সারিয়াকান্দি ও ধুনট (বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও ধুনটে যমুনা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। এই দুই উপজেলায় যমুনা নদীর পানি এক সেন্টিমিটার করে কমেছে। তবে পানি কমলেও বাড়ছে বন্যার্তদের দুর্ভোগ। দুই উপজেলাতেই পানির বিপৎসীমা ১৬.২৫ মিটার।
আমাদের সারিয়াকান্দি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, এই উপজেলায় যমুনা নদীর পানির উচ্চতা আজ শনিবার (৬ জুলাই) সকাল ৬টা ও ৯টায় ছিল ১৬.৮৪ মিটার। এরপর পানি এক সেন্টিমিটার কমে দুপুর ১২টায় পানির উচ্চতা দাঁড়ায় ১৬.৮৩ মিটার। অর্থাৎ পানি এখনও বিপৎসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে পানি কমলেও বানভাসী মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে।
উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলার ৮২টি গ্রামের ১১৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে ৬৮ হাজার ৪শ’ মানুষ পানিবন্দী হয়েছেন। উপজেলার ৬ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে আক্রান্ত হয়েছে এবং ৮ হাজারের বেশি কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। উপজেলার ৪৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিবন্দী হয়েছে।
ফলে তারা এখন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ, বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র ও মুজিব কিল্লাসহ বিভিন্ন উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৌহিদুর রহমান বলেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে বানভাসী মানুষদের ত্রাণ সহায়তা দেওয়া অব্যাহত রয়েছে। বন্যা পরবর্তী মানুষের পুনর্বাসন করতে যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে। আশা করছি এ উপজেলায় কাউকেই না খেয়ে থাকতে হবে না।
এদিকে আজ শনিবার (৬ জুলাই) উপজেলার চন্দবাইশা ইউনিয়নের ঘুঘুমারি, রৌহাদহ এবং কামালপুর ইউনিয়নের তালতলায় নদী ভাঙন ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করেছেন বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী। উপজেলার মোট ১৯০ জনের মাঝে এ ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করা হয়।
আমাদের ধুনট প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নে যমুনা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। ফলে নদীর বাঁধের পূর্বদিকের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এতে যমুনা তীরের বানভাসী মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসছে। আজ শনিবার (৬ জুলাই) দুপুর থেকে যমুনা নদীর পানি এক সেন্টি মিটার কমে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বিপৎসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ধীরে ধীরে যমুনা নদীর পানি কমছে। বর্তমানে পানি ১৬.৮৩ মিটার সমতায় প্রবাহিত হচ্ছে। ২ জুলাই যমুনা নদীর বাঁধের পূর্বদিকে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। পানি বৃদ্ধির ফলে ৩ জুলাই রাতে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে। একপর্যায়ে শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৮৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
বাঁধের অভ্যন্তরে প্রতিটি বাড়ির চারপাশে পানি থৈ থৈ করছে। এরমধ্যে দুই শতাধিক পরিবারের বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। এসব পরিবারের কেউ ঘরের ভেতর মাচা তৈরি করে অবস্থান করছেন। আবার কেউ বাড়িঘর ছেড়ে পরিবার-পরিজন ও গবাদিপশু নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। পানিতে তলিয়ে গেছে চর এলাকার প্রায় ১শ’ হেক্টর জমির ফসল।
এদিকে উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নে বন্যা কবলিত ১৩০টি পরিবারের মাঝে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। আজ শনিবার (৬ জুলাই) বিকেলে উপজেলার যমুনা নদীর শহড়াবাড়ি, বানিয়াজান ও কৈয়াগাড়ি এলাকার বন্যার্ত মানুষের মাঝে এসব খাদ্য সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সজীব শাহরীন।
সোনাতলা প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, এ উপজেলাতেও গত ২৪ ঘন্টায় যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পায়নি। তবে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় পানি বিপৎসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। এতে আর কোন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। বন্যার কারণে ছয়টি প্রাথমিক, একটি মাধ্যমিক ও একটি মাদ্রাসার পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।