ভিডিও

এরপর আর কাউকে দেওয়া হবে না

 রাসেলস ভাইপার ধরায় ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দিল আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: জুন ২৫, ২০২৪, ০৯:২৩ রাত
আপডেট: জুন ২৬, ২০২৪, ০১:৫৬ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

ফরিদপুর প্রতিনিধি:  ঘোষণা মত জীবিত রাসেলস ভাইপার সাপ ধরায় অবশেষে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দিয়েছে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ।

সোমবার রাতে সদর উপজেলার আলীয়াবাদ ইউনিয়নের সাইনবোর্ড এলাকার বাসিন্দা মনোরুদ্দিন খানের ছেলে কৃষক রেজাউল খানকে পুরস্কার দেওয়া হয় বলে জানান ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মো. ইশতিয়াক আরিফ।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “পুরস্কারের ঘোষণা প্রত্যাহারের আগেই জীবিত সাপ ধরে আনায় রেজাউলকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। ঘোষণা মত তাকে ৫০ হাজার টাকাই দেওয়া হয়েছে।”

“তবে যেহেতু এই ঘোষণা বন্যপ্রাণী আইনের পরিপন্থি তাই সেটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। কাউকে জীবিত সাপ ধরতে বা মারতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এরপর আর কাউকে পুরস্কার দেওয়া হবে না।”

ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “সাধারণ মানুষের জীবনের কথা চিন্তা করে এ ঘোষণা দেওয়া হয়ছিল।”

এদিকে পুরস্কার পেয়ে খুশি রেজাউল করিম। তিনি বলেন, “জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাপটি ধরেছিলাম। পুরস্কার পেয়ে খুশি হয়েছি। জীবিত সাপ বনবিভাগকে দিয়ে দিয়েছি।”

ফরিদপুরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ গোলাম কুদ্দুস ভ‚ঁইয়া বলেন, “তিনটি রাসেলস ভাইপারের বাচ্চা আমাদের এখানে জমা দিয়েছেন তিন ব্যক্তি। সাপগুলোকে খুলনায় পাঠানো হয়েছে সংরক্ষণের জন্য।”

এ ছাড়া সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে এবং সাপ থেকে বাঁচতে বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে বন কর্মকর্তা বলেন, “কোনো বন্যপ্রাণী হত্যা করা অপরাধ। শুধু বিষধর সাপই নয়, কোনো বন্যপ্রাণী মারা বা আটক করা যাবে না। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে এগুলো বাঁচিয়ে রাখতে হবে।”

বিগত বেশ কিছুদিন ধরেই ফরিদপুর, রাজবাড়ী, রাজশাহী, মানিকগঞ্জসহ পদ্মা অববাহিকায় চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপার সাপের উপদ্রব বেড়েছে। ফরিদপুর সদর, চরভদ্রাসন ও সদরপুর উপজেলার চরাঞ্চলের ১০টি ইউনিয়নে সাপের কামড়ে কয়েকজনের প্রাণহানি হয়েছে, চিকিৎসা নিয়ে সুস্থও হয়েছেন অনেকে। মানুষের মধ্যে এই সাপ নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

এই অবস্থার মধ্যেই বৃহস্পতিবার বিকালে শহরের রাসেল স্কয়ারে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এক সভায় সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফ ‘মানুষের জীবন রক্ষার্থে’ এই রাসেলস ভাইপার মারলে অর্ধলক্ষ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন।

এ সময় তার পাশে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হকও ছিলেন। দুজন তাদের ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে ‘সাপ মারা ব্যক্তিদের’ এই পুরস্কারের ঘোষণা দেন।

কিন্তু পরদিন শুক্রবারই তারা তাদের ঘোষণা পাল্টে বলেন, মৃত নয়, জীবিত সাপ ধরতে পারলেই পুরস্কার মিলবে।

শনিবার সদর উপজেলার আলীয়াবাদ ইউনিয়নের সাইনবোর্ড এলাকার বাসিন্দা মনোরুদ্দিন খানের ছেলে কৃষক রেজাউল খান একটি জীবিত সাপ ধরেন। পরে রাত ৮টার দিকে সাপটি নিয়ে তিনি ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে আসেন।

তখন ফরিদপুর পৌরসভার স্থানীয় একজন কাউন্সিলর তাকে সাপটি বনবিভাগের কাছে জমা দিয়ে প্রাপ্তিস্বীকারপত্র নিয়ে আওয়ামী লীগ অফিসে আসতে বলেন। কিন্তু বনবিভাগ প্রাপ্তিস্বীকারপত্র দিতে রাজি হয়নি। বরং তিনজন জীবিত সাপ ধরে নিয়ে আসায় ‘বিপদে পড়েন’ বনবিভাগের কর্মকর্তারা।

ফরিদপুরের সাপ-কান্ডের এই ঘটনা সারাদেশেই আলোচনা তৈরি করে। এর মধ্যে সাপ ধরা বা মারার জন্য কাউকে পুরস্কার দেওয়া হবে না- এই মর্মে রোববার দুপুরে ফেইসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক।

এতে তিনি লিখেছেন, “বর্তমানে রাসেলস ভাইপার একটি আলোচিত বিষয়, পাশাপাশি জনগণের জন্য এটি হুমকিস্বরূপ। এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক বিধায়, যেকোনো পুরস্কার বা কৌতুহলবশত এই সাপ নিয়ে অতি উৎসাহিত হবেন না।”

জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “জীবিত বা মৃত রাসেলস ভাইপাপের জন্য কোনো পুরস্কার নেই।”

কিন্তু যেহেতু ঘোষণা প্রত্যাহারের আগেই কৃষক রেজাউল জীবিত সাপ ধরে নিয়ে এসেছেন এ কারণে সোমবার রাতে তাকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে বলে জানান ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।

এদিকে ফরিদপুরের সিভিল সার্জন মো. ছিদ্দীকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, তিন মাসে পাঁচ ব্যক্তিকে সাপে কামড়িয়েছে। এর মধ্যে চারজনকে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য নেওয়া হলে মারা যান। জেলার হাসপাতালে একজন মারা গেছেন।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, মানুষের মাঝে রাসেলস ভাইপারের আতঙ্ক রয়েছে। সাপের কামড়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। শুধু আতঙ্ক, তাছাড়া এখন পর্যন্ত সাপের কামড়ে খুব বেশি মানুষ আহত বা মারা গেছে এমন নয়।

“চরাঞ্চলের চাষিদের মাঝে গামবুট দেওয়া হবে। এ ছাড়া স্পিডবোর্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে, সাপে কাটা রোগীদের দ্রæত হাসপাতালে আনার জন্য। সচেতনতার জন্য মাইকিংসহ বিবিধ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS