ভিডিও

জয়পুরহাটের কালাইয়ে টেন্ডার ছাড়াই রাস্তার ১২৬৫টি গাছ কর্তন, প্রশাসন নীরব

সাড়ে ১২ লাখ টাকার গাছ ৩২ লাখে বিক্রি

প্রকাশিত: অক্টোবর ০৭, ২০২৪, ০৮:৩৫ রাত
আপডেট: অক্টোবর ০৭, ২০২৪, ০৮:৩৫ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি : কালাইয়ে টেন্ডার ছাড়াই সরকারি রাস্তার ১ হাজার ২৬৫টি ইউক্যালিপটাস গাছ কাটা হচ্ছে প্রকাশ্যে। গাছ কাটার খবর পেয়েও প্রশাসন নিরব ভূমিকায় রয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। গতকাল রোববার উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়নের দুধাইল-তেলিহার রাস্তায় এসব গাছ কাটা হচ্ছে।

তেলিহার কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির সদস্যদের ফাঁকি দিয়ে সাধারণ সম্পাদক তানজির আহমেদ শাকিব এলাকার কয়েকজনকে সাথে নিয়ে ইউএনও’র মৌখিক নির্দেশে গাছগুলো ঠিকাদারের নিকট বিক্রি করেছেন ৩২ লাখ টাকায় অথচ বন বিভাগের দেওয়া তালিকায় এসব গাছের মূল্য দেখানো হয়েছে মাত্র সাড়ে ১২ লাখ টাকা।  তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলছেন, রাস্তায় যারা গাছ লাগিয়েছে তারা চাইলে গাছ বিক্রি করতে পারেন। চুক্তিপত্র অনুযায়ী টেন্ডার বা কার্যাদেশের (ওয়ার্ক অর্ডার) প্রয়োজন নেই।

ইউনিয়ন ও বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়নের দুধাইল-তেলিহার রাস্তার প্রায় ২ কিলোমিটার বৃক্ষরোপন করেন তেলিহার কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির সদস্যরা। এ নিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন ওই সমিতি। চুক্তিপত্র অনুযায়ী সমিতির সদস্যরা গাছগুলো দেখভাল করেন। পরবর্তীতে যখন গাছগুলো বিক্রি হবে তখন বিক্রি মূল্যের ২০ শতাংশ অর্থ ইউনিয়ন পরিষদের কোষাগারে এবং ১০ শতাংশ অর্থ জমির মালিকরা পাবেন।

এরইমধ্যে গোপনে সমিতির সাধারন সম্পাদক তানজির আহমেদ শাকিব গাছ কাটার আবেদন করেন চেয়ারম্যানের নিকট। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবগত করেন তারা। সে মোতাবেক ইউএনও চলতি বছরের ৬ জুন উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় ওই সড়কের গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নেন এবং বন বিভাগকে সরজমিনে গাছের মাপযোগ ঠিক রেখে মূল্য নির্ধারণপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন। বন বিভাগ সরজমিনে ১ হাজার ২৬৫টি ইউক্যালিপটাস গাছের নম্বর ও মূল্য সর্বনিম্ন সাড়ে ১২ লাখ টাকা নির্ধারণ করেন এবং চলতি বছরের ৮ সেপ্টেম্বর ইউএনও’র নিকট প্রতিবেদন দাখিল করেন।

নিয়ম অনুযায়ী মূল্য নির্ধারনের পর গাছগুলো বিক্রির জন্য টেন্ডারের সকল ব্যবস্থা করবেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। কিন্তু ৫ আগস্টের পর উদয়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পলাতক থাকায় বর্তমানে চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন ওই ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম। তিনি এসবের কিছুই জানেন না। কার্যাদেশ নেই কিন্তু ইউএনও’র মোখিক নির্দেশে সমিতির সাধারন সম্পাদক এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালীকে সাথে নিয়ে গাছগুলো বিক্রি করেছেন।

গতকাল রোববার সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তাড়াহুড়া করে ঠিকাদারের শ্রমিকরা গাছগুলো কাটার পর ট্রাক ও ট্রলিতে করে নিয়ে যাচ্ছেন। সমিতির সাধারন সম্পাদক তানজির আহমেদ শাকিব ও তার সাথে থাকা লোকজন তাদের সহায়তা করছেন। সকাল থেকে বিকেল ৩টার মধ্যে প্রায় ৩’শ গাছ কাটা হয়েছে। বাকি গাছগুলো এখনও রাস্তার দুইপাশে দাঁড়িয়ে আছে।

সমিতির সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, তানজির আমাদের গাছ বিক্রির কথা বলেছে, আর গাছগুলো নাকি ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এখন শুনতে পাচ্ছি ৩২ লাখ টাকার কথা। আমরা এখনও টাকা পাইনি। সে আমাদের সাথে জালিয়াতি করেছে।

এলাকাবাসীদের অভিযোগ, সমিতির লোকজন ওই রাস্তায় গাছ লাগিয়েছে এটা সত্য। তবে সমিতির সভাপতি ও অন্যান্য সদস্যদের ফাঁকি দিয়ে তানজিম এলাকার বেশকয়েকজনকে সাথে নিয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে রাস্তার গাছ বিক্রি করেছে। গাছ বিক্রির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া দাবী জানান তারা।   
গাছ কাটার কার্যাদেশ (ওয়ার্কঅর্ডার) বিষয়ে জানতে চাইলে সমিতির সাধারন সম্পাদক তানজির আহমেদ শাকিব বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের সাথে সমিতির চুক্তিপত্র ছাড়া আর কিছুই নেই। ইউএনও’র মৌখিক নির্দেশে গাছগুলি বিক্রি করেছি। কত টাকায় গাছ বিক্রি করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বন বিভাগ মূল্য নির্ধারণ করেছে সাড়ে ১২ লাখ টাকা আর বিক্রি করেছি ১৫ লাখ টাকায়।

গাছ কাটা শেষ হলে সমিতির সদস্যদের মধ্যে বন্টন করা হবে। এছাড়া মূল্যের ২০ শতাংশ ইউএনও অফিসে এবং ১০ শতাংশ জমির মালিকদেরও দেওয়া হবে। ৩২ লাখ টাকার অভিযোগ সঠিক না। কালাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীমা আক্তার জাহান বলেন, উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় গাছ বিক্রি অনুমোদনের রেজুলেশন করা আছে। চুক্তিপত্র অনুযায়ী টেন্ডারের প্রয়োজন নেই।

বিক্রি মূল্যের ২০ শতাংশ ইউনিয়ন পরিষদের কোষাগারে এখনও জমা দেয়নি। তবে গাছ কাটা বন্ধ করা হয়েছে। জয়পুরহাটের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর বলেন, সরকারি জায়গার গাছ বিক্রি করতে হলে অবশ্যই টেন্ডারের মাধ্যমে করতে হবে। এ ছাড়া বিকল্প কোনও পথ নেই।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS