ভিডিও

গরম পানিতে স্ত্রীর শরীর ঝলসে ৭ দিন ঘরে আটকে রাখলেন শিক্ষক স্বামী

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০২৪, ০৭:১৩ বিকাল
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০২৪, ০৭:১৩ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

জামালপুর প্রতিনিধি: জামালপুর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে তৃতীয় তলার বার্ন ইউনিটের বিছানায় কাতরাচ্ছেন নিশি আক্তার (২০) নামের এক নববধূ। তার শরীরের বেশ কিছু অংশ গরম পানিতে ঝলসানো। যৌতুকের দাবিতে হাত বেঁধে নির্যাতনের একপর্যায়ে তার শরীরে ফুটন্ত গরম পানি ঢেলে দেওয়া হয়। তার স্বামী জামালপুর সদর উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের জাফর শাহী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আল আমিনের (৩৩) বিরুদ্ধে স্ত্রীর ওপর এই নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। 
ভুক্তভোগীর দাবি, শুধু শরীর পুড়িয়েই ক্ষান্ত হননি স্বামী। বিনা চিকিৎসায় তাকে সাত দিন ঘরে আটকে রেখে বাইরে থেকে ঘরে তালা দিয়ে রেখেছেন। 
পরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ওই গৃহবধূকে তার পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। এর আগের সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে জামালপুর শহরের গেটপাড় এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে এই নির্যাতনের শিকার হন ওই নারী। 
এই ঘটনায় জামালপুর সদর থানায় ওই গৃহবধূর বড় বোন মৌসুমী আক্তার বাদী হয়ে পাঁচ জনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়েছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর শ্বশুর আশেক আলীকে আটক করেছে পুলিশ। তবে স্বামী শিক্ষক আল আমিন এখনও পলাতক। 
অভিযুক্ত শিক্ষকের বাড়ি জামালপুর সদর উপজেলার মেষ্টা ইউনিয়নের চর মল্লিকপুর গ্রামে। তিনি শাহবাজপুর ইউনিয়নের জাফর শাহী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত। 
স্থানীয়রা জানান, মেলান্দহ উপজেলার ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের নাগেরপাড়া এলাকার সৌদি প্রবাসী আব্দুল মান্নানের মেয়ে নিশির সঙ্গে পারিবারিকভাবে প্রায় ১০ মাস আগে বিয়ে হয় আল আমিনের। বিয়ের সময় নিশির বাবা স্বামীকে মোটরসাইকেল, ঘরের আসবাবপত্র মেয়ের জন্য গহনা সব কিছুই দেন। তবুও বিয়ের কিছু দিন পর থেকেই আরও পাঁচ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য চাপ দিতে শুরু করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে শুরু হয় ঝগড়া। তিন মাস আগে ওই দম্পতি জামালপুর শহরের গেটপাড় এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন। ওই বাসায় স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন আল আমিন। 
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) রাত সাড়ে ১০টা দিকে যৌতুকের পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে তাদের মধ্যে বাগবিতন্ডা শুরু হয়। এর একপর্যায়ে নিশিকে ওড়না দিয়ে হাত বেঁধে মারতে শুরু করেন স্বামী। পরে চা তৈরি করার জন্য চুলার ওপর রাখা গরম পানি শরীরে ঢেলে দেন আল আমিন। গরম পানিতে মুহূর্তে ঝলসে যায় নিশির শরীর। পরে ওষুধের দোকান থেকে কিছু ওষুধ কিনে এনে হাতে দিয়ে এই ঘটনা কাউকে না জানাতে বলে বাইরে থেকে ঘরের তালাবদ্ধ করে চলে যান। সাত দিন এভাবেই তালাবদ্ধ থাকার পর বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে শহরের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। 
এ সময় নিশি কৌশলে অন্য এক মোবাইল ফোন থেকে তার বড় বোনকে বিষয়টি জানালে স্বজনরা দ্রুত ওই ক্লিনিকে ছুটে আসেন। এ সময় তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে কৌশলে ক্লিনিক থেকে পালিয়ে যান স্বামী। গুরুতর আহতাবস্থায় পরে সোমবার সকালে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। 
ভুক্তভোগী বলেন, যৌতুকের টাকা দাবি করে বাগবিতন্ডা হয় আমাদের। পরে আমরা গলায় টিপ দিয়ে ধরে। হাত বেঁধে মারতে শুরু করে। একপর্যায়ে চা বানানোর জন্য চুলার ওপরে রাখা গরম পানি আমার শরীরে ঢেলে দেয়। গরম পানি ঢেলে দেওয়ার পর আমি বাথরুমে গিয়ে ঠান্ডা পানি শরীরে ঢালতে থাকি। এ সময় আমি কান্না করলেও আমাকে দেখে হাসতে থাকে। পরে ওষুধের দোকান থেকে কয়েকটা ওষুধ নিয়ে আসে কাউকে না জানানোর জন্য ভয় দেখায়। 
তিনি বলেন, আমি অসুস্থ থাকার পরেও আল আমিন সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় বাহির থেকে রুমে তালা মেরে যেত, বিকালে বাসায় ফিরতো। 
ভুক্তভোগীর মা নার্গিস বেগম বলেন, মেয়ের পিঠে বুকে ও পেটে আর কোনও অবস্থা নেই। গরম পানি ঢেলে একেবারে ঝলসে দিয়েছে। এতটা পুড়ে দিয়েছে যে কেউ দেখলে ভয় পাবে। আমার মেয়ে তো কোনও অপরাধ করেনি। এভাবে নির্যাতন করার কী দরকার ছিল। তিনি এ ঘটনার কঠোর বিচার দাবি করেন। 
মানবাধিকার কর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, মানুষ কতটা নির্মম হলে এতটা নির্যাতন করতে পারে। গরম পানি ঢেলে দিয়ে পাশে স্বামীর হাসতে থাকে। এ সময় তাকে চিকিৎসা না করে উল্টো ঘরের মধ্যে তালাবদ্ধ করে রাখে। শিক্ষক স্বামী হয়ে তিনি এই কাজ কীভাবে করতে পারেন। 
জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে সহকারী পরিচালক মাহফুজুর রহমান সোহান বলেন, নিশির শরীরের সামনে ও পেছনে শরীরের প্রায় ২০ ভাগ পুড়ে গেছে। তবে রোগী শঙ্কামুক্ত। নিশির চিকিৎসা চলছে আশা করি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই নিশি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে। 
জামালপুর সদর থানার ওসি মহব্বত কবীর বলেন, এই ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি আল আমিন পলাতক রয়েছেন। ইতিমধ্যে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। 



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS