কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি : অবশেষে জয়পুরহাটের কালাইয়ে আদম ব্যবসায়ী সুলতান মাহমুদের বড়ভাই আব্দুস সোবহানকে গ্রেফতারের পর ১৬ দিনের মাথায় সুলতানের বাড়িতে অবস্থানরত সেই ছয় যুবক তাদের অনশন ভেঙেছেন।
জাল ভিসায় তাজিকিস্থানে যাওয়ার সময় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ধরা খেয়ে ফিরে এসে তারা টাকা ফেরত নিতে তার বাড়িতে অবস্থান নিয়েছিলেন। প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়াই টাকা ফেরত নিতে তারা এমন কৌশল অবলম্বন করেছিলেন।
এমনকি দেওয়া টাকা ফেরত না পেলে তারা নিজের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ¦ালিয়ে আত্মাহুতি করবেন বলেও জানিয়েছিলেন। এ ঘটনা উপজেলার জিন্দারপুর গ্রামে ঘটে। আদম ব্যবসায়ীর বাড়িতে যারা অবস্থান করছিলেন সেই যুবকরা হলেন উপজেলার পাঁচগ্রামের আব্দুল ওয়াদুদ, আতিকুল ইসলাম, খায়রুল ইসলাম, আলামিন তালুকদার, মোলামগাড়ীহাটের মেহেদী হাসান ও জিন্দারপুর গ্রামের আবু তাহের।
অবশেষে গত শুক্রবার (৫ এপ্রিল) রাতে ওই ছয় যুবকের পক্ষে উপজেলার পাঁচগ্রামের ভূক্তভোগী আব্দুল ওয়াদুদের বাবা নূরনবী আকন্দ বাফদ হয়ে অর্থ আত্মসাত করে জাল ভিসা প্রস্তুতের অভিযোগে একই উপজেলার জিন্দারপুর গ্রামের সুলতান মাহমুদ এবং তাকে সহযোফগতা করার জন্য বড় ভাই আব্দুস সোবহান ও তারা বাবা আব্দুর রাজ্জাককে আসাফম করে মামলা দায়ের করেন। এরপর রাতেই আব্দুস সোবহানকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
মামলার বিবরণ সূত্রে জানা যায়, জিন্দারপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে সুলতান মাহমুদ দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দেশে লোক পাঠান। সাড়ে তিনবছর আগে একই এলাকার পাঁচগ্রাম, মোলামগাড়ীহাট ও জিন্দারপুর গ্রায়ের ছয়জন যুবক একসাথে মালয়েশিয়াতে যাওয়ার জন্য সুলতান মাহমুদের সাথে ৩৩ লাখ টাকা চুক্তিবদ্ধ হন। চুক্তির পুরো টাকা তারা পরিশোধও করেছেন।
তখন থেকে পার করে দিব, দিচ্ছি বলে কালক্ষেপণ করেন। ছয় মাস আগে মালয়েশিয়া নয়, তাজিকিস্থানে পাঠানোর কথা হয়। তাতেও রাজি হন ওই যুবকরা। চলতি বছরের ১৮ মার্চ তাদেরকে বাড়ি থেকে তাজিকিস্থানের উদ্যেশে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকায়। ২০ মার্চ রাতে বিদেশে পাড়ি জমানোর উদ্দেশ্য টিকিটসহ কাগজপত্র হাতে পেয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উপস্থিত হন ওই ছয় যুবক।
এয়ারপোর্টে চেকিংয়ে গিয়ে জানতে পারেন ম্যানপাওয়ার, ভিসা, বিএমইটি স্মার্ট কার্ড জালিয়াতি করে তাদের ভুয়া কাগজপত্র দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র বিমানের টিকেট ছিল আসল। এয়ারপোর্ট থেকে তাদেরকে ফেরত আসতে হয়। তাই তারা নিজ বাড়িতে না গিয়ে পরেরদিন ২১ মার্চ সন্ধ্যা থেকে সুলতান মাহমুদের বাড়িতে গত ৫ এপ্রিল পর্যন্ত অবস্থান করছিলেন।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, খবর পেয়ে সুলতান মাহমুদের গত ২২ মার্চ রাতে বাড়িতে এসে ওই যুবকদের সাথে আপোষ-মিমাংসার জন্য বসেছিলেন। কিন্তুসুলতান মাহমুদ বৈঠকের অবস্থার বেগতিক বুঝে উদ্ধারের জন্য জাতীয় পরিসেবা ‘৯৯৯’ এ কল দিলে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান। এরপর থেকে সে পলাতক। যুবকরাও টাকা না পাওয়া পর্যন্ত তাদের সিদ্ধানেই অনড়।
ভূক্তভোগী আব্দুল ওয়াদুদের বাবা ও মামলার বাদি নূরনবী আকন্দ বলেন, আসলে আইনের সহযোগিতা ছাড়া এ সমস্যা সমাধানের কোনো পথ দেখছি না। তাই সবাইকে বুঝানোর পর আমি নিজেই বাদি হয়ে ওদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। পুলিশ সুলতান মাহমুদের বড়ভাইকে গ্রেফতারও করেছে। সুলতান মাহমুদ গ্রেফতার হলেই আমাদের টাকাগুলো উদ্ধার হবে। দেওয়ার মত সামর্থ্যও রয়েছে তার। দেখা যাক সে কবে গ্রেফতার হয়।
আদম ব্যবসায়ী সুলতান মাহমুদ মোবাইল ফোনে বলেন, ওরা যে কয়দিন আমার বাড়িতে অবস্থান করেছে, সবাই মিলে আমার পরিবারের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। আমিও ওদের বিরুদ্ধে মামলা করবো। অপরাধ আমি করেছি, শাস্তি হলে আমার হবে। কিন্তু ওরা আমার বাবা ও ভাইকে কেন আসামি করেছে ? আমিও ওদের দেখে নিবো।
কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওয়াসিম আল বারী বলেন, নুরনবী আকন্দ বাদি হয়ে তিনজনকে আসামি করে মামলা করেছে। রাতেই একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সুলতান মাহমুদ ও তার বাবা পলাতক। তাদের বাড়িতে অবস্থানরত যুুবকদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যুবকরা যে যার মত করে নিজ নিজ বাড়িতে চলে গেছেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।