ভিডিও

বগুড়ার শেরপুরে হাট-বাজারগুলোতে বাড়তি খাজনা আদায়, নির্বিকার প্রশাসন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২৪, ১০:২৮ রাত
আপডেট: সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২৪, ১০:২৮ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়ার শেরপুরে পৌরসভাসহ ১০টি ইউনিয়নের ১৯টি হাট-বাজারে সরকার নির্ধারিত হারের চেয়ে ইজারাদার ও তাদের নিয়োগ করা লোকজনের বিরুদ্ধে ইচ্ছেমত খাজনার নামে জোরপূর্বক বাড়তি খাজনা (টোল) আদায় করার অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটলেও অজ্ঞাত কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় ব্যবসায়ী ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

এছাড়া সরকারি খাজনার (টোল) হার পণ্যপ্রতি বড় ব্যানারে প্রকাশ্যে হাট-বাজারগুলোতে টানানোর নিয়ম থাকলেও এই উপজেলার বেশিরভাগ হাটে সেটি করা হয়নি। সাধারণ মানুষকে অন্ধকারে রেখে ইজারাদার ও তাদের লোকজন নিজেদের ইচ্ছেমাফিক ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের কাছ থেকে খাজনার নামে চাঁদা আদায় করছেন।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার জামাইল ও রানীরহাটে সরেজমিনে দেখা যায়, ৮০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা ধানে নির্ধারিত খাজনা ১৬ল টাকার স্থলে নেওয়া হচ্ছে ২২ টাকা। একইভাবে ৫০ কেজি মাছের জন্য ২০ টাকার স্থলে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা এবং এক ডালি মাছের জন্য ১০ টাকার স্থলে ৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।

এ ব্যাপারে ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হক, আব্দুল আলীম, সোলায়মান আলীসহ একাধিক ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, হাটে আসা ব্যবসায়ী, ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের কাছ থেকেই খাজনা নেওয়া হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না সরকার নির্ধারিত খাজনার হার। এছাড়া সপ্তাহের দু’দিন (হাটবার) খাজনা নেয়ার কথা থাকলেও প্রতিদিনই খাজনার নামে বাড়তি টাকা আদায় করা হচ্ছে।

সবজি ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, ফুলবাড়ী বাজার থেকে এক মণ সবজি কিনলে খাজনা দিতে হয় ৪০ টাকা আর বিক্রেতাকে দিতে হয় ২০ টাকা, যা সরকার নির্ধারিত খাজনার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। চাতাল ব্যবসায়ী গোলাম রব্বানী, আব্দুস সালাম বলেন, শেরপুর আলীয়া মাদ্রাসা এলাকায় বারোদুয়ারি হাটের দিন সকালে ধান বেচাকেনা হয়।

এখানে প্রতিমণ ধানের খাজনা নেওয়া হয় ২৮ থেকে ৩০ টাকা। এছাড়া অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রেও দ্বিগুণ হারে খাজনা নেওয়া হচ্ছে। তাদের দাবিকৃত টাকা দিতে না চাইলে মারধরের শিকার হওয়ার পাশাপাশি হাটে বসতে দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।  তাদের দাবি, হাটে সরকার নির্ধারিত টোল নির্ধারণ করার কোনো চার্ট না থাকায় সে সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই।

তাই খাজনা আদায়কারীদের দাবি অনুযায়ী টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এছাড়া বাড়তি টোলের কোনো রশিদ দেওয়া হয় না বলেও দাবি করেন। জানতে চাইলে জামাইল হাটের ইজারাদারের আদায়কারী বক্স মিয়া বাড়তি টাকা আদায়ের কথা স্বীকার করে বলেন, এই হাট ইজারায় সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি টাকায় ইজারা নেওয়া হয়েছে, তাই সেই টাকাতো তুলতে হবে।

এজন্য একটু বেশি নেওয়া হয়। এছাড়া সরকার নির্ধারিত খাজনার চার্ট বা ব্যানার উন্মুক্ত স্থানে ইজারাদাররা টানায় না, এটি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে টানানোর কথা বলে মন্তব্য করেন তিনি। এদিকে সাধারণ ব্যবসায়ী ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের জিম্মি করে খাজনার নামে জোরপূর্বক চাঁদা আদায়ের ঘটনার প্রতিবাদে মাঠে নেমেছেন ছাত্র-জনতা।

এরইমধ্যে চাঁদাবাজি রুখতে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় সমন্বয়করা। সমন্বয়ক তৌকির আহমেদ বলেন, সরকার নির্ধারিত খাজনার যে রেট রয়েছে, তার বাইরে টাকা আদায় বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে আহবান জানানো হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সুমন জিহাদী বলেন, হাটের ইজারাদারদের বাড়তি টাকা আদায় না করতে সর্তক করা হয়েছে। এছাড়া ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকেও বিষয়টি মনিটরিং করা হচ্ছে। পাশাপাশি অতিরিক্ত টোল না দিতে মাইকিং করাসহ হাটগুলোতে খাজনার চার্ট বা ব্যনার টানিয়ে দেওয়া হয়েছে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS