স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়া শহরের স্টেশন সড়কে যানজট নিরসন এবং রাস্তা পরিচ্ছন্ন রাখতে শহরের একমাত্র দেশি ফলের আড়ৎ বগুড়া শহরের তিনমাথায় স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় গৃহিত হলেও এক বছরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
প্রায় এক বছর পর এই বিষয়ে গত ৯ এপ্রিল আলোচনা হলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। দেশি ফলের আড়ৎ স্থানান্তর না হলে আসন্ন আনারস, আম, লিচু, কাঁঠালের মৌসুমে স্টেশন সড়ক আবারও জঞ্জালপূর্ণ সড়কে পরিণত হতে পারে।
২০২৩ সালের ৯ জুলাই বগুড়া জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় সাতমাথায় যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে ফলের আড়ৎ এবং ফুটপাত ও সড়ক দখলদারদের দায়ী করা হয়। ওই সভায় ফলের বাজার অপসারণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পুলিশ সুপার, বগুড়া পৌরসভার মেয়র, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। ওই সভার পর গত ৯ আগস্ট তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোছা. আফসানা ইয়াসমিন বগুড়া পৌরসভার মেয়রকে ফলের পাইকারি বাজার অন্যত্র স্থানান্তর করার জন্য পত্র প্রেরণ করেন।
এই পত্রে উল্লেখ করা হয়, স্টেশন সড়কে ফলের পাইকারি বাজারের কারণে শহরে তীব্র যানজট হচ্ছে। বগুড়া ফল ব্যবসায়ী সমিতির ২০২৩ এর ১১ জানুয়ারির আবেদনের প্রেক্ষিতে স্টেশন রোডের মধ্যে রাস্তা সংলগ্ন যাবতীয় দেশি ফলমূল বিক্রির ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো বগুড়া শহরস্থ রেলগেট তিনমাথায় স্থানান্তরে মতামত দেওয়া হয়। চিঠিতে মেয়রকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। বগুড়া পৌরসভার পক্ষ থেকে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা হয়।
এদিকে বগুড়া ফল ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে গত বছরের ১১ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর আবেদন দিয়ে জানানো হয়, বগুড়া শহরস্থ সাতমাথা টু রেলস্টেশনের মধ্যে রাস্তা সংলগ্ন অবস্থিত দেশি ফলমূল বিক্রির ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তারা তিনমাথায় স্থানান্তর করতে চান।
পরবর্তীতে ওই বছরের ১১ মার্চ বগুড়া সদর আসনের সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান রিপু তিনমাথার দক্ষিণে‘দেশিফলের মন্ডি’র উদ্বোধন করেন।
এদিকে বগুড়া পৌরসভার পক্ষ থেকে চলতি বছর স্টেশন রোডের পরিবর্তে তিনমাথা আড়ৎ এলাকা ইজারা দেওয়া হয় এবং ইজারাদারকে স্টেশন রোডে অবস্থিত আড়ৎ থেকে ইজারা আদায় না করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়।
এত দিনেও ফলের আড়ৎ তিনমাথায় স্থানান্তর না করায় গত ৯ এপ্রিল বগুড়া জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আবার আলোচনা করা হয়। ওই সভায় পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে আবারও ফলের আড়ৎ তিনমাথায় স্থানান্তর করার প্রতি জোর দেওয়া হয়।
জেলা প্রশাসন, পৌরসভা, পুলিশ বিভাগ আড়ৎ স্থানান্তর করার কথা বললেও দেশিফলের পাইকারি ব্যবসায়ীরা তিনমাথায় যাচ্ছেন না। এতে করে স্টেশন রোডে যেমন যানজট হয়, তেমনি ফলের মৌসুমে ওই সড়ক আবর্জনা দুর্গন্ধ ছড়ায়। ফলে স্বাভাবিক যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা, ওই সময় রাস্তা দিয়ে চলাচল করাও কষ্টসাধ্য হয়ে যায়।
এব্যাপারে বগুড়া ফল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি। বগুড়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র পরিমল চন্দ্র দাস জানান, ব্যবসায়ীদের তিনমাথায় যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তারা যেতেও চেয়েছেন। ফল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে চিঠি দেওয়া হয়েছে, না গেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বাদশা জানান, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে রাস্তার যানজট কমাতে ফলের আড়ৎ সরাতে বলা হয়। পরে জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় আড়ৎ সরানোর সিদ্ধান্ত হয়। অন্যদিকে ফল ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকেও আড়ৎ সরানোর জন্য আবেদন করা হলে আড়ৎ সরিয়ে তিন মাথায় নেওয়া হয়।
ব্যবসায়ীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আড়ৎ সরানো হলেও তারা আর সেখানে যাচ্ছেন না। সমিতির সভাপতি- সাধারণ সম্পাদককে বলা হলেও তারা অজ্ঞাত কারণে দেশি ফলের পাইকারি বাজার স্থানান্তর করছেন না। তাছাড়া প্যানেল মেয়র পরিমল চন্দ্রসহ কয়েকজন কাউন্সিলরকে দিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, তারা ব্যবসায়ীদের বলে এসেছেন।
তিনি এও বলেন, স্টেশন রোডের ইজারা বাতিল করে তিনমাথায় ইজারা দেওয়া হলেও ব্যবসায়ীরা যাচ্ছেন না। তিনি এর জন্য সরাসরি জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।