স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়ায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চলমান কর্মসূচি পালনকালে আজ শনিবার (৩ আগস্ট) পুলিশের ব্যাপক ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও দফায় দফায় সংঘর্ষে বগুড়া শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিলো। হাজার হাজার আন্দোলনকারীকে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পেরে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানো গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়েছে।
আন্দোলকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল, জুতা, স্যান্ডেল নিক্ষেপ করা ছাড়াও সার্কিট হাউসের ফটক ভাঙচুর, সাতমাথাস্থ ট্রাফিক পুলিশ বক্সে আগুন, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ অর্ধশত আহত হয়েছেন। এর মধ্যে হাসান (২৪) নামের গুলিবিদ্ধ একজন বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বগুড়া শহরের উপকন্ঠে সাবগ্রামের তার বাড়ি।
এছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে আরও ৫ জন গুলিবিদ্ধ ব্যক্তি চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছে। আন্দোলনকারীরা আরও জানিয়েছে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের আদলে চিলিশেল ছুঁড়েছে।
এ চিলিশেলের কারণে আক্রান্ত শিক্ষার্থীরা চোখে অসহ্য যন্ত্রণা অনুভব করে। বিশেষ করে স্কুলের শিশু শিক্ষার্থীদের যন্ত্রণায় ছটফট করতে দেখা গেছে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আজ শনিবার (৩ আগস্ট) বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিতে শহরে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিকেল ৩ টায় আন্দোলনকারীরা সাতমাথায় সমবেত হতে শুরু করে।
শহরের বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে তারা মাথায় লাল কাপড় বেঁধে শহরে আসতে শুরু করে। বগুড়ার ছাত্র আন্দোলনের সর্বকালের সবচেয়ে বেশী ছাত্রীর উপস্থিতি ছিলো লক্ষ্যণীয়। কয়েক হাজার শিক্ষার্থী কবি নজরুল ইসলাম সড়ক দিয়ে শহরে প্রবেশ করে সার্কিট হাউসের দিকে চলে যায়।
স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছিল। হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা সাতমাথায় ঠাঁই না পেয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক বন্ধ করে দিয়ে অবস্থান নেয়। পার্ক রোড, শেরপুর রোড, স্টেশন রোডেও অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। এর আগে শহরের দক্ষিণের শিক্ষার্থীরা জলেশ্বরীতলা এবং উত্তরাংশের শিক্ষার্থীরা করোনেশন ইনস্টিটিউশনে সমবেত হয়ে মিছিল নিয়ে সাতমাথায় প্রবেশ করে।
আজ শনিবার (৩ আগস্ট) বৃষ্টি মাথায় নিয়ে শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা আসায় সাতমাথা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। বিকেল ৪ টার পর পরই শিক্ষার্থীরা জিলা স্কুলের সামনে দিয়ে মিছিল নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিলে পুলিশ জিলা স্কুলে অবস্থান নেয়। বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ সাইহান ওলিউল্লাহসহ পুলিশ সদস্যরা জিলা স্কুলে আটকা পড়ে।
এরপর আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে পানির বোতল, ইট পাটকেল, জুতা স্যান্ডেল নিক্ষেপ করে। এসময় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নবাববাড়ি সড়কস্থ পুলিশ প্লাজার সামনে অবস্থান নেয়। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সাঁজোয়া যান লক্ষ্য করেও ইট পাটকেল ছোঁড়ে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। পুলিশ আন্দোলকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানো গ্যাস নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। এদিকে জলেশ্বরীতলার দিক থেকে আন্দোলনকারীরা আসার সময় পুলিশ বাধা দেয়। আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছুঁড়ে।
এক সময় বিক্ষোভকারীরা বগুড়া সার্কিট হাউসের প্রধান ফটকের কাঁচ ভেঙ্গে ফেলে। পুলিশ তাদের হঁটাতে জলেশ্বরীতলায় রাবার বুলেট ছোঁড়ে। রাবার বুলেটে হাসান নামে এক শিক্ষার্থী আহত হয়ে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ জানান, রাবার বুলেটে একজন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। তিনি আরও জানান, খোঁজ নিয়ে দেখেছেন মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে কোন শিক্ষার্থী ভর্তি হননি।
এদিকে বিক্ষোভকারীরা এক সময় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সামনে নির্মিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভেঙে ফেলে। এরপর জেলা আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান রনির বাণিজ্যিক অফিসের সামনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করতে না পেরে কালি লেপন করে দেয়। জেলা আওয়ামীলীগের দলীয় অফিসের সামনের ম্যুরালও একইভাবে কালি দিয়ে লেপন করে দেয়।
আন্দোলনকারীদের কয়েকজন শহরের সপ্তপদী মার্কেটের ছাদে বিলবোর্ডে উঠে সেখানে লাগানো আওয়ামীলীগ ও যুবলীগ নেতাদের শুভেচ্ছাবাণীর ব্যনার খুলে ফেলে। বিক্ষোভকারীরা শহরের শেরপুর রোড ও গোহাইল রোড়ের মুখে ট্রাফিক পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় কোন ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে ভেতরের আসবাবপত্র পুড়ে ভষ্মীূভূত হয়েছে।
আবার বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ শহরের ঝাউতলা বড়গোলায় অবস্থান নেয়। তারা শহরের উত্তরাংশ থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে বিভিন্ন স্লোগান, ও ইটপাটকেল ছোঁড়ে। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার চেষ্টা করে। এই অংশে দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার আগ পর্যন্ত অনেক শিক্ষার্থী থেকে যায় সাতমাথায়।
তারা আগামীকাল রোববার আবার বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করে। আজ শনিবার (৩ আগস্ট) আন্দোলনকারীরা অন্য সব শ্লোগানের সাথে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের একদফা দাবি জানায়। শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত সাতমাথায় আজ শনিবার (৩ আগস্ট) পুলিশের কাঁদানো গ্যাস ও চিলিশেল থেকে রক্ষা পেতে সাতমাথার প্রায় বিশটি স্থানে আগুন জ্বালিয়ে রাখে।
আগুনের কালো ধোঁয়ায় সাতমাথার আকাশ কালো হয়ে যায়। এদিকে বিক্ষোভ চলাকালে দীপ্ত টেলিভিশন বগুড়া অফিসের স্টাফ রিপোর্টার আবু সাঈদের উপর হামলা করে বিক্ষোভকারীরা। এছাড়াও বিভিন্ন ছবি তুলতে গেলে সাংবাদিকদের লাঞ্ছিত করে তারা।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।