ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের কারণেই দুই যুগ আগে নিষিদ্ধ পলিথিন এখনও বাজারে
স্টাফ রিপোর্টার : নিষিদ্ধ করার প্রায় দুই যুগ পার হলেও পলিথিনের ব্যবহার এখনও কমেনি। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের কারণেই দুই যুগ আগে নিষিদ্ধ করা পলিথিন এখনও বাজারে। ব্যাগ ছাড়া বাজারে আসা ক্রেতাদের সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। পক্ষান্তরে ক্রেতাকে না ফেরাতে পলিথিনের ব্যাগে সদাই দিচ্ছেন বিক্রেতারা। আর এসব কারণেই বাজার থেকে পলিথিন তুলে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে মাছ-মাংসের দোকান সবখানেই এখনও পলিথিনের ব্যবহার চলমান। গত ১ নভেম্বর থেকে চূড়ান্তভাবে পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণার পরও বাজারে পলিথিনের ব্যবহার কমছে না। গত ১ নভেম্বর পরিবেশ, অধিদপ্তর রাজশাহী রাজশাহী বিভাগীয় অফিসের উপ-পরিচালক সাইফুল ইসলাম, জেলা কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক মাহাথীর মোহাম্মাদসহ পরিবেশ অধিদপ্তরে নেতৃবৃন্দ বাজারে অভিযান চালিয়ে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করলেও ব্যবসায়ীদের মাঝে সচেতনতা ফিরেনি।
ফলে আজ শনিবার (২ নভেম্বর)ও বাজারে পলিথিনের ব্যাপক ব্যবহার হয়েছে। আজ শনিবার (২ নভেম্বর) শহরের কাঁচা বাজারগুলোতে গিয়ে দেখো গেছে, প্রতিটি সবজির জন্য বিক্রেতারা পরিমাণ বুঝে আলাদা আলাদা পলিথিন ব্যাগ দিচ্ছেন, ক্রেতারাও তা নিয়ে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীরা বলছেন, পলিথিনের ব্যাগের পরিবর্তে যে ব্যাগ আছে তার দাম পলিথিনের ব্যাগের চেয়ে অনেক বেশি। আবার ক্রেতারাও ব্যাগ সাথে আনেন না। ব্যাগ না থাকায় বিক্রির স্বার্থে তারা পলিথিন ব্যাগ দিচ্ছেন। ক্রেতারা বাজারের জন্য পৃথক ব্যাগ ব্যবহার বাড়ালে পলিথিনের ব্যাগ তারা আর ব্যবহার করবেন না।
এদিকে বাজার করে বাড়ি ফিরছিলেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সামছুল আলম তার হাতে ছিলো পলিথিনের ব্যাগ, নিষিদ্ধ জানার পর তিনি কেন পলিথিনের ব্যাগ নিলেন এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, অনেক দিনের অভ্যাস ব্যাগ ছাড়া বাজারে আসা। তিনি লজ্জা বোধ করে বলেন, আগামীতে তিনি বাড়ি থেকে ব্যাগ নিয়ে বাজার করবেন।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় যেসব বিকল্প পণ্য সামগ্রী ব্যবহারের প্রস্তাব করছে সেগুলো হচ্ছে-প্লাস্টিকের ফাইল ও ফোল্ডারের পরিবর্তে কাগজ বা পরিবেশবান্ধব অন্যান্য সামগ্রীর তৈরি ফাইল ও ফোল্ডার ব্যবহার করা, প্লাস্টিক ব্যাগের পরিবর্তে কটন/জুট ফেব্রিকের ব্যাগ ব্যবহার করা, প্লাস্টিকের পানির বোতলের পরিবর্তে কাঁচের বোতল ও কাঁচের গ্লাস ব্যবহার করা, প্লাস্টিকের ব্যানারের পরিবর্তে কটন ফেব্রিক/জুট ফেব্রিক বা বায়োডিগ্রেডেবল উপাদানে তৈরি ব্যানার ব্যবহার করা, দাওয়াত পত্র, ভিজিটিং কার্ড ও বিভিন্ন ধরনের প্রচারপত্রে প্লাস্টিকের লেমিনেটেড পরিহার করা, বিভিন্ন সভা/সেমিনারে সরবরাহকৃত খাবারের প্যাকেট যেন কাগজের হয়/পরিবেশবান্ধব হয় সেটি নিশ্চিত করা, একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকের প্লেট, গ্লাস, কাপ, কাটলারিসহ সকল ধরনের পণ্য পরিহার করা, প্লাস্টিকের কলমের পরিবর্তে পেনসিল/কাগজের কলম ব্যবহার করা, বার্ষিক প্রতিবেদনসহ সকল ধরনের প্রকাশনায় লেমিনেটেড মোড়ক ও প্লাস্টিকের ব্যবহার পরিহার করা এবং ফুলের তোড়াতে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে।
সরকার এটি করার জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করছে এবং পলিথিন ব্যবহার পরিহার করার ওপর জোর দিচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর বগুড়ার সহকারী পরিচালক মাহাথীর মোহাম্মাদ জানান, ১ নভেম্বর বাজারে অভিযান চালিয়ে বিক্রেতাদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। আজ রোববার থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহ অভিযান পরিচালনা করা হবে। কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পলিথিনের ব্যাগ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন