ভিডিও

বগুড়া শহরের পুকুর জলাশয়গুলো একে একে ভরাট হয়ে যাচ্ছে

তীব্র গরমে জলকেলির জায়গা নাই

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৪, ২০২৪, ১০:০৮ রাত
আপডেট: এপ্রিল ২৫, ২০২৪, ১১:৫৭ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়া শহরে একের পর এক পুকুর জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়ায় তীব্র গরমে শহরের কিশোর যুবকেরা জলকেলি করার জায়গা পাচ্ছেনা। ধনী পরিবারের সন্তানেরা চার বা পাঁচ তারকা হোটেল, রিসোর্টে  গেলেও বঞ্চিত হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষের সন্তানেরা। এতে করে জলকেলিতেও ধনী গরিবের ব্যবধান স্পষ্ট হচ্ছে।

এক সময় বগুড়া শহরের সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পুকুর ছিলো। ব্যক্তি বিশেষের নামে নামে ছিল এসব পুকুর। পুকুরে গোসল থেকে শুরু করে সাংসারিক প্রাত্যহিক সব কাজ করা হতো পুকুরের পানিতেই। পরে টিউবওয়েলের প্রচলন শুরু হলে পুকুরের পানি খাওয়া কমে যায়। তবে কাপড় চোপড় ধোয়া মোছা সব হতো পুকুরের পানিতে।

পাড়া মহল্লায় পুকুর থাকায় স্থানীয় শিশু কিশোররা সেই পুকুরেই সাঁতার শিখতো। বর্তমানে বগুড়া শহর থেকে পুকুর হারিয়ে যেতে বসেছে। সরকারি বেসকারি প্রতিষ্ঠানেও নেই পুকুর। আবার রেলওয়ের যে সব পুকুর বা নয়নজলি ছিলো তাও দখল ও লিজ পদ্ধতির কবলে পরে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।

শহরের মাতলতিনগরের এলাকায় মাটির মসজিদ সড়কে (মজুমদার পাড়া) বিশালাকায় পুকুর ছিলো। গত এক দশকের মধ্যে ওই পুকুরটি ভরাট করা হয়েছে। এখন সেখানে বেশ কয়েকটি বাড়ি রয়েছে। বকশি বাজার এলাকায় রাস্তার ধারে সিদ্দিক মিয়ার পুকুর, ইয়াকুবিয়া স্কুলের পূর্বে ছিলো গভীর খাদ পুকুর।

এছাড়াও স্টেডিয়াম পুকুর, বাদুরতলায় বড়ালের পুকুর, সেউজগাড়িতে রমেশ পালের পুকুর, ময়েজ মিয়ার পুকুর, রহমান নগরে সড়ক ও জনপথ বিভাগ অফিস চত্বরের পুকুর, ময়েজ মিয়ার বাগানের পুকুরও ভরাট করা হয়েছে।

বগুড়া শহরের কামারগাড়িতে রেলওয়ে বিভাগের জোড়া পুকুরের মধ্যে দক্ষিণ ধারের পুকুর ভরাট করে মার্কেট করা হয়েছে, সুত্রাপুরস্থ সেন্ট্রাল হাই স্কুল মাঠের পুকুর, শহীদ নগরের পশারী পুকুর, কালিতলা এবং শিববাটি এলাকার একাধিক পুকুর গত এক দশকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।

বর্তমানে পৌর এডওয়ার্ড পার্কে পুকুর থাকলেও পুকুরের পানি তলানীতে রয়েছে। ফলে ইচ্ছে থাকলেও কেউ পুকুরে নামতে পারে না। এছাড়াও সরকারি আজিজুল হক কলেজ নতুন ভবনে, শিল্পকলা একাডেমির সামনে পুকুর রয়েছে। তবে এই গরমে পানি কমে গেছে আশংকাজনক ভাবে।

এছাড়া মালতিনগরের স্টাফ কোয়ার্টারের সরকারি পুকুরটি ভরাট হয়েছে এক যুগ আগে। এমনকি বগুড়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যালয়ের মধ্যেকার পুকুরও ভরাট হয়ে গেছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে পুকুর ভরাট করে ‘প্লট আকারে’ বিক্রি করা হচ্ছে।

পুকুরের মালিকরা বলছেন, টাকার প্রয়োজনে বিক্রি করা হচ্ছে। শহরের কামারগাড়ী এলাকায় জোড়া পুকুরের একটি ভরাট করে মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। আরেকটিও আংশিক ভরাট করা হয়েছে। শহরের সাতানি মসজিদের পূর্ব পাশে বড় পুকুর রয়েছে, কিন্তু পুকুরটি সংস্কার না করায় সেখানে আর  গোসল করতে নামা যায়না।

ময়লা আবর্জনা ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। শহরের ঝাউতলা এলাকার একটি পুকুরের মালিক তারা মিয়া। তার পুকুরের পশ্চিম দিকের অংশ ভরাট করে বাড়ি করা হয়েছে। বগুড়ায় গত এক যুগে দখল হয়ে গেছে বগুড়ার অর্ধশতাধিক পুকুর-জলাশয়। পুকুর ভরাট করে কোথাও পাকা বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। কোথাও তৈরি করা হয়েছে মার্কেট, করা হয়েছে প্লট।

প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ মতে, কোনো পুকুর, জলাশয়, নদী, খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি। আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী, প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন বা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার, ভাড়া, ইজারা বা হস্তাস্তর বেআইনি।

কোনো ব্যক্তি এই বিধান লঙ্ঘন করলে আইনের ৮ ও ১২ ধারা অনুযায়ী পাঁচ বছরের কারাদন্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থ অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ (সংশোধন) আইন ২০১০ অনুযায়ী, অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র গ্রহণ ছাড়া জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গা ভরাট বা অন্য কোনোভাবে শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না।

পুকুর ভরাট দন্ডনীয় অপরাধ। পুকুর বা জলাশয় ভরাটকারিদের বিরুদ্ধে আইন থাকলেও এর কার্যকর ব্যবস্থা নেয়না কেউ। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে পুকুর।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS