ভিডিও

দৃষ্টিশক্তি হারানোর শঙ্কায় দিন কাটছে বগুড়ার কলেজছাত্র নাইমুল হকের

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুরুতর আহত

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২৪, ১০:৪৭ রাত
আপডেট: সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২৪, ০১:০৪ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে পুলিশের ছোঁড়া একটি টিয়ার সেল কলেজছাত্র নাইমুল হকের ডান চোখে আঘাত করে। ওই চোখে এ পর্যন্ত কয়েকবার অপারেশন করার পরেও চোখ দিয়ে তিনি কিছুই দেখতে পারছেন না। চিকিৎসকরা বলেছেন, তার ডান চোখের দৃষ্টি শতকরা ৯৫ ভাগ না ফেরার শঙ্কা রয়েছে।

ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে অপারেশনের অপেক্ষায় নাইমুল হক জানান, এ অপারেশন করা না হলে তার বাম চোখের দৃষ্টিও নিভে যেতে পারে। এই দুশ্চিতা নিয়েই দিন কাটছে তার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে পুলিশের টিয়ার শেলের আঘাত লাগলে ডান চোখের এ অবস্থা হয়েছে বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার তালোড়া গাং বেলঘড়িয়া এলাকার মনোয়ার হোসেনের ছেলে নাইমুল হকের।

তিনি পাশের আদমদীঘি রহিম উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। নাইমুল হক জানান, দীর্ঘ প্রায় এক মাস অসুস্থ থাকলেও কেউ তার খোঁজ-খবর নেয়নি কিংবা কেউ দেখতেও আসেনি। তিনি তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত নেতৃবৃন্দসহ সরকারি সহায়তা কামনা করে বলেন, তার গরিব বাবার পক্ষে চিকিৎসার ব্যয়ভার মেটানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

নাইমুলরা দুই ভাই ও এক বোন। বড় ভাই মালয়েশিয়া প্রবাসী। বোনের বিয়ে হয়েছে। তাদের জমি-জমা বলতে বাড়ির জায়গাসহ মোট তিন বিঘা জমি রয়েছে। তবে বয়সের কারণে তার বাবা তেমন কাজকর্ম করতে পারেন না। সংসারে টানাপোড়েণ  থাকায় লেখাপড়া ও সংসারের খরচ নির্বাহ করতে কলেজে পড়ার পাশাপাশি অবসর সময়ে তার ফুফাতো ভাইয়ের কাপড়ের দোকানে পার্টটাইম কাজ করেন নাইমুল।

তিনি আরও জানান, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিতে গত ১৮ জুলাই তিনি বগুড়া শহরে গিয়েছিলেন। ওই দিন শহরের দত্তবাড়ি এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তারা বেলা ১টার দিকে শহরের জিরো পয়েন্টের দিকে এগুতে চাইলে সদর থানার সামনে অবস্থানরত পুলিশ সদস্যরা তাদেরকে লক্ষ্য করে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেন। তাদের একটি টিয়ারশেল নাইমুলের ডান চোখে আঘাত করে।

পরে সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করেন। ওইদিন দুইবার তার ডান চোখে অপারেশন হয়। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ২৭ জুলাই ঢাকার ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে ভর্তি হন নাইমুল।

সেখানে দ্বিতীয়বার তার চোখ অপারেশন হয় করা। এদিকে চিকিৎসকরা তাকে প্রতি সাত দিন পর পর ঢাকা ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে গিয়ে চোখ দেখাতে বলেন। এভাবে তিন বার যাওয়ার পর চিকিৎসকদের পরামর্শে সর্বশেষ গত ৮ আগস্ট তিনি আবারও ইসলামিয়া হাসপাতালে যান এবং আরেকবার তার চোখে অপারেশন করা হয়।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার চোখে আরও অপারেশন প্রয়োজন। তবে অপারেশন করলেই যে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন সে ব্যাপারে চিকিৎসকরা কোন নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না। এপর্যন্ত চিকিৎসার জন্য ব্যয় হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা।

নাইমুল হকের ভাগ্নে হাবিবুল্লাহ শাহাল  জানান, তাকে ঢাকায় পাঠানের সময় তার সাথে একমাত্র বোন ছাড়া আর কেউ যেতে সাহস পাননি। কারণ সে সময় তাদের পরিবারের বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। আর প্রায় প্রতিদিনই তাদের বাড়িতে পুলিশ এসে খোঁজাখুঁজি করতো।

এরপর বাড়িতে অবস্থানকালে গত ২২ আগস্ট বগুড়া সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল থেকে তাকে চিকিৎসার জন্য ডেকে পাঠানো হলে তিনি সেখানে গিয়ে ভর্তি হন। ওই হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গত পাঁচদিন আগে তাকে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS