বাগাতিপাড়া (নাটোর) সংবাদদাতা : নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর হাঁপানিয়া গ্রাম জেলা শহর থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। গ্রামটিতে তালগাছ না থাকলেও এখন তালপাখার গ্রাম বা পাখাপল্লী নামেই পরিচিত।
বছরের ছয়মাস হাতপাখা তৈরিতে এই পল্লীর কারিগররা পায় বাড়তি উপার্জনের সুযোগ। এ বছরও অনাবৃষ্টি ও সূর্যের তীব্র তাপমাত্রার কারণে প্রচন্ড গরমে তালপাতার তৈরি হাতপাখার চাহিদা বেড়েছে। তাই কারিগররা কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন। এ পল্লীর শতাধিক পরিবার পৈত্রিক পেশা তালপাতার হাতপাখা তৈরি শিল্পের সাথে জড়িত।
তবে প্রয়োজনীয় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও ঋণ সুবিধা না থাকায় সম্ভাবনাময় এ শিল্পটি বিকশিত হচ্ছে না।
তালপাখা তৈরির কারিগররা জানান, এর প্রধান কাঁচামাল ডাগুরসহ তালপাতা। উত্তরের জেলা নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে তালপাতা কিনে আনতে হয় পৌষ মাসের শুরুতে। এই পাতা গোল করে কাটা হয় সতর্কতার সাথে।
কাটার পর রোদে শুকিয়ে পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হয়। শুকানো শেষে গুচ্ছ হয়ে থাকা ডাগুরের সংকুচিত পাতা প্রসারিত করা হয় বাঁশের তৈরি কাঠির মাধ্যমে। পাতার এক একটি শিরা প্রসারিত করে কয়েক শিরা মিলে দুই প্রান্তে আটকানো থাকে কাঠি। এভাবে রাখার পর তালপাতা স্বাভাবিক প্রসারিত আকার ধারণ করলে গোলাকার পাখাটি রঙ করা বাঁশের খিল দিয়ে দু’পাশ আটকে সেলাই করে দেয়া হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এ পল্লীর প্রতি বাড়ির আঙিনায় রৌদ্রে ছড়ানো-ছিটানো তালপাখা বানানোর নানা উপকরণ। প্রতিবাড়ির নারী-পুরুষ পাখা তৈরির কাজে ব্যস্ত। পুরুষরা সংগ্রহকৃত তালপাতা কেটে পাখার আকার করছেন। মেয়ে শিল্পীরা নিপূণ হাতে পাখার বিভিন্ন কারুকার্য করছেন। সব বাড়িতেই তালপাতার তৈরি হাতপাখাগুলো শোভা পাচ্ছে।
জামনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম রাব্বানী জানান, হাঁপানিয়া পাখা পল্লীর নারী-পুরুষরা খুব পরিশ্রমী। তারা পৈতৃক পেশা টিকিয়ে রাখতে সচেষ্ট। প্রচন্ড গরমে তালপাতার তৈরি হাতপাখার চাহিদা বেশি থাকায় পাখা শিল্পের কারিগররা খুব ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ পল্লীর শিল্পীদের নিপূণ হাতে তৈরি হাতপাখার দেশব্যাপী চাহিদা রয়েছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।