ভিডিও

গতি ফিরেছে রংপুরে স্থাপিত নতুন ডপলার রাডার কার্যক্রমের

উত্তরাঞ্চলে খুলছে আবহাওয়ার তথ্য জানার নতুন দুয়ার

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২৪, ০৫:০৪ বিকাল
আপডেট: অক্টোবর ১৯, ২০২৪, ০৫:০৪ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

রংপুর জেলা প্রতিনিধি : দীর্ঘ এক যুগ ধরে বিকল রাডার নিয়ে চলা রংপুর আবহাওয়া কার্যালয়ে নতুন ডপলার রাডার স্থাপনের কাজে গতি ফিরেছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ৯২ শতাংশ। ফলে রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলে খুলছে আবহাওয়ার তথ্য জানার নতুন দুয়ার।

আট বছর আগে শুরু হওয়া রাডার স্থাপনের কাজের অগ্রগতিতে স্বস্তি ফিরেছে আবহাওয়া দপ্তরেও। আগামী বছরের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। সে অনুযায়ী নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। আগামী বছর নির্ধারিত সময়ের আগেই রাডার ব্যবহার কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে।

ডপলার রাডার স্থাপন হলে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে আগাম প্রস্তুতি গ্রহণের সুযোগ থাকায় দুর্যোগে কমবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। রাডার স্থাপনের কাজটি তত্ত্বাবধান করছে জাপানের সিমিজু করপোরেশন। কর্মকর্তারা রংপুর আবহাওয়া কার্যালয়ে অবস্থান করছেন এবং মাঠ পর্যায়ে কাজের তদারকি করছেন।

এ রাডার স্টেশনের সরঞ্জামাদি সরবরাহ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মারুবিনি করপোরেশন। রংপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, নগরীর কলেজ রোড মাস্টারপাড়া এলাকায় ১৯৭৭-৭৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের অধীনে আবহাওয়া, রাডার ও ভূ-কম্পন পর্যবেক্ষণাগার স্থাপন করা হয়।

আড়াই একর জমির ওপর নির্মিত এ আবহাওয়া কেন্দ্রে জাপান সরকারের অর্থায়নে ১৯৯৯ সালে ১শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে কনভেনশনাল রাডার স্থাপন করা হয়। এ রাডারের সাহায্যে ভূমিকম্প পরিমাপ, দুর্যোগের পূর্বাভাস ও প্রতিদিনের আবহাওয়া পরিস্থিতি ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে প্রদান করা হতো।

রাডারটির আয়ুষ্কাল ছিল ১০ বছর। কিন্তু ২০০৭ সালে রাডারে ত্রুটি ধরা পড়ে। স্থানীয় প্রকৌশলীদের প্রচেষ্টায় ২০১২ সাল পর্যন্ত রাডারটিকে সক্রিয় রাখা সম্ভব হয়। এরপর থেকে ১৩ বছর ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে রংপুর আবহাওয়া, রাডার ও ভূ-কম্পন পর্যবেক্ষণাগারের একমাত্র রাডারটি।

ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আবহাওয়ার পূর্বাভাস না পাওয়ায় প্রায় ৪শ’ কিলোমিটার এলাকার মানুষজন আগাম প্রস্তুতি নিতে ব্যর্থ হন। আগাম বার্তা পেতে ঢাকাসহ অন্যান্য আবহাওয়া অফিসের তথ্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। এতে সময়ক্ষেপণ হয় বেশি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রংপুর ও এর আশপাশের কৃষিকাজ। এতে কৃষকের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে উত্তরাঞ্চলের মানুষকে আবহাওয়া সম্পর্কে পূর্বাভাস দিতে নতুন রাডার স্থাপনের কাজ শুরু হয়। নতুন রাডার স্থাপনের দায়িত্বে থাকা সিমিজু করপোরেশনের কনসালটেন্টরা জানিয়েছে, নতুন রাডারের মাধ্যমে রংপুর আবহাওয়া কেন্দ্র থেকে চারদিকে ৪শ’ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়, মেঘের গতিবিধি, বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, বজ্রপাতসহ আবহাওয়ার আগাম নানা তথ্য দেওয়া সম্ভব হবে।

দুর্যোগের বেশকয়েক ঘন্টা আগে তথ্য পাওয়ায় সংশ্লিষ্টদের সঠিকভাবে পূর্বাভাস দেওয়া যাবে। কালবৈশাখী মেঘের অস্তিত্ব, টর্নেডোর মেঘ, বজ্রপাতের ধরণ বলে দিতে পারবে এই রাডার। রংপুর আবহাওয়া, রাডার ও ভূ-কম্পন পর্যবেক্ষণাগারের কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রাডার স্থাপনে নতুন ভবন, অফিস রুম এবং পর্যবেক্ষণ রুমের কাজ শেষের দিকে।

এখন চলছে প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট স্থাপনের কাজ। ভবন নির্মাণ ও ইকুইপমেন্ট সংযোজনসহ সার্বিক কাজের অগ্রগতি শতকরা ৯২ শতাংশ এগিয়েছে। নতুন স্থাপিত ডপলার রাডারের মেয়াদকাল ২০ বছর। আশা করছি, আগামী বছরে নির্দিষ্ট সময়ের আগে এই রাডার ব্যবহারের কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে।

নতুন এ রাডার স্টেশন চালু হলে মেঘের অবস্থান, গতি, দিক, তাপমাত্রা জানা যাবে। বজ্রপাতের পূর্বাভাস দেওয়ার মাধ্যমে মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব হবে। রেডজোনে অবস্থিত রংপুরে ভূমিকম্প ও বড় ধরনের বন্যার তথ্য দেওয়া যাবে।

আগাম বৃষ্টিপাতের তথ্য দেওয়ার মাধ্যমে কৃষকদের ফসলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করা যাবে। সেই সঙ্গে রংপুরের আবহাওয়ার অবস্থা ও পরিবর্তনজনিত কারণগুলো গবেষণা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS