স্টাফ রিপোর্টার : তীব্র জ্বর, সর্দি ও কাশিতে ভুগছেন আরিফুর রহমান (ছদ্মনাম)। একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত আরিফুর জ্বরের কারণে গত তিনদিন থেকে অফিসেও যেতে পারছেন না। অবশেষে স্থানীয় এক চিকিৎসককে দেখিয়ে জ্বর ও সর্দি-কাশির ওষুধ খাচ্ছেন।
আরিফুর রহমানের মত তীব্র জ্বর নিয়ে কয়েকদিন আগে ভুগেছেন তার আরেক সহকর্মী। ওই সহকর্মীর জ্বরের সঙ্গে ছিল মাথা ব্যাথা ও কাশি। তিনিও স্থানীয় ফার্মেসি থেকে জ্বর ও মাথা ব্যাথা ছাড়ার ওষুধ খেয়ে কিছুটা সুস্থ হয়ে কর্মস্থলে যোগদান করেছেন।
কয়েকদিন আগে বগুড়ায় মৃদু তাপপ্রবাহের কারণে জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, মাথাব্যথা, মাথা ঘোরাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছে মানুষ। গত রোববার থেকে থেকে বগুড়ার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া হাল্কা ঝর ও বৃষ্টিপাতের কারণে আবহাওয়া কিছুটা ঠান্ডা হলেও এর আগে বেশ কয়েকদিন একটানা মৃদু তাপদাহ ছিল। একটানা কয়েকদিন তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল।
অতিরিক্ত গরমের অনেক বাড়িতে জ্বর, গলাব্যথা, কাশিজনিত রোগে কেউ না কেউ ভুগছেন বলে জানা গেছে। তবে এই ধরণের রোগের জন্য বেশিরভাগ রোগী হাসপাতাল বা ক্লিনিকে না গিয়ে পাড়া-মহল্লার চিকিৎসককে দেখিয়ে ওষুধ খাচ্ছেন। কেউ কেউ বা চিকিৎসককে না দেখিয়ে ফার্মেসিতে গিয়ে জ্বর-সর্দি-কাশির কথা বলে ওষুধ নিয়ে খেয়ে সেরে উঠছেন।
এছাড়া ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট মানুষের যন্ত্রণা আরও বাড়িয়েছে। এছাড়া যারা বাড়ি বা কর্মস্থলে এসি কক্ষে থাকেন, তারা এসি থেকে বের হলে ঘেমে- ভিজে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তবে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছে নবজাতক, শিশু ও বয়স্করা।
বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বর্হিবিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই হাসপাতালে বর্তমানে প্রতিদিন ৫৫ থেকে ৬০ জন জ্বর এবং সর্দি-কাশিতে ভোগা রোগী এসে চিকিৎসক দেখিয়ে ওষুধ নিয়ে যাচ্ছেন। এমনি সময় হাসপাতালের বর্হিবিভাগে দিনে ৪০ থেকে ৫০জন জ্বর এবং সর্দি-কাশির রোগী আসেন।
শহরের চেলোপাড়া এলাকার বাসিন্দা সুমনা জানান, কয়েকদিন আগে তিনি তীব্র জ্বরে ভুগেছেন। জ্বর ১০২ ডিগ্রির নীচে নামেনি। জ্বরের সঙ্গে ছিল কাশি ও মাথাব্যাথা। পাড়ার এক ফার্মেসি থেকে জ্বর ছাড়ার ট্যাবলেট খেয়ে তিনি সুস্থ হয়েছেন।
সুমনা বলেন, ‘আমি সুস্থ হতে কী না হতে আমার এক ভাবী জ্বর এসেছে। আমার মত তারও কাশি এবং সর্দি রয়েছে। তাকেও পাড়ার ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খাওয়ানো হচ্ছে। সুমনা জানান, প্রচণ্ড গরমের মধ্যে ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়িয়েছে।
বগুড়ার সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ শফিউল আজম জানান, বর্তমানে যে জ্বর হচ্ছে এটা ভাইরাল জ্বর। গত কয়েকদিন আগের মৃদু তাপপ্রবাহ ও অতিরিক্ত গরমের কারণে এই জ্বর হচ্ছে। এছাড়া কখনও কখনও দিনে এবং রাতে দুই ধরণের আবহাওয়া বিরাজ করেছে। দিনে প্রচন্ড গরম আবার মাঝরাতে ঠান্ডা আবহাওয়া এর প্রভাবেই জ্বর-সর্দি ও কাশি হচ্ছে।
গরমে কারো কারো জ্বরের সঙ্গে সর্দি এবং কাশিও হচ্ছে। তবে এই ভাইরাল জ্বরে সাধারণতঃ চিকিৎসকের কাছে বা হাসপাতালে ভর্তি হতে কেউ যান না। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসক দেখান কখনওবা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই পাড়া-মহল্লার ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ কিনে খেয়ে সেরে উঠছেন।
বগুড়া আর্মি মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক লেঃ কর্ণেল ডা. মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন বিপ্লব জানান, বর্তমানে যে জ্বর হচ্ছে এটি ভাইরাল জ্বর। এই জ্বরের সঙ্গে সর্দি-কাশিও রয়েছে। এই জ্বরে প্যারাসিটামল গ্রুপের ওষুধ খেলেই সেরে যায়। সঙ্গে প্রচুর পানি এবং পানি জাতীয় ফল বা ফলের জুস খেতে হবে।
এছাড়া স্যালাইনও খেতে পারেন রোগী। আর জ্বরের সঙ্গে যাদের সর্দি রয়েছে তারা এ্যান্টি হিস্টামিন ওষুধ খেতে পারেন। এই জ্বর সাধারণতঃ তিন থেকে চারদিন থাকে। তবে ৬দিন পার হয়ে গেলে অবশ্যই চিকিৎসককে দেখাতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ না খাওয়ার জন্যও তিনি পরামর্শ দেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।