জেলে পরিবারের ১২৮ সদস্যের মানবেতর জীবন যাপন
ফরিদপুর (পাবনা) প্রতিনিধি : ওয়াপদার লিজকৃত খালে মাছ চাষ করতে না পারায় ফরিদপুরের আগপুঙ্গলী এলাকার জেলে পরিবারের ১২৮ সদস্য অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে।
পুঙ্গলী ইউনিয়ন দুঃস্থ মহিলা উন্নয়ন সমিতি লিঃ এর সভাপতি জীবন হলদারের স্ত্রী মুক্তিরানী হলদার পাবনার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও পাবনা জেলা প্রশাসকের কাছে করা আবেদনে উল্লেখ করেন, আগপুঙ্গলী গ্রামের জেলে পরিবারের ১২৮ জন সদস্য পুঙ্গলী ইউনিয়ন দুঃস্থ মহিলা সমিতি গঠন করে আগপুঙ্গলী মৌজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনস্ত আগপুঙ্গলী বাজার হতে নছিমুদ্দিনের বাড়ি পর্যন্ত ওয়াপদার বরপিটের খাল প্রায় ৩৬ বছর যাবত লিজ নিয়ে মাছ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।
বরাবরের মত ১৪৩০ (২০২৩ সাল) সালেও ওয়াপদার সরকারি কোষাগারে লিজ সালামী প্রদান করে রশিদ পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডে জমা দেওয়া হয়। কিন্তু অজানা কারণে পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ড আগপুঙ্গলী দুঃস্থ মহিলা সমিতিকে লিজ না দিয়ে এলাকার ধনী ও প্রভাবশালী মনিরুজ্জামান মনি, মিজানুর রহমান বাবু,মোহাম্মদ আলী ও আবু জাফরকে ১৪৩০ সালের জন্য লিজ প্রদান করেন।
এ ব্যপারে মুক্তি রানী হলদার ২৩/০৭/২৩ তারিখে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড,পাবনা জেলা মৎস কর্মকর্তা, উপজেলা জল মহলের চেয়ারম্যান, উপজেলা মৎস কর্মকর্তা, পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও লিজ গ্রহনকৃত ৪ জনকে বিবাদী করে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে ১১৪৮/২৪ নম্বর রিট পিটিশন দাখিল করে।
গত ফেব্রুয়ারি এ রিট পিটিশনের রায়ে ৬০ দিনের মধ্যে পাবনার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে রিট পিটিশনের বিষয়টি নিস্পত্তি করতে এবং ওই জায়গা আবেদনকারীর শান্তিপুর্ণ দখলে হস্তক্ষেপ না করার জন্য বিবাদিগণকে নির্দেশ দেওয় হয়।
কিন্তু এখনো পর্যন্ত পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয় নাই। এ ছাড়া আবেদনকারী মুক্তি রানী হলদারসহ সমিতির অসহায় সদস্যদের তাদের জলমহলের দখলে যেতে বাধা দিচ্ছে এলাকার প্রভাবশালীরা।
তাদেরকে নানাভাবে হয়রানী করা হচ্ছে ও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয়। গত ৩১ মে ওই এলাকায় গিয়ে কথা হয় সমিতির সভাপতি মুক্তি রানী হলদার, সদস্য আলো রানী হলদার, ললিতা রানী হলদার, মালতি রানী হলদার, জোছনা রানী হলদার, প্রমিলা রানী হলদারের সাথে। তারা বলেন, প্রায় ৩৬ বছর ধরে এ জলমহলে মাছ চাষ করে সংসার চালিয়ে আসছিলাম। কিন্তু গত বছর থেকে আমাদের জলমহলে যেতে দিচ্ছে না।
ওরা আমাদের ও স্বামীদের ভয় দেখাচ্ছে, বাড়ি-ঘর ছেড়ে চলে যেতে বলছে ওরা। এ ব্যপারে কথা হয় মনিরুজ্জামান ,মিজানুর রহমান, মোহাম্মদ আলী ও আবু জাফরের সাথে। তারা স্বীকার করেন যে জলমহলটি ১৪৩০ বঙ্গাব্দে তাদের লিজ দেওয়া হলেও ১৪৩১ (২০২৪ সাল) বঙ্গাব্দে তাদের লিজ দেওয়া হয়নি।
তবে মুক্তি রানীরাও লিজ পায়নি। হাইকোর্ট থেকে মুক্তি রানীদের জলমহলে শান্তিপুর্ণ দখলে যেতে বলা হলেও আপনারা বাধা দিচ্ছেন কেন? এ প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান মনিরুজ্জামান । এ ব্যপারে পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্তাবধায়ক প্রকৌশলী সুধাংশ কুমার সরকারকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি দ্রুতই নিস্পত্তি করা হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।