শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি : শেরপুরে কর্মস্থলগামী মানুষদের জিম্মি করে তাদের নিকট থেকে গলাকাটা ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এতে করে ঈদের ছুটি শেষে গার্মেন্টস ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়া সাধারণ মানুষদের মাঝে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
তাদের অভিযোগ, কর্মস্থলগামী নিম্ন আয়ের মানুষদের জিম্মি করে স্থানীয় মালিক-শ্রমিক যৌথ সিন্ডিকেট এভাবে প্রকাশ্যে বাড়তি টাকা আদায় করলেও প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্তারা নিশ্চুপ রয়েছেন। নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে নির্ধারিত ভাড়ার পরিবর্তে অতিরিক্ত টাকা নিলেও যেন দেখার কেউ নেই। আজ শনিবার দুপুরে শেরপুর পৌর শহরের ধুনটমোড়স্থ নতুন টার্মিনালে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, জেলার শেরপুর, ধুনট, নন্দীগ্রামসহ আশেপাশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহর এবং গ্রামাঞ্চলের বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষ শ্রমজীবি। জীবন-জীবিকার তাগিদে ঢাকায় বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন তারা। বিশেষ করে গার্মেন্টস ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিক। তারা এই বাস টার্মিনাল থেকেই বিভিন্ন গাড়িতে করে ঢাকায় যাচ্ছেন।
কর্মস্থলগামী লোকজন জানান, পরিবারের সঙ্গে ঈদুল আজহার আনন্দ ভাগাভাগি করতে সীমাহীন দুর্ভোগ মাথায় নিয়েই নাড়ির টানে গ্রামে ছুটে আসেন এবং বাড়ি ফিরে বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করেন। ঈদ পরবর্তী ছুটি শেষে গার্মেন্টস ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকায় ফেরা নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন এই উপজেলাসহ আশপাশের কয়েক উপজেলার লাখো শ্রমজীবি মানুষ।
একসঙ্গে সবাই ঢাকায় ফিরতে শুরু করায় পরিবহন সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। ফলে যে যার মতো পারছেন বাস-ট্রাক, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, পিকআপ, সিএনজি ও মোটরসাইকেলে কর্মস্থলে যাচ্ছেন তারা। আর এই সুযোগ নিয়ে তাদের নিকট থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
গার্মেন্টেস্ কর্মী ছুফিয়া বেগম, মর্জিনা বিবি, বাচ্ছু মিয়া, সোলায়মান আলীসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, তারা অনেকটা বাধ্য হয়ে গার্মেন্টস্ এ চাকরি করেন। সবকিছুর উর্ধ্বমুখির বাজারে এই সামান্য বেতনে ঢাকার মত জায়গায় একা চলাই কঠিন। এরপরও শহর বা গ্রামে প্রত্যেকের নিজ নিজ সংসার রয়েছে। সেই সংসারেও মাস অন্তে কিছু হলেও খরচ দিতে হয়।
এসব চালাতেই প্রত্যেক গার্মেন্টকর্মীর জীবন হাপিয়ে উঠে। এরপর আবার কর্মস্থলে যাওয়ার সময় যানবাহন সংকটের অজুহাতে কর্মস্থলে যেতে তাদের নিকট থেকে নির্ধারিত ভাড়ার পরিবর্তে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে। তারা অভিযোগ করে বলেন, এমনিতেই ঢাকায় যেতে সাধারণত সব পরিবহনেই ৫৫০টাকায় টিকিট পাওয়া যায়। অথচ মফিজ বাসগুলোতেই নেওয়া হচ্ছে ৮০০-৯০০টাকা। বাড়ি থেকে এই বাস টার্মিনাল হয়ে ঢাকায় যাওয়া পর্যন্ত প্রায় ১৫০০টাকার মত অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হবে বলে মন্তব্য করেন তারা।
শহরের ধুনটমোড়স্থ টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকায় কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য অসংখ্য মানুষ জড়ো হয়েছেন। যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। যাত্রীদের সংখ্যা বেশি হলেও সেই তুলনায় গাড়ির সংখ্যা ছিল কম। এরপরও বিভিন্ন নামী-দামি কোম্পানির পাশাপাশি মফিজ বাসেও কর্মস্থলে যাচ্ছেন তারা। আবার অনেকে রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়েই পণ্যবাহী কিংবা খালি ট্রাকে ওঠে কর্মস্থলে যাচ্ছেন।
এরমধ্যে মফিজ বাসে সিট নিয়ে ঢাকায় যেতে ৯০০-১০০০টাকা ভাড়া দিতে হচ্ছে। আর ট্রাকে গেলে দিতে হচ্ছে জনপ্রতি ৫০০-৬০০টাকা করে। একইভাবে মাইক্রোবাসে ১০০০-১৫০০টাকা ও প্রাইভেটকারে ১৫০০-২০০০টাকা পর্যন্ত ঢাকায় যেতে ভাড়া গুণতে হচ্ছে। এছাড়া নামি-দামী কোম্পানির যানবাহনগুলোর টিকিটে নির্ধারিত ভাড়া লেখা থাকলেও বাড়তি টাকা ছাড়া মিলছে না টিকেট।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাহ ফতেহ আলী ও একতা পরিবহনের টিকেট বিক্রেতা জানান, ঈদ পরবর্তী যাত্রীর তুলনায় বাসের মারাত্মক সংকট থাকায় একটু বাড়তি ভাড়া নেওয়া হয়। এছাড়া ঈদের কারণে যাত্রীভরে বাসগুলো ঢাকায় গেলেও ফিরতি পথে ফাঁকা আসছে। যে কারণে একটু বেশি ভাড়া নেওয়া হয়ে থাকে। তাছাড়া যানবাহনগুলোকে ঘাটে ঘাটে চাঁদা দিতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।
হাইওয়ে পুলিশের শেরপুর গাড়ীদহ ক্যাম্পের ইনচার্জ আবুল হাসেম এ প্রসঙ্গে বলেন, যাত্রীদের নিকট থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার সুযোগ নেই। তাই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বাড়তি টাকা নেওয়া যানবাহনগুলোতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।