মাদক মামলার মূল আসামি ভারতে, কিন্তু আসামির সঙ্গে নাম ও বাবার নামের মিল থাকায় এক কলেজছাত্রকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর পুলিশ।
কলেজছাত্রের পরিবারের আপত্তি না মানলেও পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পুনঃতদন্ত শেষে পুলিশ বলছে ‘ভুল করে’ তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ভুক্তভোগী ইসমাইল হোসেন (২১) গোদাগাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের একাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের ছাত্র। তিনি গোদাগাড়ী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ফাজিলপুর গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে। তার মায়ের নাম মোসা. মনোয়ারা বেগম।
অপরদিকে, ৫০ গ্রাম হেরোইন রাখার মাদক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আসামির নাম ইসমাইল হোসেন (২০)। তিনি একই ওয়ার্ডের লালবাগ হেলিপ্যাড গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে। তার মায়ের নাম মোসা. বেলিয়ারা।
কলেজছাত্র ইসমাইল হোসেনের ভাই আব্দুল হাকিম রুবেল বলেন, “রোববার এশার নামাজের সময় গোদাগাড়ী মডেল থানার এসআই আতিকুর রহমান আমাদের বাড়িতে আসেন। এ সময় তিনি একটি মাদক মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেখিয়ে আমার ভাই ইসমাইলকে ধরে নিয়ে যান।
“আমরা এসআইকে বার বার বলেছি তার নামে কোনো মাদক মামলা নেই। এ সময় তার জাতীয় পরিচয়পত্রও দেখানো হয়েছে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানার সঙ্গে গ্রাম, মাতার নাম ও বয়স মিল নেই সেটিও দেখিয়েছি।”
রুবেল আরও বলেন, “এরপরও এসআই আতিকুর জোরপূর্বক আমার ভাইকে ধরে নিয়ে যান এবং পরের দিন মাদকদ্রব্য আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠান।”
মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২৯ অগাস্ট রাত পৌনে ১১টার দিকে গোদাগাড়ীর মাদারপুর জামে মসজিদ মার্কেটের সামনে থেকে ইসমাইল হোসেনকে ৫০ গ্রাম হেরোইনসহ গ্রেপ্তার করে রাজশাহী জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
রাতেই তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইনে গোদাগাড়ী মডেল থানায় মামলা করেন ডিবির এসআই ইনামুল ইসলাম। এর পরের দিন তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এক মাস পর ৩০ সেপ্টেম্বর মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ইসমাইল হোসেন জামিনে মুক্তি পান। এরপর তিনি ভারতের চেন্নাই চলে যান। সেখানে গিয়ে তিনি তার বাবার সঙ্গে কাঠমিস্ত্রির কাজ করছেন। তার বাবা আব্দুল করিম ছয় বছর ধরে চেন্নাই আছেন।
পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে নম্বর সংগ্রহ করে যোগাযোগ করা হলে মাদক মামলার আসামি হওয়ার কথা স্বীকার করেন চেন্নাইয়ে থাকা ইসমাইল হোসেন।
মিথ্যা মাদক মামলা দিয়ে তাকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “আমি গোদাগাড়ীতে থাকা অবস্থায় কাঠমিস্ত্রীর কাজ করতাম। এক বন্ধুর সঙ্গে ঝামেলা হলে তার মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশ আমাকে উপজেলা পরিষদের সামনে থেকে ধরে নিয়ে মাদকের মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠায়।”
ইসমাইল জানান, আগে থেকেই তার পাসপোর্ট করা ছিল। জামিনে মুক্তি পেয়ে ভারতের চেন্নাই চলে গিয়েছেন ।
তবে মামলার বাদী ডিবির এসআই ইনামুল ইসলাম বলেন, মিথ্যা মামলার অভিযোগটি ঠিক নয়। তাকে মাদকসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং সঠিকভাবে তদন্তের পরেই তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া মিস্ত্রী ইসমাইল হোসেনের নামে মাদকের আরও দুটি মামলা আছে বলেও জানান গোয়েন্দা পুলিশের এ কর্মকর্তা।
এদিকে, ভুল আসামি ধরে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় ভুক্তভোগী কলেজ ছাত্র ইসমাইলের পরিবার সোমবার গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি আব্দুল মতিনসহ পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ভুল আসামি ধরে চালান দেওয়ার সব নথিপত্র দেখানোর পরও তা মানতে নারাজ ছিলেন ওসি আব্দুল মতিন ও এসআই আতিকুর রহমান।
পরে রাতে ভুক্তভোগীর ভাই আব্দুল হাকিম রুবেল গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নথিপত্র দেন।
এরপর বিষয়টি গোদাগাড়ী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সোহেল রানাকে অবগত করা হলে তিনি পুনরায় সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ওসি আব্দুল মতিনকে নির্দেশ দেন।
পরে মঙ্গলবার সকালে ওসি আব্দুল মতিন বলেন, “মূল আসামির সঠিক ঠিকানা পাওয়া গেছে। যাকে ভুল করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে তার জন্য আদালতে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। আশা করছি তার জামিন হয়ে যাবে।”
এএসপি সোহেল রানা বলেন, কীভাবে এ ধরনের ভুল হল বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
এদিকে আদালতের প্রতিবেদন পাওয়ার পর মঙ্গলবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে কলেজছাত্র ইসমাইল কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তার ভাই আব্দুল হাকিম রুবেল।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।