হেক্টর প্রতি ফলন কমলেও দাম বেশি
শাওন রহমান : চলতি মৌসুমে বগুড়ায় প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার আলু উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। জেলার মোট ৫৫ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে এখন পর্যন্ত ৮০ শতাংশ আলু উত্তোলন করা হয়েছে, যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ৯ লাখ মেট্রিকটন। এখন পর্যন্ত হেক্টর প্রতি ফলন পাওয়া গেছে সাড়ে ২০ মেট্রিকটন। আর গত বছর হেক্টর প্রতি আলুর ফলন ছিল ২৩ মেট্রিকটন।
বগুড়ার কৃষি বিভাগ বলছে, চলতি মৌসুমে বগুড়ায় ৫৫ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। এই পরিমাণ জমিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ লাখ ২০ হাজার ৪৭৫ মেট্রিকটন। গত বছর বগুড়ায় ৫৩ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১২ লাখ ২৫ হাজার ১৮০ মেট্রিকটন।
বগুড়ার বিভিন্ন পর্যায়ের আলু চাষি ও ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার সবজিটির বাজার চড়া। মৌসুমের শুরু থেকেই অপ্রত্যাশিত দাম পাচ্ছেন আলু চাষিরা। জাত ও মানভেদে বর্তমানে প্রতিমণ আলু সর্বনিম্ন ৮শ’ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে, যা খুচরা পর্যায়ে আরও বেশি।
বিগত বছরগুলোর তথ্য বলছে, আলু চাষ মৌসুমের শুরু এবং শেষে এই দাম আরও বেশি। বিশেষ করে এবার মৌসুমের শুরুতে আলুর চড়া দামের কারণে অপরিপক্ক আলু উত্তোলন করে বিক্রি করে চাষিরা বেশ লাভবান হন।
কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, বর্তমানে প্রতি কেজি আলু ২২ টাকা ধরলে এক মণ (৩৭.৫ কেজি) আলুর দাম পড়ে ৮২৫ টাকা। প্রতি মণ আলু ৮২৫ টাকা হলে এক মেট্রিকটন (২৬.৭৯ মণ) আলুর দাম পড়বে ২২ হাজার ১০১ টাকা ৭৫ পয়সা। প্রতি মেট্রিকটন আলু ২২ হাজার ১০১ টাকা ৭৫ পয়সা হলে বগুড়ায় এখন পর্যন্ত উত্তোলিত সাড়ে ৯ লাখ মেট্রিকটন আলুর দাম দাঁড়ায় ২ হাজার ৯৯ কোটি ৬৬ লাখ ৬২ হাজার টাকা।
আর লক্ষ্যমাত্রার ১৩ লাখ ২০ হাজার ৪৭৫ মেট্রিকটন আলুর দাম দাঁড়ায় ২ হাজার ৯১৮ কোটি ৪৮ লাখ ৮ হাজার ৩৩১ টাকা। কৃষি বিভাগ বলছে, মৌসুমের শেষে হেক্টর প্রতি ফলন আরও বাড়বে। এদিকে এ বছর বগুড়ায় প্রতি কেজি আগাম আলু উৎপাদনে খরচ পড়েছে ১৮ টাকা এবং বর্তমান উৎপাদিত আলুর খরচ পড়ছে ১৬ টাকা।
জানা গেছে, বগুড়ায় বাৎসরিক আলুর চাহিদা দেড় লাখ টন। এছাড়াও ৮৫ হাজার মেট্রিকটন আলু বীজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সবমিলে প্রায় আড়াই লাখ মেট্রিকটন আলুর চাহিদা রয়েছে জেলায়। পাশাপাশি বিগত কয়েক বছর ধরেই মধ্যপ্রাচ্যসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বগুড়ার আলু রপ্তানি হচ্ছে। গত বছর ১০ হাজার ৭৭০ মেট্রিকটন আলু রপ্তানি করা হয়। আর এবার এখন পর্যন্ত ৭শ’ মেট্রিকটন আলু রপ্তানি করা হয়েছে।
বগুড়ার বিভিন্ন এলাকার আলু চাষিরা জানিয়েছেন, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার আলুর দাম বেশি। বিশেষ করে মৌসুমের শুরুতে আলুর দাম তার বিগত বছরগুলোর রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। এছাড়াও বর্তমানে আলুর যে দাম তা বিগত যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়ার উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান জানান, গতকাল রোববার পর্যন্ত বগুড়ার মাঠ থেকে আলু উত্তোলন হয়েছে ৮০ শতাংশ। এই পরিমাণ জমিতে উত্তোলিত আলুর পরিমাণ সাড়ে ৯ লাখ মেট্রিকটন। হেক্টর প্রতি ফলন পাওয়া গেছে ২০ দশমিক ৫ মেট্রিকটন, যা গত বছর ছিল ২৩ মেট্রিকটন।
গত বছরের তুলনায় হেক্টর প্রতি কম ফলন পাওয়ার কারণ হিসেবে এই কর্মকর্তা বলছেন, এবার মৌসুমের শুরুতে আলুর চড়া দামের কারণে কৃষকরা অপরিপক্ক আলু তুলেই বিক্রি করেন। ফলে ফলনও কম পাওয়া যায়, তবে দাম ছিল আকাশচুম্বী। আর বর্তমানে হেক্টর প্রতি যে ফলন পাওয়া যাচ্ছে মৌসুমের শেষের দিকে এই ফলন আরও বেশি পাওয়া যাবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।