স্টাফ রিপোর্টার : প্রকৃতিতে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বইছে তীব্র তাপদাহ। বাতাসের সাথে ঝরছে আগুন, এতে কপাল পুড়ছে কৃষকের। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না থাকায় পানির স্তর নিচে নেমে সাধারণ নলকূপেও উঠছে না পানি। পাশাপাশি গভীর নলকূপগুলোতে বোরো’র জমিতে সেচ দেওয়া গেলেও সংকটে পড়েছে বগুড়ার মাঠে থাকা খরিপ-১ এর বিভিন্ন ফসল। প্রয়োজনীয় পানির অভাবে বিপর্যয়ের মুখে গোটা জেলার কৃষি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়া সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ায় চলতি খরিপ-১ মৌসুমে সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে তিল, কাউন, পটল, কচুমুখি, ঢেড়স বেগুনসহ অন্যান্য সবজি রয়েছে।
পাশাপাশি রয়েছে আউশ ও বোরো। হেক্টর প্রতি ১৯ মেট্রিকটন উৎপাদন ধরে সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ সাড়ে ২৩ হাজার মেট্রিকটন। তবে বিরূপ আবহাওয়ায় প্রত্যাশিত উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এদিকে চাষিরা প্রচন্ড তাপদাহের হাত থেকে জমির ফসল রক্ষায় সেচ দিতে প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। জমির ফসল বাঁচাতে অন্যবারের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি সেচ দিতে হচ্ছে, যার ফলে উৎপাদন খরচও বাড়ছে। আর অনিয়ন্ত্রিত পানি উত্তোলনে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতি বছরই অস্বাভাবিক হারে নিচে নামছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বগুড়ার স্থানীয় চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত দু’সপ্তাহে প্রকৃতির বিরূপ আচরণে তারা দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন। এক বছরের মাথায় আবার খরার কবলে পড়ে তারা সংকটে। গভীর নলকূপের মাধ্যমে বোরো জমিতে সেচ দেওয়া গেলেও ঢেড়স, পাট, পটল, কচুমুখি ও বেগুনসহ অন্যান্য সবজির জমিতে সেচের ব্যবস্থা করা তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
অনেকেই খাল, বিল ও মজা পুকুরে শ্যালোমেশিন লাগিয়ে জমিতে সেচ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এসবের পানিও স্বল্প বা কোথাও কোথাও শুকিয়ে গেছে। ফলে অনেক এলাকার কৃষক সেচ সংকটে পড়েছেন। অনেকে জানান, তারা পাট বুনতে পারছেন না, অন্যান্য ফসলের বীজ বুনলেও বৃষ্টির অভাবে চারা গজাচ্ছে না। সেচ দিতে অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে তাদের।
বগুড়া সদরের শ্যামবাড়িয়া এলাকার কৃষক আব্দুল খালেক বলেন, তীব্র গরমের কারণে জমিতে কাজ ফেলে চলে গেছেন তারা। শ্রমিকরাও সারাদিন কাজ করতে পারছেন না। এতে ফসলের ক্ষতিসহ সংসারের খরচ চালাতেও সমস্যায় পড়েছেন কৃষি শ্রমিকরা।
ফজর আলী নামের আরেক কৃষক বলেন, ২-৩ বার সেচ দেওয়ার পরও জমি শুকিয়ে যাচ্ছে। উৎপাদন খরচ বাড়লেও ফসল বেচার সময় নানা কথা ওঠে। আবার বাড়তি খরচ করে প্রত্যাশিত ফলন পাওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, মাঠের ঘাস, পাট ও বেগুনের জমিতে পানি সেচ দিতে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে তাদের, এতে জমিতে ফসলের চারা শুকিয়ে যাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়ার উপ-সহাকারী পরিচালক ফরিদুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন বৃষ্টি না থাকায় এবং তীব্র তাপদাহের কারণে ফসলের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এ বছর খরিপ-১ ফসলের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হতে পারে।
তবে বৃষ্টি হলে অনেকেই পাট ও তিলের বীজ বপণ করবেন। তিনি আরও বলেন, খরা বা অনাবৃষ্টি একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এতে কারও কিছু করার নেই। তারপরও তারা কৃষকদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে নানা পরামর্শ দিচ্ছেন। জমিতে সেচ চালু রাখার জন্যও সার্বক্ষণিক বলা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।