নানা গ্রেফতার, হত্যা করে ঘরেই বসেছিল
স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়ায় নাতিকে গলা কেটে হত্যা করেছে নানা। মায়ের সাথে হরিবাসর অনুষ্ঠানে আসা ৫ বছরের শিশু বন্ধনকে হত্যা করে দরজায় সিটকানি দিয়ে ঘরেই বসে ছিল ঘাতক নানা। পরে পুলিশ দরজা খুলে নানা সুকুমার দাস (২৫)কে গ্রেফতার করে। নিহত বন্ধন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার খানসামা গ্রামের রবি কুমার দাসের ছেলে। বৃহস্পতিবার সকালে সদরের শশীবদনী হিন্দুপাড়া গ্রামে এই চাঞ্চল্যকর এই খুনের ঘটনা ঘটে।
তবে কেন, কী কারণে নাতি বন্ধনকে খুন করা হলো, সে বিষয়ে মুখ খোলেনি নানা সুকুমার। থানায় এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত সুকুমার বগুড়া সদর উপজেলার নুনগোলা ইউনিয়নের শশীবদনী হিন্দুপাড়া গ্রামের ঝুমুর দাসের ছেলে। সম্প্রতি স্নাতক পাস করে বগুড়া আইন কলেজে ভর্তি হয় সুকুমার।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল মজিদ জানান, গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিহত বন্ধনের মা কাকলীর মামা সুকুমার উক্ত বন্ধনসহ দুই শিশুকে তার ঘরে ডেকে নিয়ে যায়। এ সময় সে ধান কাটার কাঁচি দিয়ে শিশু বন্ধনের গলায় আঘাত করলে অন্য শিশুটি ভয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরে গ্রামের লোকজন ওই শিশুর কাছ থেকে বিষয়টি জানার পর সেখানে গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় বন্ধনকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক ওই শিশুকে মৃত ঘোষণা করেন।
বগুড়া সদর থনার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো: শাহিনুজ্জামান বলেন, গ্রেফতার সুকুমার হত্যার কারণ সম্পর্কে কোনো কিছু জানায়নি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। নিহত শিশুর লাশ বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি। খুনের কাছে ব্যবহৃত ধান কাটার একটি রক্তাক্ত কাঁচি উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি বলেন, গতরাত পোনে ৮ টা পর্যন্ত এ ব্যাপারে থানায় মামলা করা হয়নি।
তবে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এ ব্যাপারে নুনগোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: বদরুল আলম বলেন, কি কারনে শিশুটিকে গলা কেটে হত্যা করা হলো সে বিষয়ে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টা পর্যন্ত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এ টুকু জানা গেছে, যে ঘরে ৫ বছরের শিশু বন্ধনকে হত্যা করা হয়েছে সেখানে ১০-১২ বছরের এক কিশোরীও ছিল। হত্যাকান্ডের সময় ভয়ে সে পালিয়ে যায়। গ্রেফতারের সময় স্থানিয় লোকজনের সামনে ঘাতক সুকুমার নিজেই পুলিশকে এ তথ্য দেয়।
প্রতিবেশী বঙ্কিম চন্দ্র সরকার জানান, গত মঙ্গলবার থেকে আমাদের এলাকায় হরিবাসর শুরু হয়৷ এ উপলক্ষ্যে বন্ধন তার মায়ের সাথে মামার বাড়িতে বেড়াতে আসে। গতকাল সকালে শুনি কাঁচি দিয়ে গলাকেটে বন্ধনকে হত্যা করেছে সুকুমার। সুকুমার না পালিয়ে গিয়ে ওই ঘরের মধ্যেই লুকিয়ে ছিল। পরে পুলিশ এসে তাকে গ্রেফতার করে৷
আরেক প্রতিবেশী পরিমল চন্দ্র পালিত বলেন,কেউ বলছে সুকুমারের মোবাইল ফোন নেওয়ার কারণে আবার কেউ বলছে, কোন এক দ্বন্দ্বের কারণে ওই শিশুকে হত্যা করেছে। তবে অনেকেই তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন বানাতে চেষ্টা করছে। কিন্তু সুকুমার কালকেও হরিবাসরে সারাদিন প্রসাদ বিতরণ করেছে। আবার সে এলএলবি পড়াশোনাও করছে। তবে সে পাগল হয় কিভাবে।স্থানিয় এক নারী বলেন, এক সাথেই আমরা হরিবাসরে আসছিলাম। গতকাল হরিবাসর শেষ করে বাড়িতে যেতে যাচ্ছিলাম। হরিবাসরে বসে থাকা অবস্থায় শুনি বন্ধনকে তার নানা সুকুমার গলাকেটে হত্যা করেছে।
সদর থানার ইন্সপেক্টর ফইম উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসে অভিযুক্ত সুকুমারকে গ্রেফতার করেছি। তবে নিহতের মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে কি কারণে,এ হত্যাকাণ্ড এখনও জানতে পারিনি। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।