৪ মে থেকে শনিবারও শ্রেণি কার্যক্রম চলবে
স্টাফ রিপোর্টার : ঈদুল ফিতর ও বাংলা নববর্ষের ছুটির সঙ্গে অতিরিক্ত সাত দিন ছুটি শেষে তীব্র তাপ প্রবাহের মধ্যেই আজ রোববার (২৮ এপ্রিল) থেকে খুলেছে স্কুল-কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। একইসঙ্গে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ৪ মে থেকে প্রাথমিক বাদে শনিবারও শ্রেণি কার্যক্রম চালু রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
তবে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া অবধি প্রাক-প্রাথমিক বন্ধ থাকবে। এ অবস্থায় কোন জেলায় যদি তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে ওঠে তবে স্থানীয় পর্যায় সেই জেলায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা যেতে পারে বলে গতকাল জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। এদিকে প্রচণ্ড গরমের কারণে তাদের শিশু সন্তানেেদর নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা।
এর আগে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার কথা বিবেচনায় নিয়ে গত ২০ এপ্রিল স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরিসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাত দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়। শনিবার সে ছুটি শেষ হয়। যদিও তৃতীয় দফায় আরো তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি করে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এপ্রিল মাসজুড়ে তাপ প্রবাহ কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।
এদিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খুললেও কমিয়ে আনা হয়েছে ক্লাসের সময়। পাশাপাশি তাপ প্রবাহের কারণে সব প্রতিষ্ঠানেই অ্যাসেম্বলি করা বন্ধ রাখা হয়েছে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে করা হয়েছে খাবার জন্য বিশুদ্ধ ও ঠান্ডা পানির ব্যবস্থা।
এদিকে নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রাথমিকে ক্লাস কার্যক্রম চলবে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়, এক শিফটে পরিচালিত বিদ্যালয়ে সকাল ৮টা থেকে ১১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত ক্লাস চলবে। দুই শিফটে পরিচালিত বিদ্যালয়ে ১ম শিফট সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা এবং দ্বিতীয় শিফট সকাল ৯টা ৪৫ মিনিট থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলবে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার সংশ্লিষ্টদের নিয়ে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে প্রেরিত রুটিন বিবেচনায় নিয়ে উপজেলা ভিত্তিক শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সাপ্তাহিক রুটিন প্রণয়ন করবেন।
অপরদিকে আজ রোববার (২৮ এপ্রিল) স্কুল খোলার পর বগুড়া শহরের বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্কুলে স্কুলে শিক্ষার্থীদের কিছুক্ষণ পর পর পানি খাওয়ার জন্য ঠান্ডা ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। শ্রেণিকক্ষে যেন বৈদ্যুতিক পাখাগুলো ঠিকঠাক মত চলে সেগুলো আগেই ঠিক করা হয়েছে।
কোন কোন প্রতিষ্ঠান শ্রেণিকক্ষ ঠান্ডা রাখার জন্য সিলিং ফ্যানের পাশাপাশি স্ট্যান্ড ফ্যানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে জেলা শিক্ষা বিভাগের পক্ষ থেকে তাপ-প্রবাহকে কেন্দ্র করে কোন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
বগুড়া বিয়াম মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মোস্তাফিজার রহমান জানান, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে শিক্ষার্থীরা যেন ঘন্টায় ঘন্টায় পানি পান করতে পারে এজন্য তারা প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি ফ্লোরের সামনে একটি করে বিশুদ্ধ পানির ট্যাঙ্ক রেখেছেন।
পাশাপাশি চোখে মুখে যেন ঠান্ডা পানির ছিটা দিতে পারে এজন্য মাঠের পাশে বরফ মিশ্রিত বড় একটি পানির ট্যাঙ্ক বসানো হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি শ্রেণি কক্ষ ঠান্ডা রাখার জন্য সিলিং ফ্যানের পাশাপাশি স্ট্যান্ড ফ্যানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বগুড়া জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামপদ মুস্তফি জানান, অতি মাত্রার তাপ-প্রবাহের কারণে শিক্ষার্থীদের ক্লাস রুম থেকে বের না হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেকে যেন বাড়ি থেকে পানি এবং স্যালাইন মিশ্রিত পানি আনে সেই বিষয়ে তাদের সচেতন করা হয়েছে।
বগুড়া করতোয়া মাল্টিমিডিয়া স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ অসিত কুমার সরকার জানান, প্রতিষ্ঠান খোলার আগেই আমরা প্রতিটি শ্রেণি কক্ষের বৈদ্যুতিক পাখা পরীক্ষা করে নিয়েছি। কোথাও সমস্যা থাকলে সেগুলো ঠিক করা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের বাসা থেকে যেন ওয়াটার পটে বিশুদ্ধ খাবার পানি পানি আনে সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে এবং স্কুলে পর্যাপ্ত খাবার পানির ব্যবস্থা রয়েছে।
বগুড়া সেন্ট্রাল স্কুলের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম জানান, তাদের স্কুলে প্রতিটি শ্রেণি কক্ষেই বৈদ্যুতিক পাখার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের বাসা থেকে পানি আনার নির্দেশনা রয়েছে। এছাড়া স্কুলের আয়া ও দপ্তরীকে সব সময় খাবার পানি রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
যেন শিক্ষার্থীরা চাওয়া মাত্রই পায়। এছাড়া আজ সোমবার থেকে ওই স্কুলে প্রধান শিক্ষকের নিজস্ব তহবিল থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য খাবার স্যালাইন রাখা হবে বলে তিনি জানান। এদিকে স্কুলগুলো খুললেও প্রচণ্ড গরমের কারণে বাচ্চাদের নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা।
তাপপ্রবাহে ক্লাসের বাইরে বের না হতে, মাঠে খেলাধুলা না করতে এমনকি বন্ধুদের সঙ্গে দৌড়াদৌড়ি না করার জন্যও সতর্ক করছেন অনেক অভিভাবক। গত কয়েকদিন ধরেই বগুড়ার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। গতকাল বগুড়ার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে গতকাল সাংবাদিকদের শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, দেশের সব জেলার তাপমাত্রা সমান নয়। কোন জেলায় কম বা কোন জেলায় বেশি রয়েছে। কোন জেলায় যদি তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে ওঠে তবে স্থানীয় পর্যায় সেই জেলায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা যেতে পারে, এছাড়া যেসব জায়গায় তাপমাত্রা বেশি সেইসব এলাকা শিক্ষা বিভাগ স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে তাদের নিজেস্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।