নাটোর প্রতিনিধি : নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদ থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন আলোচিত প্রার্থী মোঃ লুৎফুল হাবিব রুবেল। তিনি প্রতিমন্ত্রী এ্যাড. জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক।
আজ রোববার (২১ এপ্রিল) সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন তিনি। আগে গত শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তার শ্যালক লুৎফুল হাবিব রুবেলকে ফোনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এছাড়া শনিবার (২০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় উপজেলা আওয়ামী লীগের জরুরি বর্ধিত সভা থেকেও অভিযুক্ত প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লুৎফুল হাবীবকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন উপজেলা আওয়ামী লীগ। অন্যথায় তার পক্ষে আওয়ামী লীগের কেউ নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেবেন না সাফ জানিয়ে দেন। একই সঙ্গে অপহরণের ঘটনায় জড়িত দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
এদিকে ভিডিও বার্তায় লুৎফুল হাবিব রুবেল বলেন, সিংড়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচন নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন যে, কোনো মন্ত্রী, সংসদ সদস্যের আত্মীয়-স্বজন নির্বাচন করতে পারবে না। তারই আলোকে এই ঘোষণার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এবং জুনাইদ আহমেদ পলকের নির্দেশনা অনুযায়ী মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আমি ২০০২ সাল থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে রয়েছি। ২০০৫ সালে সিংড়া গোল-ই আফরোজ কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বরত রয়েছি। গত ৩ তারিখে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পদত্যাগ করি। ইউনিয়ন পরিষদের পর পর তিন বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই। আর গত ৮ এপ্রিল উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র দাখিল করি। এরপর থেকে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার সঙ্গে আমি জড়িত নই। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। আমাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে বিভিন্ন মহল সক্রিয় আছে।
তবে এ ব্যাপারে জানতে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। স্থানীয় একটি সূত্র জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশন রুবেলকে তলব করায় বিকেল ৪টায় নির্বাচন কমিশনে হাজিরা দিতে রুবেল ঢাকায় রয়েছেন। তাই লুৎফুল হাবিব রুবেলের মনোয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য তার পক্ষ থেকে উপজেলার তাজপুর ইউনিয়ন ( ইউপি) পরিষদ চেয়ারম্যান মিনহাজ উদ্দিন জেলা নির্বাচন অফিসে গেছেন।
সিংড়া উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি শেখ ওহিদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, লুৎফুল হাবিব রুবেলের ভিডিও বার্তা পেয়েছেন। পাশাপাশি প্রত্যাহারের সিন্ধান্তের কথাও ফোনে তাকে জানিয়েছেন।
নাটোর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ শেখ জানান, এখন পর্যন্ত রুবেল বা তার কোনো বৈধ প্রতিনিধি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। তবে লুৎফুল হাবিব রুবেলের ভিডিও বার্তার বিষয়ে তিনি শুনেছেন। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করলে বিধি অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য গত সোমবার(১৫ এপ্রিল) মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য দেলোয়ার হোসেন ব্যাংকে জামানতের টাকা জমা দেওয়ার জন্য বের হন। এ সময় তারা জরুরী প্রয়োজনে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে গেলে সেখান থেকে একটি কালো রঙের মাইক্রোবাসে করে কয়েকজন দুবৃত্তরা আলাউদ্দিন মুন্সিকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে দেলোয়ার হোসেন নির্বাচন অফিস থেকে নেমে আসলে তাকেও একটি মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে নেয়। এ সময় তারা তাকে গাড়ির ভিতর মারধর করে। পরে বিকেলে দেলোয়ার হোসেনের বাড়ির সামনে (সিংড়া উপজেলার কলম ইউনিয়নের পারসাঐল গ্রাম) সামনে ফেলে দিয়ে চলে যায়। চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণের দুটি সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া গেছে। দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণ করে যে গাড়িতে তোলা হয় সেটি তার প্রতিদ্বন্দ্বী লুৎফুল হাবীব রুবেলের। পরে আহত দেলোয়ার হোসেনের ভাই বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তিন আসামিকে গ্রেফতার করেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।