ভিডিও

বগুড়ায় ব্যাংকে চুরি ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪, টাকা উদ্ধার

প্রকাশিত: জুন ২৫, ২০২৪, ০৩:৪৯ দুপুর
আপডেট: জুন ২৬, ২০২৪, ০১:৫৩ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

স্টাফ রিপোর্টার: বগুড়ার মাটিডালিতে আইএফআইসি ব্যাংকের উপ-শাখায় সিন্দুক ভেঙ্গে ২৯ লক্ষাধিক টাকা চুরির রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। জেলা পুলিশের অভিযানে ধরা পড়েছে আন্ত:জেলা চোর চক্রের ৪ সদস্য এবং সেইসাথে উদ্ধার করা হয়েছে চুরি যাওয়া টাকার মধ্যে ১০ লাখ ৮০ হাজার ৯শ’৪০ টাকা। উদ্ধার করা হয়েছে চুরির টাকায় কেনা একটি মোটর সাইকেল,সিন্দুক ভাঙ্গার কাজে ব্যবহৃত একটি লোহার তৈরি টায়ার লিভার। গত ৫ দিন ধরে বগুড়া ও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার ও টাকাসহ আলামতগুলো উদ্ধার করা হয়। এই চুরির ঘটনায় ৫ জন অংশ নেয়। চুরির  এক মাস আগে থেকেই তারা ব্যাংকের উপ-শাখা রেকি করে যায়।গতকাল ২৫ জুন বগুড়া পুলিশ অফিসে প্রেসব্রিফিংকালে পুলিশ সুপার ( পদোন্নতি প্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী এই তথ্য জানান।

পুলিশ সুপার বলেন, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি বগুড়া শাখার অধীনে বগুড়া সদরের মাটিডালী বিমান মোড়ে খান কমপ্লেক্স এর ২য় তলায় উপ-শাখা হতে অজ্ঞাতনামা চোরেরা গত ১২ জুন বিকাল ৫ টার পর হতে ১৩ জুন সকাল অনুমান পোনে ১০ টার আগে যে কোন সময় সিন্দুক ভেঙ্গে রক্ষিত সর্বমোট ২৯ লাখ ৪০ হাজার ৬১৮ টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। এই চুরির ঘটনায় থানায় মামলা হয়। এরপর সদর থানার একটি টিম ভিডিও ফুটেজ উদ্ধার করে অত্যন্ত সূক্ষভাবে বিশ্লেষণ, অভিযুক্তদের শারিরিক অবয়ব ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ১৯ জুন হতে অভিযান শুরু করে। ৫ দিন ব্যাপি বগুড়ার সোনাতলা, শিবগঞ্জ ও আদমদিঘী থানা এলাকাসহ ঢাকা মহানগরের দক্ষিণখান থানা এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানের এক পর্যায়ে গত ২৩ জুন অভিযুক্ত মোঃ পাভেল(২৫)কে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী তদন্তে প্রাপ্ত ও ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত অন্যান্য অভিযুক্ত বিপ্লব সরকার মিথুন ওরফে মিঠু (২৮) ও বিমল রাজভর (৩০)কে এবং পরের দিন ২৪ জুন ঢাকার দক্ষিণখান থানা এলাকা হতে অভিযুক্ত  মূলহোতা জাহিদুল ইসলাম (২৯)কে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, সোনাতলা উপজেলার দক্ষিণ আটকরিয়া গ্রামের মৃত সাইফুল ইসলাম ছেলে পাভেল,আদমদিঘী উপজেলার ভালশন কুন্ডুপাড়ার মৃত বিপুল চন্দ্র সরকারের ছেলে  বিপ্লব সরকার মিথুন ওরফে মিঠু (২৮), গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার সিংড়িয়া গ্রামের মৃত ফুল কিশোর রাজভরের ছেলে বিমল রাজভর (৩০) ও বগুড়ার বড় টেংড়া  হারবালা আদর্শ গ্রামের মৃত ফারাজ মুন্সির ছেলে জাহিদুল ইসলাম (২৯)।

চুরি হওয়া টাকার মধ্যে অভিযুক্ত পাভেলের বসতবাড়ি হতে ১ লাখ ১ হাজার ৪৭০ টাকা,অভিযুক্ত বিমল রাজভরের শশুর হতে ২ লাখ ৯৩ হাজার ২২০ টাকা,অভিযুক্ত বিপ্লব সরকার মিথুন ওরফে মিতু (২৮) এর বাড়ি হতে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৯৫০ টাকা এবং অভিযুক্ত জাহিদুল দুল ইসলাম (২৯) এর বাড়ি হতে হতে ৫ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। সেইসাথে অভিযুক্ত জাহিদুল ইসলাম (২৯) এর নিকটে থাকা চুরির অর্থ দিয়ে কেনা একটি লাল রং এর মোটর সাইকেল জব্দ করা হয়। সে মোটর সাইকেলটি ১ লাখ টাকায় কিনেছিল। পরে জাহিদুল ইসলামকে আরও জিজ্ঞাসাবাদে তার দেখানো মতে চুরির কাজে ব্যবহৃত ১টি লোহার তৈরি টায়ার লিভার  (সিন্দুক ও তালা ভাঙ্গার কাজে ব্যবহৃত) উদ্ধার করা হয়। টায়ার লিভারটি মাটিডালী বিমান মোড,খান কমপ্লেক্স (২য় তলায় আইএফআইসি ব্যাংক পি.এলসি, উপ-শাখার ভবনের পেছনের জঙ্গল হতে উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশ সুপার আরও বলেন,বগুড়া সদর থানার চৌকষ টিম তথা প্রযুক্তির সর্বোত্তম ও সুক্ষন বিশ্লেষনের মাধ্যমে অতি অল্প সময়ের মধ্যে ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত চোরদের ওই গ্রুপকে সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। ওই গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলো পেশাদার চোর চক্রের সক্রিয় সদস্য অভিযুক্ত জাহিদুল ইসলাম। 

যে ভাবে চুরি হয়: পুলিশ সুপার বলেন,অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, ঘটনার দিন গত ১২ জুন দিবাগত রাত সোয়া ১২ টার দিকে ধৃত সকল অভিযুক্ত ও তদন্তে প্রান্ত পলাতক অপর অভিযুক্তরা পৃথক পৃথক ভাবে ঘটনাস্থলের অদুরে মাটিডালী ব্রিজের নিকট পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী একত্রিত হয়। এরপর জাহিদুলের নির্দেশে অভিযুক্ত বিমল রাজতর ও অভিযুক্ত রাকিব (ছদ্মনাম) আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি, উপ শাখার বিল্ডিং এর পেছন দিয়ে এসে উক্ত বিল্ডিংটির আশপাশ সতর্কতার সাথে রেকি করে অপেক্ষমান অপর অভিযুক্তদের ক্লিয়ারেন্স দেয়। এরপর অভিযুক্ত জাহিদুলের সাথে থাকা একটি টায়ার লিভারসহ অভিযুক্ত বিপ্লব সরকার মিথুন ওরফে মিঠু ও অভিযুক্ত পাভেল আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি, উপ- শাখার বিল্ডিং এর পেছনে যায়। এরপর পূর্বের পরিকল্পনা অনুসারে অভিযুক্ত জাহিদুল প্রথমে পার্শ্ববর্তী বহুতল ভবনের মাধ্যমে আইএফআরসি ব্যাংক পিএসসি উপ-শাখার বিল্ডিং এর উপরে উঠে এবং অভিযুক্ত জাহিদুল এর সহায়তায় অভিযুক্ত  বিমল রাজভরও উক্ত বিল্ডিং এ প্রবেশ করে। এরপর রাত সোয়া ২ টার দিকে অভিযুক্ত জাহিদুল ও বিমল তাদের চুরির কাজ শুরু করে।এ সময় অপর ৩ জন বিল্ডিং এর আশেপাশে সতর্ক প্রহরায় থাকে। অভিযুক্ত জাহিদুল ও অভিযুক্ত বিমল নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে মুখে মাস্ক ও  পলিথিন দিয়ে নিজেদের মাথা ঢেকে ফেলার কৌশল অবলম্বন করে এবং ব্যাংকের সকল সিসি ক্যামেরা কাগজ ও টিস্যু পেপার দিয়ে আবৃত করে চুরি করা শুরু করে। অন্যান্য সকল অভিযুক্তদের সহায়তায় অভিযুক্ত জাহিদুল ও অভিযুক্ত বিমল রাত ২টা ২৫ মিনিটের মধ্যে তাদের সাথে থাকা যন্ত্রপাতি যারা সুকৌশলে ব্যাংকটির সিন্দুক (ভোল্ট) ভেঙ্গে সিন্দুকে রক্ষিত সর্বমোট ২৯ লাখ ৪০ হাজার ৬১৮ টাকা চুরি করে। এরপর জাহিদুল ও অভিযুক্ত বিমল ওই ব্যাংকের উপ-শাখার ভিতরে থাকা একটি ময়লা রাখার বস্তার ভেতর সমুদয় টাকা নিয়ে সকল দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

তদন্তেপ্রাপ্ত ধৃত সকল অভিযুক্তরা জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানায় যে,ব্যাংকের উপশাখায় চুরির পূর্বে গত এক মাসে অভিযুক্ত জাহিদুল একাধিকবার উপ-শাখার সামনে এসে রেকি ও চুরির সম্ভাবনা যাচাই করে। উপ-শাখায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল থাকায় তাদের ধারণা হয় তারা এখানে অনায়াসে চুরি করতে পারবে এবং সেই পরিকল্পনা মতে তারা  চুরি সংঘটিত করে। এরপর চুরির টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে আত্মগোপনে চলে যায়। পুলিশ সুপার আরও বলেন, চুরি যাওয়া আরও টাকা উদ্ধার এবং পলাতক আরেক জনকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS