ঘানি না টানলে মুখে জোটে না অন্ন
বদিউদ-জ্জামান মুকুল, সোনাতলা (বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়ার সোনাতলায় সংসার নামের ঘানি টানতে এবং মুখে দু’ বেলা দু’ মুঠো অন্ন তুলে দিতে গত ১৭ বছর হলো তেলের ঘানি টেনে চলেছেন ৭০ বছরের সালেক উদ্দিন ও তার স্ত্রী ইবেদা বেগম নামের এক দম্পতি।
বগুড়ার সোনাতলা উপজেলা সদর থেকে ১১-১২ কিলোমিটার পূর্বে বাঙালি ও যমুনা নদীর মধ্যবর্তী তেকানি চুকাইনগর এলাকা। ঐ এলাকার মুদি পাড়ায় ২০-২৫ পরিবার এখনও পৈত্রিক পেশা সরিষা ভেঙ্গে তেল বের করে বিক্রি করা। ওই পাড়ার বাসিন্দা সালেক উদ্দিন (৭০) ও তার স্ত্রী ইবেদা বেগম আজ থেকে ১৭ বছর থেকে গরুর পরিবর্তে নিজেরা তেলের ঘানি টেনে চলছেন।
একদিন তেলের ঘানি না টানলে তাদের মুখে জোটেনা খাবার। ৫ ছেলে ও ৩ মেয়ের জনক হলেও অভাব অনটন তাদের নিত্য সঙ্গী। সন্তানরা নিজেরা নিজেদের খরচ চালাতে বেসামাল। বৃদ্ধ পিতা মাতাকে কোন সাহায্য করতে পারেনা। তাই বৃদ্ধ বয়সেও তেলের ঘানি টানতে হচ্ছে ওই দম্পতিকে। নিজেরা ঘানি টেনে প্রতিদিন প্রায় ১২ থেকে ১৫ কেজি সরিষা ভাঙ্গানোর পর ৪ থেকে ৫ কেজি তেল বের করেন তারা।
প্রতি কেজি তেল ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি করেন। পরের দিনের সরিষা কেনাবাবদ টাকা রেখে সেই টাকা দিয়ে বাজারখরচ করেন। বাড়ির ভিটে ছাড়া তাদের কোন জমি নেই। সালেক উদ্দিনের স্ত্রী ইবেদা বেগম বলেন, প্রায় দেড় যুগ ধরে স্বামীর সাথে ঘানি টেনে চলেছেন।
প্রথমে খারাপ লাগলেও পেটের খাবার এবং সন্তানদের ভরনপোষনের জন্য বৃদ্ধ স্বামীকে সহযোগিতা করেন তিনি। তিনি একা একা এই শক্ত ঘানি টানতে পারেন না। কষ্ট হয়, তবুও চলতে হয়। এ বিষয়ে স্থানীয় তেকানী চুকাইনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল মন্ডল বলেন, চেয়ারম্যান হিসেবে যতটুকু সাহায্য করা সম্ভব হয়, ততটুকু করেছি।
সরকারিভাবে এবং ব্যক্তি উদ্যোগে কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে শেষ বয়সে তারা খেয়ে-পড়ে বাঁচতে পারে। পুলিশের সাবেক ডি আই জি হামিদুল আলম মিলন ওই দম্পতিকে আসন্ন ঈদুল আযহার সময় একটি গরু কিনে ওই দুঃখ দুর্দশার লাঘব করতে চান বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।