কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি : জয়পুরহাটে ব্যবসায়ীরা বেশি লাভের আশায় জোটবদ্ধ হয়ে ধান কিনছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কম দামে ধান কিনে মিল-চাতাল মালিকরা সেই ধান থেকে চাল তৈরি করে সরকার নির্ধারিত দামে খাদ্যগুদামে সরবরাহ করে মোটা অঙ্কের লাভ করবেন বলে শঙ্কা কৃষকদের। আবার স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বাহিরের কোন মহাজনদের হাটে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভিন্ন কথা। ধান ভেজা বলে কম দামে বেচাকেনা হচ্ছে। রোদ উঠলেই দাম বেড়ে যাবে। আর বাজার সবার জন্য উন্মুক্ত। যে কেউ বাজার থেকে ধান কিনতে পারেন। মিল-চাতাল মালিক, ফরিয়া ও মহাজনরা বাজারে বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে কৃষকদের উৎপাদিত ধান অনেক কম দামে কিনছেন।
মাড়াইয়ের পর কৃষকরা বাজারে ধান নিয়ে এসে ব্যবসায়ীদের ফাঁদে পা দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করে অনেকেই বিক্রি করতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন। ধান বিক্রি করে চাষিরা লোকসান গুণলেও কৌশলে লাভবান হচ্ছেন এলাকার মিল-চাতাল মালিক, ফরিয়া ও মহাজনরা। কম দামে ধান কিনে অল্প দিনেই বেশি লাভ করছেন তারা।
গত মঙ্গলবার জেলার বৃহৎ ধানের বাজার পাঁচশিরা, পুনট ও ইটাখোলা হাটে কৃষকদের জিম্মি করে ব্যবসায়ীরা মোটা জাতের মামুন ও স্বর্ণা-৫ ধান ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা এবং চিকন কাটারি জাতের ১০৫০ থেকে ১১০০ টাকা (৪০ কেজির) মণ দরে কিনছেন। এতে প্রতি কেজি মোটা ধান ১৭-১৮ টাকা এবং চিকন ধান ২৬-২৭ টাকা দরে বিক্রি করছেন কৃষকরা।
অথচ প্রতি কেজি ধানের সরকার নির্ধারিত মূল্য ৩২ টাকা আর চালের মূল্য ৪৫ টাকা ঘোষণা করা হয়েছে। ৪০ কেজি ধান থেকে চাল হয় ৩০ কেজি। সে অনুপাতে ৩০ কেজি চালের সরকারি দাম আসে ১৩৫০ টাকা। চাতাল ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার পর চাল বিক্রি করে লাভ করবেন ৬৫০ টাকা।
কৃষকদের অভিযোগ, মিল-চাতাল মালিকরা জোটবদ্ধ হয়ে বেশি লাভের আশায় কম দামে ধান কেনার জন্য বাজারে মাঝে-মধ্যে ধান কেনা বন্ধ রাখেন। যখন বাজারে ধানের আমদানি বেশি হয়, তখন ব্যবসায়ীরা গত বুধবার চাহিদা কমে দেয়। কম দামে বেশি পরিমাণ ধান কেনার জন্য ব্যবসায়ীরা এসব নাটক করেন। শ্রমিক বিদায়সহ সেচের টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হয়ে কম দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে ধান।
ভুক্তভোগী কৃষকরা উৎপাদিত ধানের ন্যায্য দাম না পেয়ে দিনের পর দিন লোকসান গুণলেও অল্প সময়ে মোটা অঙ্কের লাভ গুণছেন মধ্যে সত্ত্বভোগী ব্যবসায়ীরা। জেলা খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জয়পুরহাটের পাঁচটি উপজেলার খাদ্যগুদামগুলোতে এবার সরকার নিদ্ধারিত ৩২ টাকা কেজি দরে ৬ হাজার ৬৫৭ মেট্রিকটন ধান এবং সরকারের সাথে চুক্তিবদ্ধ মিল-চাতাল মালিকদের কাছ থেকে ২১ হাজার ৫৯৭ মেট্রিকটন চাল কিনবেন।
স্থানীয় মিলারদের নামে ইতমধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং কেনা শুরু হয়েছে। বরাদ্দ পেয়ে জেলার বিভিন্ন হাট-বাজার থেকে ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে যে যার মতো করে কৌশলে ধান কিনছেন। আবওহাওয়ার কারণে তারা এমন কৌশল চাষিদের ওপর প্রয়োগ করছেন।
ক্ষেতলালের মুন্দাইল গ্রামের কৃষক শাহিন বলেন, ‘ধান বিক্রি করতে এসে যে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে, লাভতো দূরের কথা, মোটা অঙ্কের লোকসান গুণতে হচ্ছে। যা দাম বাড়তো, আবওহাওয়ার সাথে ব্যবসায়ীদের কারণেই সেটা সম্ভব হচ্ছে না। এবার বিঘা প্রতি উৎপাদন খরচ হয়েছে ১৬ হাজার টাকা জোটবদ্ধ হয়ে ধান কেনার কথা অস্বীকার করেছেন পাঁচশিরা বাজারের মা চাউল-কলের স্বত্বাধিকারি মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, আবওহাওয়াজনিত কারণে ধান ভেজা হওয়ায় গত সপ্তাহের চেয়ে বর্তমানে মণে এক থেকে দেড়শ’ টাকা দাম কমে গেছে। রোদ উঠলেই ধানের দাম বেড়ে যাবে। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা মিথ্যা, বাজার সবার জন্য উন্মুক্ত। যে কেউ এসে ধান কিনতে পারবেন।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কামাল হোসেন বলেন, এ জেলার কৃষকরা চিকন জাতের ধান চাষ করেন। সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজারে দাম বেশি হওয়ায় তারা গুদামে ধান দিতে চান না। ফলে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হচ্ছে না। তবে আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এবার শতভাগ চাল সংগ্রহ হবে।
জেলা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা রতন কুমার রায় বলেন, ধানের দাম নিয়ে বিভিন্ন কথাই শুনতে পাচ্ছি। সরকার ধান-চালের যে দর বেঁধে দিয়েছেন, সে অনুপাতে বিক্রি করতে পারলে কৃষকরা লাভবান হবেন। ধানের বাজার এতো কম হওয়ার কথা নয়। ধানের বাজারমূল্য কম হওয়ার পেছনে কোন রহস্য আছে কিনা তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।