স্টাফ রিপোর্টার : গত কয়েক বছর ধরেই কোরবানির জন্য দেশি গরুর চাহিদা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাই এবারও বগুড়ার খামারিরা দেশি জাতের গরু প্রতিপালন করে ভালো লাভের আশা করছেন। তবে এ বছর গো-খাদ্যের দামসহ সব কিছুর খরচ বাড়ায় ন্যায্য দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
বগুড়া প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার কোরবানির জন্য জেলার মোট ৪৮ হাজার ৪৫৩ জন খামারি ৭ লাখ ৩৪ হাজার ৪১৫টি পশু প্রস্তুত করেছেন। চলতি বছর কোরবানির পশুর চাহিদা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৫ হাজার ২৬০টি। চাহিদার বিপরীতে পশু উদ্বৃত্ত থাকবে ২৯ হাজার ১৫৫টি। কোরবানির জন্য প্রস্তুতকৃত পশুর মধ্যে গরু ও মহিষ রয়েছে ২ লাখ ৭২ হাজার ৩০৭টি এবং ছাগল ও ভেড়া রয়েছে ৪ লাখ ৬২ হাজার ১০৮টি।
বগুড়া সদরের শ্যামবাড়িয়া এলাকার খামারি মিরাজ হোসেন বলেন, গত কয়েক বছর ধরেই তিনি কোরবানির জন্য গরু লালন-পালন করে আসছেন। চাহিদার কথা মাথায় রেখে খামারের সবগুলো গরুই দেশি প্রজাতির এবং আকারও ছোট থেকে মাঝারি। ঈদকে সামনে রেখে গরুগুলোকে সবুজ ঘাসসহ নানান পুষ্টিকর খাবার খাওয়াচ্ছেন। তিনি বলেন, তার খামারে মানুষজন আসছেন গরু দেখে দামও করছেন। তবে ক্রেতাদের দাম শুনে প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না। দু’একজন গরু পছন্দ করে দাম ও বায়না মিটিয়ে খামারেই গরু রেখে যাচ্ছেন।
আরেক খামারি পুটু সরকার বলছেন, গত কয়েক বছরে দফায় দফায় গো-খাদ্যসহ পশু চিকিৎসার খরচ বেড়েছে। সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচ বাড়ার বিপরীতে প্রত্যাশিত দাম না পেয়ে হতাশ অনেক খামারি। তিনি দাবি করেন, সারা বছর কষ্ট করে তারা গরু প্রতিপালন করলেও লাভের টাকা চলে যায় দালালের পকেটে। তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় এই ঈদে কোরবানি দাতাদের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেশি দামে গরু কিনতে হবে।
গরু প্রতিপালনকারী সাজু মিয়া বলছেন, কোরবানির ৩/৪ মাস আগে প্রতিপালনের জন্য গরু কিনতে গিয়ে ছোট গরু প্রতিটি ১০/১২ হাজার এবং বড় গরুতে ১২/১৫ হাজার টাকা বেশি পড়েছে। মূলত গত এক বছরে গরুর মাংসের দাম যেভাবে বেড়েছে সেই সিন্ডিকেটের কারণেই এবার কোরবানির পশুর দাম বেশি হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
খামারিরা আরও বলছেন, প্রতিবছর গো-খাদ্যের দাম পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। বিশেষ করে গত এক বছরের ব্যবধানে পশুখাদ্য-ভুসি, ধানের কুড়া, খৈল, খড়, ঘাসসহ অন্যান্য খাদ্যের দাম বেড়েছে। এতে প্রতি গরুতে খরচ বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। গত বছর ১শ’ কেজি ওজনের একটি গরু প্রস্তুত করতে যে টাকা খরচ হয়েছিল এবার তা বেড়েছে, ফলে গত বছর কোরবানির পশুর হাটগুলোতে একই ওজনের গরু যে দামে বেচাকেনা হয় এবার তা স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে।
এদিকে গরু ব্যবসায়ী মো. শফিকুল বলছেন, এখন পর্যন্ত বগুড়ায় কোরবানির পশুর হাট জমে উঠেনি। যাদের বাড়িতে গরু রাখার জায়গা রয়েছে তারা শখ করে কোরবানির জন্য পশু কিনছেন। এছাড়াও খামার ঘুরে ঘুরে গরু দেখে দর দাম করছেন, অনেকে খামারেই গরু কিনেও রাখছেন। দামের ব্যাপারে জানতে চাইলে এই ব্যবসায়ী বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার বিভিন্ন আকারের গরু প্রতি ১৫/২০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেশি দামে পড়তে পারে।
আরেক ব্যবসায়ী খোরশেদ মিয়া বলেন, এবার কোরবানির জন্য পর্যাপ্ত পশু প্রস্তুত রয়েছে। বাণিজ্যিক খামারের পাশাপাশি লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা তাদের বাড়িতে গরু প্রতিপালন করেন। লাভজনক হওয়ায় এর পরিমাণ বেড়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় গো-খাদ্যসহ পশু প্রতিপালনে সবকিছুর দাম বাড়ায় কোরবানি দাতাদের এবার বাড়তি টাকায় পশু কিনতে হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।