তছলিম উদ্দীন, সাপাহার (নওগাঁ) : আমের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে খ্যাত নওগাঁর সাপাহার উপজেলা বর্তমানে দেশের সর্বত্রই আম উৎপাদনে বিশেষ সুখ্যাতি লাভ করেছে। বিগত বছরগুলোতে এই উপজেলার আম দেশের অভ্যন্তরসহ বিদেশেও রপ্তানি করা হয়েছে। প্রতি বছর এই উপজেলায় হাজার কোটির অধিক টাকার আম বাণিজ্য হয়ে থাকে বলে কৃষিদপ্তর ও আম ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
সাপাহার উপজেলার বিভিন্ন বাগানে নানা জাতের আম উৎপাদন হয়ে থাকে । চলতি মৌসুমে কিছু কিছু আম বাগানে দেখা দিয়েছে আমের মুকুল।বর্তমানে আম এখানকার প্রধান অর্থকরী ফসল হওয়ায় আম চাষীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন মুকুল পূর্ব পরিচর্যার কাজে। আমের বাম্পার ফলনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পরিচর্যা চলছে বাগানে বাগানে।
উপজেলার মানিকুড়া, ওড়নপুর, মসজিদ পাড়া, পিছলডাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকার অনেক বাগানের আমগাছেই আমের মুকুল চোখে পড়ছে। এ কারণে কৃষক সতর্কতার সঙ্গে আমগাছের পরিচর্যায় এখন বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
আমে চাষে সংশ্লিষ্ট ও অভিজ্ঞ আমচাষী এনামুল, দেলোয়ার হোসেন, মমিনুল হকসহ বিভিন্ন আম চাষীদের সাথে কথা হলে তারা জানান, গত বছরের ঠিক এমন সময়ে আমের পরিপূর্ণ মুকুল দেখা গেলেও এবার শীতের তীব্রতা এবং স্থায়িত্ব বেশি হওয়ায় গাছে মুকুল আসতে বিলম্ব হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশিষ্ট আম চাষীরা।
বর্তমানে শীত প্রায় শেষের দিকে একটু একটু করে গরমের আবহাওয়া বইতে শুরু করেছে তাই আর কিছু দিন বাদেই পুরোপুরি ভাবে সকল বাগানের সকল গাছে গাছে মুকুল পরিস্ফুটিত হবে বলেও মনে করেন তারা। এখন ফাল্গুন মাস। আর এই মাসের মধ্যেই সব গাছেই মুকুল ফুটবে বলেও আশা করছেন তারা।
উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান টকি জানান, চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত সাপাহারের আমবাগানে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ গাছে মুকুল দেখা গেছে। আমের মুকুল দেরিতে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবার শীতের তীব্রতা ও স্থায়িত্ব বেশি এবং গত বছর এখানে আমের হারভেস্টিংও দেরিতে শেষ হওয়ায় মুকুলও আসতে সময় লাগছে।
তবে আগামী দুই এক সপ্তাহের মধ্যে গাছে গাছে পরিপূর্ণ মুকুল দেখা যাবে বলে তিনিও মনে করেন। এ বছর আমচাষিরা অনেক আগে থেকে গাছের পরিচর্যা শুরু করেছেন। গাছে কীটনাশক, সারসহ পানি সেচ দেওয়া হচ্ছে সময় মতো। এছাড়াও শতভাগ আম এবং বাম্পার ফলন ঘটাতে উপজেলা কৃষি বিভাগ নিরলসভাবে আম চাষিদের সকল প্রকার পরামর্শ ও সহযোগিতা করে চলেছেন বলেও তিনি দাবী করেন।
এছাড়া তিনি আরওও জানান, গত বছর এই উপজেলায় ৯হাজার ২৫৫ হেক্টোর জমিতে আম চাষ করা হয়েছিল। এবার নতুনভাবে কিছু বাগান তৈরি হয়ে ৯হাজার ২৭০ হেক্টোরে পৌঁছেছে এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রতি হেক্টরে ১৫ মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছে। এবার শুধু সাপাহার উপজেলায় কমপক্ষে দেড়লাখ মেট্টিক টন আম উৎপাদন হতে পারে বলে ধারণা করা হয়।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গত বছরের তুলনায় এই বছরে উৎপাদন বৃদ্ধি হতে পারে। অধিক ফলনের লক্ষ্যে আম গাছে উকুন নাশক এভোমেট্রিন ও ছত্রাক নাশক মেনকোজেভ বালাইনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে।
অন্যান্য বছরের ন্যায় চলতি বছরেও দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে আম রপ্তানি করা যাবে বলে কৃষি বিভাগ ও সংশি¬ষ্ট আমচাষীরা ধারণা করছেন। এছাড়া সম্প্রতি আম কেন্দ্রিক সাপাহারকে লক্ষ্য করে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্যাহ আল মামুন উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরের মেইন গেটের সাথে একটি আমচত্ত্বর ও সাপাহার আমের বাণিজ্যিক রাজধানী ব্র্যান্ডিং সংবলিত লিখনি প্রকাশ করে গেছেন।
আমচাষি মাসুদ রানা বলেন, গত বছর গাছে মুকুল এলেও তা ধরে রাখতে পারেনি। তাই এবার আগে থেকে গাছে ভিটামিন, গাছের গোড়ায় সার, পানি সেচ দিয়ে পরিচর্যা করে যাচ্ছি যাতে করে আম আসার সময় মুকুলের গোড়া শক্ত হয়। তাই এবার আশা করছি আবাহাওয়া ভালো থাকলে আম বাগানের গাছে গাছে পরিপূর্ণ মুকুল দেখা যাবে এবং অনেক আম ধরবে ইনশাআল্লাহ।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।