বগুড়ায় জোড়া খুনের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হোসেন যা বলেন
স্টাফ রিপোর্টার : আওয়ামী লীগ নেতা সার্জিল আহমেদ টিপু আমাকে পিস্তল দিয়ে গুলি করে। গুলিটি আমার বাম পায়ে হাঁটুর নিচে লেগেছে। গুলিবিদ্ধ হলেও আমি পালিয়ে জীবন রক্ষা করি। কিন্তু রক্ষা করতে পারিনি আমার দুই বন্ধু শরিফ ও রুমনকে। টিপু ও তার লোকজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে শরিফ ও রুমনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে বীরদর্পে চলে যায়।’ বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের বিছানায় চিকিৎসাধীন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হোসাইন ওরফে হোসেন গতকাল এভাবেই তার ওপর হামলা ও জোড়া হত্যাকান্ডের বর্ননা দেন।
গত ১৭ জুন ঈদের দিন রাত সাড়ে ১২ টার দিকে বগুড়া শহরের নিশিন্দারা চকরপাড়ায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয় শরিফ ও রুমনকে। এ সময় হোসেনকেও গুলি করা হলে তিনি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পালিয়ে জীবন রক্ষা করেন। হাসপাতালের বিছানায় এখনও কাতরাচ্ছেন হোসেন। চোখে-মুখে তার আতংকের ছাপ। ভয়ে চুপসে গেছেন তিনি। এখনও একটি গুলি তার বাম পায়ের হাঁটুর কাছে ভিতরে বিদ্ধ হয়ে আছে। এ জন্য তার পায়ে ব্যথা হচ্ছে। সেদিন রাতে চেখের সামনে সিনেমা স্টাইলে গুলি ও তার দুই বন্ধু শরিফ ও রুমনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা বর্নণা করতেই ভয়ে আঁতকে উঠছেন হোসেন। তিনি বলেন, তিনি এবং তার পরিবার তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত। কেননা খুনের ঘটনায় জড়িত সবাই প্রভাবশালী। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তারা সেখানে গুলি ছোঁড়ে এবং জোড়া হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। যে কারণে নিজের ও পরিবারে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হোসেন।
প্রত্যক্ষদর্শী হোসেন আর জানান, শহরের হাকির মোড়ে একটি একমুখি সংস্কারকৃত রাস্তায় সার্জিল আহমেদ টিপুর একটি প্রাইভেট কারের সাথে একটি মোটর সাইকেলের ধাক্কা লাগাকে কেন্দ্র করে বিরোধ বাঁধে। এই বিরোধের জের ধরে ঈদের দিন রাত সাড়ে ১২ টার দিকে টিপু, কাউন্সিলর হিমু ও তাদের লোকজন নিশিন্দারা চকরপাড়ায় এসে ১০-১২ রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে। এ সময় টিপু পিস্তল দিয়ে তার বাম পায়ের হাঁটুর কাছে গুলি করে। সেইসাথে হামলাকারীরা তার বন্ধু রুমন ও শরিফ শেখকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।
গুলিবিদ্ধ হোসাইন ওরফে হোসেন আরও জানান, টিপুর প্রাইভেট কারে মোটর সাইকেলে ধাক্কার ঘটনা সম্পর্কে তারা কিছু জানতেন না। মূলত: কিশোর আদিত্যের মোটর সাইকেলের সাথে ওই প্রাইভেট কারের ধাক্কা লেগেছিল। তারা আদিত্যকে খুঁজতে এসে না পেয়ে তাদের ওপর হামলা করে। এই হামলায় জোড়া খুন করা হয় শরিফ ও রুমনকে। এ ছাড়া গুলি করা হয় তাকেও।
গুলিবিদ্ধ হোসাইন বলেন, পিস্তল দিয়ে তাকে লক্ষ্য করে ৪-৫ রাউন্ড গুলি করা হয়। কিন্তু এ সময় তিনি সাপের মত করে এঁকে-বেঁকে দৌড় দেন। এতে সব গুলি তাকে লাগেনি। তবে একটি গুলি তার পায়ে লাগলেও তা এফোঁড়-ওপোঁড় হয়ে বের হয়নি। গুলিটি বাম হাঁটুর সামান্য নিচে বিদ্ধ হয়ে ভিতরে রগের মধ্যে আটকে গেছে। এক্সরে করে গুলির অবস্থান সম্পর্কে চিকিৎসকগণ নিশ্চিত হয়েছেন।
এ ব্যাপারে শজিমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা: মো: আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, হোসাইন আশংকামুক্ত থাকলেও গুলিটি তার হাঁটুর নিচে ভিতরে বিদ্ধ হয়ে আটকে আছে। তবে গুলিটি বের করা একটু জটিল। তাই এখনই সেখানে অস্ত্রোপচার করা হচ্ছেনা। পরবর্তীকে অস্ত্রোপচার করা হবে। এ অবস্থায় গুলিটি ভিতরে থাকলেও কোন সমস্যা হবে না বলে তিনি জানান।
অপরদিকে, বহুল আলোচিত এই জোড়া খুনের মামলার প্রধান আসামি বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ কবির আহমেদ মিঠু ও ছাত্রলীগ নেতা রিফাতসহ ৪ জন ধরা পড়লেও মামলার অন্যান্য আসামি এখনও পলাতক। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান আসামি বগুড়া জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সার্জিল আহমেদ টিপুও লাপাত্তা।
এ ব্যাপারে সদর থানার ওসি মো: সাইহান ওলিউল্লাহ বলেন, পুলিশের ধারণা টিপু ও তার সহযোগীরা এখনও দেশেই আত্মগোপন করে আছে। তবে বিদেশ পালানো রোধে ইমিগ্রেশনে বলা হয়েছে। সেইসাথে সীমান্ডে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, ঈদের দিন ১৭ জুন রাত সাড়ে ১২ টার দিকে বগুড়া শহরের নিশিন্দারা চকরপাড়ায় প্রভাবশালি আওয়ামী লীগ নেতা ও জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সার্জিল আহমেদ টিপুর মেয়ের প্রাইভেট কারে মোটর সাইকেলের ধাক্কা লাগাকে কেন্দ্র করে দুনিয়া সরিয়ে দেয়া হয় শরিফ ও রুমন ওরফে রোমান নামে দুই যুবককে। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে প্রকাশ্যে গুলির পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় শরিফ শেখ ও রুমনকে। কিলিং মিশনে অংশ নেন ২৭-২৮ জন। নেতৃত্ব দেন বগুড়া জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সার্জিল আহমেদ টিপু। এ সময় টিপুর বড় ভাই সৈয়দ কবির আহমেদ মিঠু ও স্থানিয় পৌর কাউন্সিলর বিএনপি নেতা শাহ মো: শাহ মেহেদী হাসান হিমুও উপস্থিত ছিলেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
বগুড়া সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. শাহিনুজ্জামান জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শেখ সৌরভ, ছাত্রলীগ নেতা আজবিন রিফাত ও নাঈম হোসেনকে পুলিশ এবং প্রধান আসামি বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ কবির আহমেদ মিঠুকে র্যাব গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে এই চার আসামি কারাগারে রয়েছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।