আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা
শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়ার শেরপুরে কেল্লাপোষী মেলায় কোন প্রকার টোল বা খাজনা আদায় করা যাবে না-মর্মে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু সেটি মানছেন না মেলা আয়োজক কমিটির নেতারা। এমনকি আদালতের সেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের কাছ থেকেই অবৈধভাবে খাজনা আদায় করা হচ্ছে।
স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবৈধ খাজনা আদায়ের নামে অর্ধকোটি টাকা চাঁদাবাজির মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছেন সংঘবদ্ধ একটি অসাধু চক্র। এরই ধারাবাহিকতায় মেলার একাধিক মহাল মোটা অঙ্কের টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে। তবে এসব ইজারার একটি কানাকড়িও সরকারি কোষাগারে জমা না হলেও চক্রটির পকেটস্থ করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা সদর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে কুসুম্বী ইউনিয়নের কেল্লাপোষী নামকস্থানে ৪৬৮ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে প্রতিবছরের মতো এবারো আজ রোববার (২৬ মে) থেকে মেলাটি শুরু হয়েছে। তিন দিনব্যাপী মেলা হলেও সপ্তাহব্যাপী চলে ওই মেলা।
আজ রোববার (২৬ মে) দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মেলার প্রধান আকর্ষণ হলো বিভিন্ন ধরনের কাঠের আসবাবপত্র, মিষ্টি-ফল-মূল, নানা জাতের বড় বড় মাছ, কুঠির শিল্প সামগ্রী, মহিষ ও খাসির মাংস, রকমারি মসলা। দূর-দূরান্ত থেকে আগত বিক্রেতারা এখানে দোকান সাজিয়ে জাঁকিয়ে বসেছেন। অসংখ্য ক্রেতারা তাদের চাহিদা অনুযায়ী হরেক রকম পণ্য কিনছেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এভাবেই কেনাকাটা চলছে বলে দোকানিরা জানান।
এছাড়া মেলায় একাধিক সার্কাস, নাগোরদোলা, যাত্রা, বিচিত্রা, মোটরসাইকেল খেলাসহ বিনোদনের নানা প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে। তবে সেসব প্যান্ডেলে এখনো কোন কার্যক্রম শুরু হয়নি। রাত থেকে মেলার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের ম্যানেজ করে অশ্লীল-নাচ-গান চালানো হবে বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন। সেইসঙ্গে মেলার বিভিন্ন স্থানে জুয়াড়িরা পাল্লা দিয়ে মেলা দেখতে আসা সাধারণ মানুষকে ঠকিয়ে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার আয়োজন দেখা যায়।
পাশাপাশি ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের কাছ থেকে খাজনার নামে জোর করে চাঁদা করছিল স্থানীয় একদল যুবক। এসময় কথা হয় তাদের সঙ্গে। খাজনা আদায়কারী এসব যুবকরা জানান, মেলার বিভিন্ন মহাল আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে ইজারা দেওয়া হয়েছে। এসব মহাল লাখ লাখ টাকা ডাক হয়েছে। সে অনুযায়ী তাদের কাছ থেকে ইজারা নেওয়া মহাল থেকে টাকা আদায় করছেন।
তবে মেলার প্রধান মহাল কাঠপট্টি মেলা কমিটি তাদের লোকজন দিয়েই খাজনার নামে চাঁদা আদায় করছে।
জানতে চাইলে মামলার বাদি বাগড়া চকপোতা গ্রামের বাসিন্দা ওমর ফারুক বলেন, প্রায় পাঁচশ’ বছরের প্রাচীণ এই কেল্লাপোষী মেলা। সরকারিভাবে মেলাটি ইজারা দেওয়া না হলেও প্রতিবছরই মেলা কমিটি তাদের ইচ্ছেমাফিক ডাক দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।
তাদের এই অবৈধ কর্মকাণ্ড করার জন্য বেশ কয়েকবছর আগে আদালতের দ্বাড়স্থ হই। সম্প্রতি মামলাটির রায় হয়েছে। আদালত মেলায় যে কোন ধরণের টোল বা খাজনা আদায় করা যাবে না মর্মে নিষেধাজ্ঞা আদেশ দেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা। আদালতের সেই নির্দেশ অমান্য করেই এবার খাজনার নামে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মেলা কমিটির সদস্য গোলাম মোস্তফা লিটন বলেন, মেলা আয়োজনের জন্য খরচের জন্য কিছু টাকার প্রয়োজন হয়। মূলত সেটি আদায় করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে মেলার মহাল হাতবদল হয়ে খাজনা আদায় করা হয়ে থাকে বলে স্বীকার করলেও এখানে চাঁদাবাজির কোনো বিষয় নেই বলে দাবি করেন তিনি।
শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম রেজা এ প্রসঙ্গে বলেন, তিন দিনের জন্য মেলা বসানোর অনুমতি পেয়েছেন। এর বাইরে আর কোনো কিছুর অনুমতি নেই। জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন জিহাদী বলেন, খাজনা আদায়ের বিষয়টি আমার জানা নেই।
তবে মেলায় সার্কাস-যাত্রার নামে অশ্লীল নাচ-গান চলতে দেওয়া হবে না। এরপরও কোন প্যান্ডেলে অশ্লীল নাচ-গান করা হলে সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে সব বন্ধ করে দেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।