নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার রাউতাড়া এলাকার ৭০ বছরের আব্দুল হামিদ ও তার ছোট ভাই স্থানীয় একটি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক আব্দুস ছামাদ (৬৫)। দুই ভাই সরকার থেকে পত্তন সূত্রে পেয়েছিল ৪৮ শতাংশ খাস জমি। সম্প্রতি পত্তনের সেই পুকুরটি দখলে নেওয়ার পাঁয়তারা করছে মো. ছনি নামের স্থানীয় ভাবিচা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
জোরপূর্বক পুকুরটির চারপাশে জিআই তারের বেড়া দিয়ে ঘিরে রেখেছেন তিনি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ছনি প্রভাবশালী হওয়ার কারণে ক্ষমতার জোরে পত্তন পাওয়া পুকুর ও পুকুর পাড়ের জায়গা দখলে নিতে চায়। আর দিনের পরদিন বিভিন্ন দপ্তরে ধর্ণা দিয়েও সমাধান না পাওয়ার অভিযোগ তাদের। উল্টো নানাভাবে হুমকি-ধামকির শিকার হচ্ছেন তারা।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার রাউতাড়া মৌজার ১৫০ দাগে ৪৮শতাংশ খাস জমি আব্দুল হামিদ ও আব্দুস ছামাদ গংদের বসতবাড়ির পাশে থাকায় তাদের সুবিধার্থে সরকারের কাছে আবেদন করেন তাদের বাবা মৃত কছির উদ্দিন। সেই মোতাবেক ১৯৭৭ সালে ১১১৬২ দলিল মূলে সরকার তাদেরকে চিরস্থায়ী পত্তন (বা কবিলত রেজিস্ট্রি করে দেন) প্রদান করেন।
পত্তন পাওয়ার পর জমিটির শ্রেণি পরিবর্তন করে পুকুর খনন করেছিলেন। সেই থেকে তারা শান্তিপূর্ণভাবে ভোগ দখল করে আসছে এবং বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে রেখেছিল। কিন্তু হঠাৎ করে গত ৬ জুন রাতের আঁধারে জিআই তারের বেড়া দিয়ে ঘিরে রেখেছে।
এরপর সকালে তারা জানতে পারেন বাঁশের বেড়া ভেঙে দিয়ে জিআই তারের বেড়া দিয়েছেন স্থানীয় শাহজাহান আলীর ছেলে ছনিসহ তাদের লোকজন। এ নিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে পুকুরে প্রবেশে বাধা দিয়ে হুমকি দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ওইদিন বিকেলেই উপজেলা নিবার্হী অফিসার ও উপজেলা সহকারী কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন সুরাহা পায়নি ভুক্তভোগীরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুকুরের চারপাশে জিআই তারের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। যাতে কেউ সেখানে প্রবেশ করতে না পারে। এসময় কথা হয় স্থানীয় মজিবর রহমান, হাফিজুর রহমানসহ বেশ কয়েকজনের সাথে। তারা বলেন, আমরা আমাদের জন্মের পর থেকে দেখে আসছি এই পুকুরটি স্কুল শিক্ষক ছামাদ ও তার ভাই হামিদরা ভোগদখল করে আসছে।
তাদের বাবা মৃত কছির উদ্দিনও ভোগদখল করে আসছিল। তিনি মারা যাবার পর তার ছেলেরা এই পুকুরটি ভোগ দখল করে আসছে। এখন কে কখন বেড়া দিয়েছে আমরা সেটা বলতে পারবো না। তবে সেখানে অভিযুক্ত ছনি উপস্থিত থাকায় মুখ ফুটে কেউ তেমন কিছু বলতে চাচ্ছিল না। একসময় ছনি উপস্থিত সকলকের প্রতি উগ্র আচরণ করেন। এরপর ছনির ভয়ে সবাই চুপ হয়ে যায়।
ভুক্তভোগী স্কুল শিক্ষক আব্দুস ছামাদ বলেন, আমি একজন শিক্ষক তবুও অভিযুক্তরা আমার প্রতি যেভাবে আচরণ করে আর নানাভাবে ভয়ভীতি দেখায় তাতে করে যতটা না ভয় পাই, তার চেয়ে বেশি লজ্জিত হই। ইউএনও এবং এসিল্যান্ড এর কাছে অভিযোগ করেও সুরাহা পাচ্ছি না।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত মো. ছনি বলেন, আমি কারও পুকুর বা জায়গা দখল করিনি। আমি পুকুরে চারপাশে আমাদের জায়গায় তারের বেড়া দিয়ে রাখছি। পুকুরে প্রবেশ করার জন্য হলেও তো প্রতিবেশী হিসেবে কিছু জায়গা উন্মুক্ত করে দিতে হয়। এমন প্রশ্নের কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেননি তিনি। উল্টো তিনি বলেন, পুকুরটি তাদের নয়, তারা জোড় করে দখল করে আছে।
এটা সরকারি খাস জমি আমার জানামতে। আমি তাদের দেওয়া বেড়া বা তাদের কোন কিছু ভাঙচুর করিনি।
নিয়ামতপুর উপজেলা নিবার্হী অফিসার (ইউএনও) ইমতিয়াজ মোরশেদ বলেন, অভিযোগটি দেখেছি। তবে পুকুরের জায়গাটি খাস কিনা বা অভিযোগকারীদের কিনা বিষয়টি জানা নেই।
আমি খোঁজ খবর নিতে এসি ল্যান্ডকে বলেছি। যদি অভিযোগকারীদের পুকুরটি হয় তবে তারা অবশ্যই সু-বিচার পাবেন। দ্রুতই বিষয়টির সুরাহা করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।