সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি : সারিয়াকান্দির কামালপুর ইউনিয়নের ভাঙন কবলিত এলাকাবাসীর অনেকেই যমুনা নদীর পানি খেয়ে জীবনযাপন করছেন। আক্রান্ত হচ্ছেন নানা ধরনের অসুখে। টিউবওয়েল, ঘরবাড়ি, ভিটেমাটি যমুনায় হারিয়ে তারা নদীপাড়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। মাছ শিকার করে অনেকেরই চলে সংসার।
উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামের মৃত তমিজ প্রামানিকের ছেলে নজরুল ইসলাম (৪২)। যমুনা নদীর ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে তিনি এখন নিঃস্ব। ভিটেমাটির সাথে তার ঘরবাড়ি এবং টিউবওয়েলও যমুনায় বিলীন হয়েছে। এখন তিনি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধে দোচালা একটি খুপরি ঘরে বাস করছেন। ছোট্ট একটি কুঁড়েঘরে স্ত্রী সন্তানসহ ৫ জন গাদাগাদি করে বসবাস করছেন।
নজরুল ইসলামের ছেলেবেলা ভালোই কেটেছে। নদী ভাঙনের আগে তার ভিটেমাটিতে বেশ বড়বড় ঘর ছিল। ছিল গোয়ালভরা গরু এবং গোলাভরা ধান। ১৯৯৭ সালে তার ভিটেমাটি এবং বাড়িঘর যমুনায় বিলীন হয়েছে। এরপর তিনি নি:স্ব হয়েছেন।
নজরুল ইসলাম এইচএসসি পাশ করে চাকরি না পেয়ে গ্রামেই ছাত্রদের প্রাইভেট পড়ে সংসারের হাল ধরেন। কিন্তু এ গ্রামের প্রায় ৯৫ শতাংশ মানুষ নদীভাঙ্গনের শিকার হয়ে এখন অন্যত্র বসতি গড়ে তুলেছেন। ফলে আগের মত আর প্রাইভেটও নেই। তাই খেয়ে না খেয়েই চলে তার সংসার।
সব মানুষ এলাকা ছাড়া হলেও নজরুল যমুনার টানে এখনো এ গ্রামেই যমুনাপাড়ে পরে রয়েছেন। সারাদিন যমুনা নদীর গর্জন তাকে মুগ্ধ করে। যমুনার বড়বড় ঢেউ তার বাড়ির নদীর কিনারায় আছরে পরে। সারারাত তাদের পরিবারের অজানা ভয়ে রাত কাটে।
যমুনায় টিউবওয়েল বিলীন হওয়ার পর নজরুল আর টিউবওয়েল কিনতে পারেননি। তাই যমুনা নদী থেকে পানি নিয়ে এসে ছাকন পদ্ধতি ব্যবহার করে সেই পানিই পান করেন। দূষিত পানি পান করার ফলে অনেক সময় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নানা ধরনের অসুখের শিকার হন।
নজরুলের শরীরেও নানা অসুখ বাসা বেঁধেছে। নজরুলের বাড়ির পাশেই কয়েকটি টিন দিয়ে একটি একচালা ঘরে বসবাস করছেন গোপাহার ঠিকাদার (৫৫)। ৫ বার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে তিনি যমুনাপাড়ে আশ্রয় নিয়েছেন। বাস করছেন একচালা ছোট্র একটি ঝুপড়ি ঘরে।
যমুনা নদীতে মাছ শিকার করেই তার সংসার চলে। মাছ ধরতে না পারলে না খেয়ে থাকতে হয়। তিনিও বেশ কয়েকবছর ধরেই যমুনা নদীর পানি পান করেন। বাড়িতে কোনও টিউবওয়েল নেই তার। একই চিত্র দেখা গেছে এ গ্রামের হযরত মন্ডলের স্ত্রী অবিরন বেগমের বাড়িতে। এ গ্রামের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের বেশ কয়েকটি বাড়িতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তাদের নিজস্ব কোনও টিউবওয়েল নেই। যমুনার জলেই মেটে তাদের পিপাসা।
নজরুল ইসলামের স্ত্রী বলেন, যমুনার পানি অনেক সময় গন্ধ লাগে। ছেলেরা খেতে চায়না। তারপরও জীবন বাঁচাতে এ পানি খেয়ে আমরা অনেকসময় অসুস্থ হয়ে পরছি। টিউবওয়েল পেলে তো ভালোই হতো কিন্তু সরকারের কাছে আমাদের একটাই অনুরোধ নদীর কাজটা যেনো ঠিকমতো হয়। আমাদের শেষ আশ্রয়টুকু যেন আর যমুনায় বিলীন না হয়।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।