ভিডিও

চলনবিলে দেশীয় মাছের অভাবে মৌসুমের শুরুতে বেশির ভাগ শুঁটকি’র চাতাল ফাঁকা

প্রকাশিত: অক্টোবর ০৪, ২০২৪, ০৮:৫১ রাত
আপডেট: অক্টোবর ০৪, ২০২৪, ০৮:৫১ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

জয়নাল আবেদীন জয়,সিরাজগঞ্জ : দেশের মিঠা পানির দেশি মাছের সবচেয়ে বড় উৎস চলনবিল। বার বার বন্যার পানি ওঠা নামার কারণে সেই বিলেই মিলছে না দেশীয় মাছ। এতে মৌসুমে শুরুতে এখানকার বেশিরভাগ শুঁটকির চাতাল এখনো ফাঁকা রয়েছে। শুঁটকি ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা বলছেন, বিলাঞ্চলে বর্ষার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নানা ধরনের অবৈধ জাল ব্যবহার, অপরিকল্পিত পুকুর খননে পানি প্রবাহে বাধার কারণে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। ফলে এবারের শুঁটকি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে শঙ্কিত ব্যবসায়ীরা।

আদিকাল থেকে চলনবিলের মিঠা পানির দেশীয় মাছের উৎকৃষ্ট শুঁটকির চাহিদা দেশজুড়ে। সময়ের পরিক্রমায় তা এখন দেশ ছাপিয়ে চাহিদা পৌছেছে বিদেশেও। এই চাহিদাকে মাথায় রেখে প্রতি বছর বন্যার শেষে সিরাজগঞ্জ, নাটোর ও পাবনা জেলার বিভিন্ন উপজেলার চলনবিলের ধারে শুঁটকির চাতাল গড়ে তোলেন ব্যবসায়ীরা। বিল থেকে টেংরা, পুটি, বেলে, চিংড়ি, খলিষা, টাকি, শোল, বোয়াল, বাতাসি, চাপিলা প্রভূতি দেশীয় প্রজাতির হরেক রকম মাছ এখানে শুঁটকি করে তা দেশ বিদেশে বিক্রি করেন তারা।

তবে এবার মৌসুমের শুরুতেই সেই ব্যবসার ছন্দ পতন ঘটেছে। চলনবিল অঞ্চলের বিভিন্ন নদী-নালা, খাল-বিল থেকে ইতোমধ্যে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। কিন্তু প্রতি বছরের মত কাঙ্খিত মাছ পাওয়া যাচ্ছে না এ বিল থেকে। শুঁটকি ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলনবিলের বিভিন্ন আড়তে প্রতি বছর এসময় যে মাছ পাওয়া যেত এবার তার অর্ধেকও নেই।

চলনবিলের সবচেয়ে বেশি শুঁটকি হয় তাড়াশ উপজেলার মহিষলুটি এলাকায়। এখানে রয়েছে বিলের সবচেয়ে বড় মাছের আড়ৎ। যেখানে প্রতিদিন সকাল-বিকাল বিলের সব ধরনের মাছ ক্রয়-বিক্রয় করেন মৎস্য শিকারীরা। এখান থেকে মাছ কিনে নিয়ে যান শুটকি ব্যবসায়ীরা। তবে এবার এই আড়তে দেশি মাছের তেমন সরবরাহ নেই।

গত বৃহস্পতিবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, মহিষলুটি মাছের আড়তের পশ্চিম পাশেই চলনবিলের সবচেয়ে বড় শুঁটকির চাতাল। এই চাতালে শুঁটকির জন্য কয়েকশ’ মাচা দেয়া হয়েছে। তবে এসব মাচার চারভাগের এক ভাগ মাচায় কোন শুঁটকি দেয়া হয়নি। ডজন খানেক নারী পুরুষ কিছু পুটি মাছ শুঁটকি করার কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। আড়তের মহাজনদের একজন দেলবার হোসেন জানান, আমাদের চাতালে এবার দেশীয় মাছের অভাবে শুঁটকি করতে পারছি না।

প্রতিদিন আমাদের চাতালে মাছের দরকার প্রায় ৪শ’ মণ। সেখানে বিভিন্ন আড়ত গুরে পাওয়া যাচ্ছে ৩ থেকে ৪শ’ কেজি মাছ। ফলে আমাদের চাতালের বেশিরভাগ মাচা ফাঁকা থাকছে। শ্রমিকরাও বসে বসে সময় পার করছেন। এই ব্যবসায়ীর মতে, চলনবিলে বন্যার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হরেক রকম নিষিদ্ধ জালে ছোট বড় দেশি মাছের বংশ ধ্বংস করা হয়। একই সাথে বিলের বিভিন্ন উপজেলার নালা-খালের উৎস মুখে অপরিকল্পিত পুকুর খনন করায় দেশীয় মাছের বংশ বৃদ্ধি হচ্ছে না।

এসব প্রতিরোধে মৎস্য বিভাগের কোন পদক্ষেপ নেই। ফলে দিন দিন চলনবিল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে হরেক প্রজাতির দেশীয় মাছ। মহিষলুটি এলাকায় কয়েকযুগ ধরে দেশি মাছের শুটকির ব্যবসা করছেন নাটোরের মো. জাহিদুল ইসলাম। গত বছর তিনি চলনবিল থেকে হরেক রকম মাছের শত টনের অধিক শুঁটকি করেছিলেন। এসব শুঁটকি সৈয়দপুরসহ ভারতেও বিক্রি হয়েছে।

এ ব্যবসায়ী জানান, এবার মৌসুমের শুরুতেই মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। এর মাঝে দফায় দফায় বৃষ্টিতে খুব বিপদে আছি। জানি না কতটুক শুটকি করতে পারবেন এ নিয়ে তিনি শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তবে বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে গেলে শুঁটকি করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। শুটকি ব্যবসায় সৈয়দপুরের কয়েকজন ব্যবসায়ী সিন্ডকেট করে তাদের প্রতি বছর ঠকিয়ে থাকে উল্লেখ করে তিনি এসবের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পদক্ষেপ দাবি করেছেন।

সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো.শাহিনুল আলম জানান, চলনবিল থেকে সবেমাত্র বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। তাই এখন মাছ একটু কম হতে পারে। তবে প্রতি বছরের মতোই শুঁটকির চাহিদা পূরণ হবে বলে তিনি আশ^স্ত করেন। উল্লেখ্য গত বছর সিরাজগঞ্জ জেলায় ৩১৭ মে. টন শুটকি করেছিলো ব্যবসায়ীরা। এবার ৩৫০ মে. টন শুঁটকির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS