স্টাফ রিপোর্টার : ৫ সেপ্টেম্বর। ঠিক এক মাস আগে এই দিনে দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এরমধ্য দিয়ে দেশে নতুন করে স্বাধীনতা ফিরে আসে। আর ছাত্র-জনতার অধিকার আদায়ের এই সম্মিলিত লড়াইয়ে তাদের সাথে একই কাতারে দাঁড়িয়েছিল এদেশের শিশু-কিশোররাও।
তারা সম্মিলিতভাবে মানুষের হৃদয়ে বিপ্লবী কম্পন তৈরি করার জন্য কবিতা, গান, পোস্টার, কার্টুন আর গ্রাফিতি এঁকেছেন দেশের প্রতিটি দেয়ালে। এই বিজয়ের মধ্যদিয়ে বিশ্বের বুকে এ দেশের ছাত্র-জনতা আরও এক উদাহরণ তৈরি করেন। এই আন্দোলনের সহিংসতায় প্রায় এক হাজার মানুষ প্রাণ হারান।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময়ে পুরো আন্দোলনকে ঘিরে দেশের প্রতিটি শহরে-গ্রামে গ্রাফিতি এঁকেছেন শিক্ষার্থী ও শিল্পীরা। বগুড়া জিলা স্কুলের একটি দেয়ালে এমন একটি গ্রাফিতি এঁকেছেন শিক্ষার্থীরা। গ্রাফিতিতে আঁকা হয়েছে বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কদের শাহবাগে বিক্ষোভ ও অবস্থান, বাংলা ব্লকেড, রাজু ভাস্কর্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের মিছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একাত্মতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে ঢুকে শিক্ষার্থীদের মারপিট ও বের করে দেওয়া, পুলিশের গুলির সামনে বুক পেতে মৃত্যুকে বরণ করে নেয়া রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ।
আছে আন্দোলনকারীদের হাতে পানি তুলে দিয়ে নিজেই পুলিশের গুলিতে মারা যাওয়া মুগ্ধের করুণ চিত্র, রিকশার ওপরে পড়ে থাকা এক শিক্ষার্থীর মরদেহের চিত্র ও শিশু ফাইয়াজকে হাতে দড়ি বেঁধে তুলে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। পুলিশের সাঁজোয়া যানের ওপর থেকে এক শিক্ষার্থীকে ফেলে দেওয়া, আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে কীভাবে জিম্মি করে আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ানোর মিথ্যে বিবৃতি দেওয়া হয় সেই চিত্রও ঠাঁই পায় গ্রাফিতিতে।
আরও ফুটে উঠেছে গুলি খেয়ে রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন এক যুবক, হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে মুখে-চোখে ও মাথায় লাল কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ করছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। আবার এসব হত্যাকান্ড ঢাকতে ও আন্দোলনকে বেগবান করতে না পারে সেজন্য সারাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয় সেই চিত্রও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সাথে রিকশাচালকের একাত্মতা প্রকাশ করে আন্দোলনকারীদের স্যালুট করছে সেই চিত্রও আছে গ্রাফিতিতে। পুলিশের গুলি উপেক্ষা করে গুলিবিদ্ধ বন্ধুকে টেনে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাচ্ছেন আরেক বন্ধু এমন চিত্রও বাদ যায়নি।
ভাইকে যখন পুলিশ আটক করে নিয়ে যাচ্ছে তখন তার বোন পুলিশ ভ্যানের সামনে নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে দাঁড়িয়ে পড়ার সেই ভাইরাল দৃশ্যও জায়গা পেয়েছে গ্রাফিতিতে। শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের বর্বরোচিত হামলা ও গুলি বর্ষণ এবং হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোঁড়ার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে নিপুণভাবে।
এরপর কাঙ্খিত সেই দিন, যে দিন শিক্ষার্থীদের সাথে রাস্তায় নেমে আসেন লাখ লাখ মানুষ। গণভবনে ও সংসদ ভবনে লাখো মানুষ ব্যারিকেড ভেঙে ঢুকে পড়ার সেই আনন্দঘন মুহূর্ত সাথে বগুড়ার সাতমাথার বীরশ্রেষ্ঠ স্কয়ারে বিজয়ের উল্লাস। এরপর বিজয়ের আনন্দের সাথে দেশজুড়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও থানায় আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা, এমন চিত্রও উঠে এসেছে।
গ্রাফিতিতে ফুটে উঠেছে কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবি আন্দোলনের জুলাই-আগস্টের পুরো চিত্র। যে চিত্রে চোখ বুলালেই দৃশ্যমান হয় বাংলাদেশের ইতিহাসের নতুন এক অধ্যায়।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।