সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধি: ভরা আমের মৌসুমে দেশের আমের বাণিজ্যিক রাজধানী নওগাঁর সাপাহারে আমচাষী সমিতি ও প্রশাসন এবং আম ব্যবসায়ী সমিতির মধ্যে সৃষ্ট রশি টানাটানির মাঝখানে পড়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ আমচাষী।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও আমের মৌসুমে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যাপারীরা বিভিন্ন আড়তে অবস্থান নিয়ে বিগত কয়েক বছরের মত ৫২ কেজিতে (ক্যারেটসহ) ১মণ আম কেনা-বেচা করে আসছিল। এরই মধ্যে অন্যান্য বছরের মত এবারও আমচাষী সমিতির পক্ষ থেকে অতিরিক্ত ১০/১২কেজি আমের বিষয়ে আলোচনা সমালচনা শুরু হলে কয়েক দফায় উপজেলা প্রশাসনের মধ্যস্থতায় আমচাষী ও আম ব্যসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে দফায় দফায় সভা করা হয়। সর্বশেষ গত ২৩ জুন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার সাপাহারে সরকারি সফরে এলে বিষয়টি তার নজরে আসে। তাৎক্ষণিক তিনি এক জরুরি সভায় উভয়ের লাভ লোকসানের কথা বিবেচনা করে ৪৮ কেজিতে (ক্যারেটসহ) ১মণ আম কেনা-বেচা করতে কৃষকের কাছ থেকে ৭০টাকা আদায় করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৫জুন সাপাহার সদর ইউনিয়ন পরিষদ সভাকক্ষে উপজেলা সমবায় অফিসার নাজমুর হাসানের নেতৃত্বে বাজার মনিটরিং কমিটির এক বৈঠক বসে। উক্ত বৈঠকে আম ব্যবসায়ীর পক্ষে সমিতির সভাপতি শ্রী কার্তীক সাহা ৪৮ কেজিতে ১মণ আম ক্রয় করার জন্য ব্যাপারীদের নির্দেশ দেয়ার কথা স্বীকার করলেও প্রশাসনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ৭০টাকার বদলে ৮০টাকা আদায়ের ঘোষণা দেন।
বৈঠক শেষে অজানা করণে ব্যাপারীরা বাজারে আম কেনা কার্যক্রম বন্ধ করে আড়তে কালক্ষেপণ করে বসে থাকেন। অপরদিকে সকাল ৭টা হতে বাজারে আসা হাজার হাজার আমচাষীরাও প্রচন্ড রোদ ও গরম উপেক্ষা করে সারাটা দিন তাদের আম নিয়ে রাস্তায় বসে থাকেন। অবশেষে সন্ধ্যার পর সারাদিন জিম্মি হয়ে বসে থাকা কিছু আমচাষী তাদের অতি প্রয়োজনে দু’একটি আড়তে বাধ্য হয়ে ৫০/৫২কেজি হিসেবে কম দামে আম বিক্রি করে তাদের প্রয়োজন মেটাতে বাধ্য হন। এছাড়া অধিকাংশ আমচাষী মনের দু:খে রাতে তাদের আম বাসায় ফিরিয়ে নিয়ে যায়। আম ফিরিয়ে নেয়া গোয়ালা গ্রামের আমচাষী ফয়জুল ইসলাম, গৌরীপুরের রেজাউল, পিছলডাঙ্গার আব্দুল করিম, নিশ্চিন্তপুরের আবু সাঈদের সাথে কথা হলে তারা প্রত্যেকে ক্ষোভের সাথে জানান, আম বাড়িতে নিয়ে পঁচে ফেলব তার পরও ব্যাসায়ীদের অন্যায় দাবির কাছে মাথা নোয়াব না।
এদিকে ব্যাপারীরাও তাদের পূর্বের নেয়া ৫০/৫২ কেজিতে মণ ছাড়া আম ক্রয় করবে না বলে আম কেনা থেকে বিরত থাকেন। বর্তমানে সাধারণ আমচাষীরা সৃষ্ট সমস্যার মধ্যে পড়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এবং এক প্রকার জিম্মি হয়ে ব্যাপারীদের কথা মত ৫০/৫২কেজিতে মণ ও তাদের নির্ধারণ করা দামেই আম বিক্রি করতে হচ্ছে।
এবিষয়ে সাপাহার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ হোসেন বলেন, প্রশাসনিকভাবে যে ৪৮ কেজি আম কেনা-বেচার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তার বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। বিষয়টি জোরালোভাবে খতিয়ে দেখার জন্য তিনি বাজার মনিটরিং কমিটির ওপর দায়িত্বভার অর্পণ করেছেন বলেও জানান। অচিরেই এই সমস্যা নিরসনে তারা আমচাষী সমিতি ও আম ব্যবসায়ী সমিতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন। বিগত মঙ্গলবার হতে গতকাল পর্যন্ত চাষীদেরকে আমভর্তি পরিবহন নিয়ে রাস্তায় বসে থাকতে দেখা গেছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।