাব জানান, এবছর মেলায় একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম যে, শিশুরা তাদের পছন্দমত বই কিনতে গিয়ে অবিভাবকের রোষানলে পড়ছে। তাদের পছন্দ শিশুতোষ গল্প। কিন্ত মা-বাবা জোর করে কিনে দিচ্ছন বিজ্ঞানভিত্তিক ও নলেজ ব্যাংকের বিভিন্ন বই। এতে করে শিশুদের মধ্যে যে বই পড়ার একটা আগ্রহ তৈরি হবে সেটা মনে হয় থাকবে না। এটা খুব হতাশার’ বলে জানালেন তিনি।
এমনটা হবার কারণ হিসেবে তিনি জানালেন বইয়ের দাম অনেক বেশি। অভিভাবকরা মনে করছেন গল্পের বই একবার পড়লে আর কাজে আসবে না। সেখানে নলেজ ব্যাংক তার শিশুর মেধা বিকাশে অনেক কাজে আসবে । তাই অতিরিক্ত টাকা খরচ করে জ্ঞান বাড়ানোই ভাল।
বেশ কয়েকবছর হলো মেলায় অংশ নেয় ভিন্ন দৃষ্টি নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তাদের এই টাকাটা খরচ হয় সংগঠনের পরিচালিত অসহায় শিশুদের জন্য পরিচালিত স্কুলে। তারা জানান, এবছর বেচাকেনা বেশি ভাল না। মেলায় দর্শনার্থী অনেক, কিন্তু কেনার মানুষ কম। আগতরা বেশিরভাগ আসছেন, ঘুরছেন, সেলফি তুলছেন। শেষে খালি হাতে চলেও যাচ্ছেন। বেচাকেনা যা হচ্ছে দিনের বেলা স্কৃুল কলেজের ছেলে- মেয়েদের কাছে।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট বগুড়ার আয়োজনে এবং বগুড়া জেলা প্রশাসন, পুৃলিশপ্রশাসন এবং পৌরসভার সহযোগিতায় এবারের মেলায় ৩৯ টি বইয়ের স্টল দিয়েছে। এছাড়াও মেলায় প্রতিদিন পুরাতন লেখকদের সাথে সাথে নতুন নতুন লেখকদের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হচ্ছে। মেলা মঞ্চে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বগুড়ার শিল্পীদের গান, নাটক, কবিতা আবৃত্তি।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।