ভিডিও

সিরাজগঞ্জে বছরে উৎপাদিত হচ্ছে ৩৫শ’ কোটি টাকার দুধ

১ জুন বিশ্ব দুগ্ধ দিবস

প্রকাশিত: মে ৩১, ২০২৪, ১০:৫৫ রাত
আপডেট: মে ৩১, ২০২৪, ১০:৫৫ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

জয়নাল আবেদীন জয়, সিরাজগঞ্জ : মানবদেহে দুধের পুষ্টিগুণের কোন বিকল্প নেই। আর এই দুধ উৎপাদনে দেশে নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছে সিরাজগঞ্জ জেলা। এখানকার খামারিরা তাদের গাভি থেকে বছরে ৭ লাখ ১৬ হাজার মে. টন দুধ উৎপাদন করছে।

বিভিন্ন দুগ্ধ সংগ্রহ কোম্পানির মাধ্যমে এই দুধ বাজারজাত হয় সারা দেশে। এর মাধ্যমে বছরে আয় হচ্ছে প্রায় ৩ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা। যা জেলার গ্রামীণ অর্থনীতিকে করেছে শক্তিশালী গতিশীল। এই বিপুল পরিমাণ দুধ উৎপাদন করে দেশের মানুষের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করলেও খামারিরা বলছেন, গো-খাদ্যের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে তারা তেমন লাভবান হতে পারছেন না।

মুক্ত মাঠে দলবেঁধে চরে বেড়াচ্ছে হরেক রঙের হাজার হাজার গাভি। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ধলাই নদী। এর দুইধারে গড়ে উঠেছে অসংখ্য গরুর বাথান। সেখানে খামারি আর রাখালদের পরম মমতা, ভালবাসায় লালন-পালন করা হচ্ছে হরেক জাতের গাভি। মুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশে সবুজ ঘাস খেয়ে এসব গাভী প্রতিদিন সকাল-বিকাল প্রকারভেদে ১০ থেকে ৩০ লিটার পর্যন্ত দুধ দিচ্ছে।

ভিন্ন কোন দেশ নয়। এ দৃশ্য সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায়। পুরো জেলাজুড়ে একইভাবে কয়েক যুগ ধরে এভাবে উন্নত জাতের গাভি লালন পালন করছেন খামারিরা। এসব গাভির দাম এক লাখ টাকা থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত।

এসব গরুকে কখনো দড়ি দিয়ে বাঁধা হয় না। বাথানের মুক্ত প্রকৃতিতে ছেড়ে তাদের লালন-পালন করা হয়। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা ঘাস, চাষ করা উন্নত জাতের ঘাস, খৈল, ভুষি এদের প্রধান খাদ্য। খাবার শেষে এই গরুগুলো ধলাই নদীতে নিয়ম করে পানি খাওয়াসহ গোসল করানো হয়। নদী পাড়ের বাথানেই তারা বিশ্রাম নেয়।

সবুজ খাস, দানারদার খাদ্য খাওয়া এবং প্রাকৃতিক পরিবেশে থাকার কারণে এসব গাভিগুলো প্রচুর দুধ দেয়। এদের দুধের ঘনত্ব (ফ্যাট) অন্য জেলার দুধের চেয়ে বেশি হয়। প্রাকৃতিক পরিবেশে থাকার কারণে এদের রোগ ব্যাধিও কম হয়।

অস্থায়ী বাথানে গরুদের সাথেই ঝুঁপড়ি ঘর তুলে রাখালদের বসবাস। তাদের থাকা-খাওয়া সব এখানেই। শাহজাদপুর উপজেলার বিভিন্ন মাঠে এমন অর্ধশত বড় বাথানে রয়েছে কয়েক লাখ গবাদিপশু।

বাথান আর খামার থেকে সকাল-বিকাল দুধ দোহন করে এখানেই বিক্রি করা হয়। মিল্কভিটাসহ প্রায় ৪৫টির অধিক দুগ্ধ সংগ্রহকারী কোম্পানি তাদের এলাকা ভিত্তিক এজেন্টের মাধ্যমে সকাল-বিকাল খামারিদের গাভির দুধ সংগ্রহ করে থাকেন।

এরপর তা কেন্দ্রে শীতলীকরণসহ প্রক্রিয়াজাত করে সারা দেশে বাজারজাত করা হচ্ছে। দুগ্ধ সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সপ্তাহ শেষে খামারিদের দুধের দাম পরিশোধ করে থাকে। শুধু এই উপজেলাই নয়। জেলাজুড়ে বিভিন্ন উপজেলায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য দুগ্ধ উৎপাদন খামার। এর মাধ্যমেই জীবন এবং জীবিকা চলে গবাদিপশু মালিক ও তাদের পরিবারের।

জেলার খামারিরা কয়েক পুরুষ ধরে বংশ পরম্পরায় গবাদিপশু লালন-পালন এবং দুগ্ধ উৎপাদনের সাথে জড়িত। এখানকার গবাদিপশু লালন-পালন এবং দুগ্ধ সংগ্রহের ইতিহাস প্রায় দেড়শ’ বছরের। তিন লক্ষাধিক মানুষের জীবন এবং জীবিকা চলে এ পেশায়।

শাহজাদপুর উপজেলার রেশমবাড়ী এলাকার খামারি মো.আব্দুস শাহজাদপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকতা ডা. মো. বেলাল হোসেন জানান, এ উপজেলায় প্রতিদিন ৩ লাখ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। যার বাজারমূল্যে প্রায় ৩ কোটি টাকা। দুধ উৎপাদনে খরচ কমাতে আমরা খামারিদের উন্নত জাতের ঘাস চাষাবাদসহ সাইলেজ উৎপাদনে সহায়তা করছি। চিকিৎসা সহায়তা দিচ্ছি।

সিরাজগঞ্জ প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় প্রায় ৩৩ হাজার গাভির খামার রয়েছে। এখানে গাভি রয়েছে প্রায় ৬ লাখ ৭৫ হাজার। এ থেকে বছরে উৎপাদিত হয় ৭ লাখ ১৬ হাজার মে. টন দুগ্ধ। জেলায় প্রতিদিন দুধের চাহিদা ৮ থেকে ৯ লাখ লিটার।

আর উৎপাদনের হার প্রতিদিন ১৯ লাখ লিটার। ৪৫ টি কোম্পানী এই উদ্বৃত্ত দুগ্ধ সংগ্রহ করে সারা দেশে বাজারজাত করছে। এ থেকে বছরে আয় হচ্ছে ৩ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা। যা জেলার গ্রামীণ অর্থনীতিকে করেছে সমৃদ্ধ।

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকতা ডা. মো. ওমর ফারুক জানান, সিরাজগঞ্জ জেলাকে গবাদিপশুর রাজধানী বলা হয়। দেশের সবচেয়ে বেশি দুগ্ধ ও মাংস উৎপাদন হয় এ জেলায়। এক সময় শুধু খামারিরা দুগ্ধ উৎপাদন করে বিক্রি করতেন।

ফলে চাহিদার বেশি দুগ্ধ উৎপাদন হলে তারা তেমন দাম পেতেন না। আমরা প্রাণিসম্পদ বিভাগের মাধ্যমে খামারিদের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ সহ নানা রকম সহায়তা দিচ্ছি।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS