ভিডিও

শাজাহানপুরে আবাসিক হোটেলে স্ত্রী-সন্তানকে জবাই করে হত্যা

শিশু সন্তানের মাথা মেলেনি করতোয়া নদীতে, উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা

প্রকাশিত: জুন ০৩, ২০২৪, ০২:৫৬ দুপুর
আপডেট: জুন ০৪, ২০২৪, ১২:৪১ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়ার শাজাহানপুরের বনানীতে শুভেচ্ছা আবাসিক হোটেলে স্ত্রী ও শিশুপুত্রকে জবাই করে হত্যার ঘটনায় শিশুর খন্ডিত মাথা আজ সোমবার (৩ মে) দ্বিতীয় দিনেও সন্ধান মেলেনি। রাজশাহী থেকে আসা ডুবুরি দল আজ সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত করতোয়া নদীতে চার ঘন্টা অনুসন্ধান চালিয়েও ওই শিশুর খন্ডিত মাথার কোন সন্ধান করতে পারেনি। পরে তারা এই উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বগুড়া ডিবি’র ওসি মোস্তাফিজ হাসান। এর আগে তার নেতৃত্বেই গতকাল আরেক দফা উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হয়।

উল্লেখ্য, বগুড়ার শাজাহানপুরের বনানীতে গতকাল রোববার শুভেচ্ছা আবাসিক হোটেলে স্ত্রী ও শিশুপুত্রকে জবাই করে হত্যা করে পালানোর সময় স্বামী সেনা সদস্য আজিজুল হককে (২৪) আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে হোটেল কর্তৃপক্ষ। গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে এ ঘটনা ঘটে। আটক আজিজুল হক (২৪) বগুড়ার ধুনট উপজেলার হেউটনগর গ্রামের কৃষক হামিদুর রহমানের ছেলে। এই নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার নারী ও তার শিশুসন্তানের খন্ডিত দেহ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হলেও খন্ডিত মাথা গতকাল রোববার (২ জুন) রাত ৯টা  পর্যন্ত উদ্ধার হয়নি। তবে ঘাতক বাবার জবানবন্দী অনুযায়ী ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল করতোয়া নদীতে অনুসন্ধান চালালেও খন্ডিত মাথা উদ্ধার করতে পারেনি।

হোটেলের ম্যানেজার রবিউল ইসলাম জানান, স্ত্রী আশা মনি (২০) ও শিশুপুত্র আব্দুল্লাহ আল রাফি (০১) কে নিয়ে তিন দিন হোটেলে থাকবেন এমন কথা বলে শনিবার সন্ধ্যায় বনানীস্থ শুভেচ্ছা আবাসিক হোটেলের ৩০১ নম্বর কক্ষে উঠেন আজিজুল হক। আজিজুল নিজেকে মিরাজ এবং তার স্ত্রীকে তমা এবং তাদের বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ পরিচয় দিয়ে হোটেলের ওই কক্ষ ভাড়া করেন। রাত ১০টার দিকে স্ত্রী-সন্তানকে রেখে বাড়িতে যান আজিজুল। পরদিন সকাল ৯টার দিকে হোটেলে ফিরে ম্যানেজারকে ভাড়া পরিশোধ করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন আজিজুল। কিন্তু তার সাথে স্ত্রী-সন্তান না থাকায় হোটেল কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হলে আজিজুলকে আটক করে পুলিশকে সংবাদ দেয়।

স্থানীয়রা দেখতে পান, শিশুপুত্র রাফির মস্তকবিহীন লাশ ৩০১ নম্বর কক্ষের খাটের নিচে এবং স্ত্রী আশা মনির লাশ বস্তাবন্দী অবস্থায় টয়লেটে পড়ে আছে। এরপর থেকেই জোড়া খুনের বিষয়টি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। নিহত আশা মনির বাবা বগুড়া শহরের নারুলী পূর্বপাড়া এলাকার বাসিন্দা আশাদুল জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার মেয়ে জামাই তার বাড়িতে বেড়াতে যায়।

সেখান থেকে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে গত শনিবার বিকালে নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয় আজিজুল। এরপর রাত ১০টার দিকে আজিজুল তার শ্বশুরকে ফোন করে জানায়, শরীর খাারাপ লাগায় আশা মনিকে বাড়িতে পঠিয়ে দিয়ে সে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিল। এরপর বাড়িতে ফোন করে জানতে পায় আশা মনি বাড়িতে যায়নি। সারারাত চলে খোঁজাখুঁজি।

এরপর রোববার (২ জুন) সকাল ১১টার দিকে লোকমুখে জানতে পান মেয়ে আশা মনি ও নাতি রাফিকে বনানীস্থ একটি আবাসিক হোটেলে  জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম, শাজাহানপুর থানার ওসি শহিদুল ইসলামসহ পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্ত্রী-সন্তানকে খুন করার কথা স্বীকার করেছে আজিজুল হক। সে আরও জানায়, শিশুপুত্রের মাথা বিচ্ছিন্ন করে করতোয়া নদীতে ফেলে দিয়েছে।

এদিকে, আশামনির বাবা আসাদুল আরও জানান, তিন বছর আগে আজিজুল হকের সাথে তার মেয়ের বিয়ে হয়। সন্তান প্রসবের আগে থেকেই তার মেয়ে বাবার বাড়িতে বসবাস করে। জামাই দুই মাসের ছুটিতে বাড়ি আসে। রোববার (২ জুন) তার কর্মস্থলে চলে যাওয়ার কথা ছিল। বৃহস্পতিবার জামাই আজিজুল নারুলীতে শ্বশুরবাড়ি আসে। সেখানে দুই দিন থাকার পর শনিবার বিকেলে স্ত্রী সন্তান নিয়ে শহরে শপিং করার জন্য বের হয়। রাত ১০ টার দিকে আজিজুল হক ফোন করে তার শ্বশুরকে জানান, রাত ৮ টার দিকে তিনি স্ত্রী সন্তানকে নারুলী যাওয়ার জন্য রিকশয় তুলে দিয়েছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর থেকে স্ত্রীর ফোন বন্ধ পাচ্ছে বলে সে উল্লেখ করে। পরদিন রবিবার সকালে আসাদুল তার মেয়ের সন্ধান চেয়ে  শহরে মাইকিং করার ব্যবস্থা করেন এবং সদর থানায় জিডি করতে গেলে বনানীতে হোটেলে মা এবং সন্তানের লাশ উদ্ধারের খবর পান।

বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম বলেন, রাতে যে কোন সময় আজিজুল তার স্ত্রী ও সন্তানকে গলা কেটে হত্যার পর লাশ বস্তাবন্দী করে কক্ষের বাথরুমে রাখে এবং ছেলের মাথা বিচ্ছিন্ন করে সকালে শহরের চেলোপাড়ায় করতোয়া নদীতে রেল ব্রিজের নিচে ফেলে দেয়। পুলিশের একটি দল মাথা উদ্ধারের জন্য আজিজুলকে সাথে নিয়ে নদীতে তল্লাশি শুরু করে। পরে শিশুটির মস্তক উদ্ধারের জন্য রাজশাহী থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল আনা হয় এবং তারা সন্ধ্যা ৬টা থেকে সন্ধ্য সাড়ে ৭টা পর্যন্ত শহরের রেল ব্রিজের আশেপাশে করতোয়া নদীতে উদ্ধার অভিযান চালায়। সর্বশেষ আজকের মত অভিযান স্থগিত করা হয় এবং কাল রোববার সকাল থেকে এই অভিযান আবার শুরু হবে বলে তিনি জানান।

তিনি আরো বলেন, আবাসিক হেটেলের ওই  কক্ষ থেকে হত্যার কাজে ব্যবহৃত একটি রাম দা এবং একটি চাকু উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে আজিজুল হক পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তার স্ত্রী-সন্তানকে হত্যা করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আজিজুল হক বলেছে, দাম্পত্য কলহের কারণে সে স্ত্রী সন্তানকে হত্যা করেছে। এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS