রক্তাক্ত প্রিয় মাতৃভূমি
করতোয়া ডেস্ক : দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবি আদায়ে ডাকা অসহযোগ আন্দোলন এবং আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে অগ্নিগর্ভ দেশ। এই কর্মসূচি ঘিরে সারা দেশে সংঘাত-সংঘর্ষ, গুলি, পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় অন্তত ১০৫ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৪ জন পুলিশ সদস্য। সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় ঢুকে ১৩ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে।
নিহতদের মধ্যে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও ছাত্রদলের এক নেতাও রয়েছেন। বিভিন্ন স্থানে হামলা-অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা ও গাড়িতে। হামলা চালানো হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাসভবনে। আগুন দেয়া হয়েছে দলটির কার্যালয়ে। এছাড়া পুলিশের গাড়ি ও পুলিশ বক্সেও হামলা-ভাঙচুর করা হয়েছে।
দেয়া হয়েছে আগুন। এ সব ঘটনায় হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আজ রোববার (৪ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টা থেকে আবারও সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে। সাধারণ ছুটি দেয়া হয়েছে তিনদিন। আজ রোববার (৪ আগস্ট) সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে বিক্ষোভ ও সমাবেশ শুরু করে আন্দোলনকারীরা।
একই সময় প্রতিবাদ মিছিল করে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সরকারদলীয় সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। মোতায়েন ছিল পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল পরিমাণ সদস্য। কিন্তু দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানে রক্তে রঞ্জিত হয়েছে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সংঘর্ষের মাত্রা বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে হতাহতের সংখ্যাও।
এরমধ্যে শুধু সিরাজগঞ্জেই ১৩ পুলিশ সদস্যসহ ২৩ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া কুমিল্লায় আরেক পুলিশ সদস্য নিহতের খবর পাওয়া গেছে। দিনভর সংঘর্ষে নরসিংদীতে ৬ জন, ফেনীতে ৮ জন, লক্ষ্মীপুরে ১০ জন, কিশোরগঞ্জে ৪ জন, রাজধানী ঢাকায় ৯ জন, বগুড়ায় ৫ জন, মুন্সিগঞ্জে ৪ জন, মাগুরায় ৪ জন, ভোলায় ৩ জন, রংপুরে ৫ জন, পাবনায় ৩ জন, সিলেটে ৬ জন, কুমিল্লায় পুলিশ সদস্যসহ ৪ জন, শেরপুরে ৪ জন, জয়পুরহাটে ১ জন, হবিগঞ্জে ১ জন, ঢাকার কেরাণীগঞ্জে ১ জন, সাভারে ১ জন ও বরিশালে ২ জন, কক্সবাজার ১ জনসহ ১০৫ নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- লক্ষ্মীপুরে সংঘর্ষে নিহত ১০ : লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের সংঘর্ষে ১০ নিহত এবং শতাধিক গুলিবিদ্ধসহ দুইশতাধিক আহত হয়েছেন। আজ রোববার (৪ আগস্ট) লক্ষ্মীপুরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় পৌরসভার তমিজ মার্কেটের পাশে সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহউদ্দিন টিপুর এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও এমপি নুরুদ্দিন চৌধুরী নয়নের বাসা হামলা ও আগুন দেওয়া হয়। নিহতরা হলেন- মো. কাউসার, আফরান, সাব্বির ও মিজান হোসেন।
এছাড়া যুবগীলগের নিহতরা হলেন, হারুন মেম্বার, মো. সুমন, রিয়াজ পাটওয়ারী ও অজ্ঞাত একজন। এই তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. অরূপ পাল। নরসিংদীতে সংঘর্ষে আওয়ামী লীগের ৬ নেতাকর্মী নিহত : নরসিংদীর মাধবদীতে আন্দোলনকারীদের দিকে গুলি ছোড়ার পর ধাওয়া দিয়ে আওয়ামী লীগের ছয় নেতাকর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
এ ঘটনায় চারজন আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহত হন আরও অনেকে। রোববার দুপুর একটার দিকে মাধবদী বাজার মসজিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন- মাধবদী মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি ও নরসিংদী সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের ছোট ভাই মো. দেলোয়ার হোসেন (৪০), মাধবদী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও চরদিগলদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন (৩৮), নরসিংদী জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য শ্রমিক লীগ নেতা মনিরুজ্জামান ভূইয়া ওরফে নাতি মনির (৪২), মহিষাশুরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল জলিল (৪০), কামাল হোসেন (৩৫), মো. সোহেল মিয়া (৩৮)।
ছয়জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান। সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশসহ মোট ২৩ জন নিহত : সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় হামলা করে ১৩ পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আন্দোলনকারী, বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা থানা ঘেরাও করে পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করে। রোববার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ সদর দপ্তর এবং রাজশাহী বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইডি বিজয় বসাক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়া সংঘর্ষে আরও ১০ জন নিহত হন। ঢাকায় আওয়ামী লীগ নেতা ও দুই শিক্ষার্থীসহ নিহত ৯ : রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রোববার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত নয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে একজন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতা এবং দুইজন শিক্ষার্থী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। নিহত আওয়ামী লীগ নেতার নাম আনোয়ারুল ইসলাম। ষাটোর্ধ্ব এই প্রকৌশলী ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য।
তার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন। মুন্সীগঞ্জে সংঘর্ষে নিহত ৪ : মুন্সীগঞ্জ শহরের থানারপুল চত্বরে আন্দোলনকারী ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের মধ্যে রোববার সকাল ১০টার দিকে সংঘর্ষে ৩ জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- রিয়াজুল ইসলাম (৩৫), মেহেদি হাসান (৩২), মো. সজল (২২)।
এ সময় গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন। আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কমপক্ষে পাঁচটি মোটরসাইকেল। রংপুর নিহত ৫ : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষিত সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ে রংপুরের রাজপথে মানুষের ঢল নামে। সর্বাত্মক অসহযোগের প্রথম দিনে সিটি বাজারে সামনে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় গুলিবিদ্ধ হয়ে দুইজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন সাংবাদিকসহ অন্তত ২০ জন।
মাগুরায় আন্দোলনকারী-আওয়ামী লীগের সংঘর্ষ, নিহত ৪ : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ আন্দোলন ঘিরে সকাল থেকেই উত্তপ্ত মাগুরা। রোববার সকাল ১০টার পর থেকে দফায় দফায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মেহেদী হাসান রাব্বী নামে একজনসহ ৪ জন মারা গেছেন। রাব্বী জেলা ছাত্রদলের যুগ্ন সম্পাদক। অপর তিনজন শিক্ষার্থী হলেন ফরহাদ হোসেন ও সুমন শেখ, আহাদ মোল্লা।
গুরুতর আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। ছাত্রদল নেতা রাব্বীর বাড়ি শহরের বৈরনাতুল গ্রামে। শিক্ষার্থী ফরহাদ হোসেনের বাড়ী শ্রীপুরের রায়নগরে। সে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও সুমন শেখের বাড়ি মহম্মদপুর উপজেলার বালিদিয়া ইউনিয়ন এবং আহাদ মোল্লার বাড়ি একই উপজেলায়। কুমিল্লা পুলিশ সদস্যসহ নিহত ৪ : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে ৪ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন পুলিশ কনস্টেবল রয়েছেন। পাবনা নিহত ৩ : পাবনায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের বিচার ও সরকারের পদত্যাগ দাবিতে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচিতে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুইজন নিহত হয়েছেন।
আহত হয়েছেন অনেকেই। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। রোববার বেলা ১টার দিকে পাবনা শহরের ট্রাফিক মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট পাবনা জেনারেল হাসপাতালে সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুল ইসলাম রিমন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিহতরা হলেন- পাবনা সদরের চর বলরামপুরের জাহিদুল ইসলাম (১৮) ও পাবনা শহরের আরিফপুর হাজীরহাট এলাকার মাহিবুল হোসন (১৬)। কক্সবাজারে আ.লীগ-আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ, নিহত-১ : কক্সবাজার শহর দিনভর শান্ত থাকার পর রোববার সন্ধ্যায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয় শহরের শহীদ স্বরণী সড়কে। এতে আন্দোলনকারী এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ সময় ১১ জন গুলিবিদ্ধসহ ২০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আশিকুর রহমান চৌধুরী একজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নিহতের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নিহত যুবকের মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।’ সংঘর্ষ চলাকালে শহীদ স্বরণী সড়কে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
আরও পড়ুনরাত সাড়ে ৮ টা পর্যন্ত আগুন জ্বলছিল। এ ছাড়া শহরের বিভিন্ন এলাকায় যানবাহন ও দোকানপাট ভাঙচুর হয়েছে। সিলেটে গুলিতে ৬ জন নিহত : সিলেট নগরীসহ বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় পৃথক স্থানে গুলিতে ৬ জন নিহত হয়েছেন। সিলেটে পুলিশ বক্স, নির্বাচন অফিস, মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়েছে। নগরজুড়ে ভাঙচুর ও তান্ডব চালায় আন্দোলনাকরীরা।
এ নিয়ে দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিন আজ রোববার (৪ আগস্ট) সকাল থেকে মাঠে নামেন আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা। সময়ের সঙ্গে বিপুল লোক সমাগম হয়। এরপর তাদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ চলে দিনভর। এতে সাংবাদিকসহ শতাধিক লোক আহত হয়েছেন। বেলা আড়াইটার দিকে গোলাপগঞ্জ পৌর এলাকার ধারাবহরে উপজেলা হাসপাতালের সামনে দুইজন ও এর আগে ঢাকা দক্ষিণ এলাকায় একজন নিহত হন। ৫ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য হাসপাতালের আরএমও ডা. শাহিন আহমদ।
নিহতরা হলেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার ধারাবহর গ্রামের মকবুল আলীর ছেলে ব্যবসায়ী তাজ উদ্দিন (৪০), উপজেলার শিলঘাটের বাসিন্দা সানি আহমদ (১৮) ও নিশ্চিন্তপুর গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলে নাজমুল ইসলাম, গোচ মিয়া (৪০), মিনহাজ উদ্দিন (২২)। ফেনীতে নিহত ৮ : ফেনীতে সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে আটজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত অর্ধশতাধিক।
রোববার দুপুরে শহরের মহীপালে দফায় দফায় সংঘর্ষে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে। ফেনী হাসপাতালের আরএমও আসিফ ইকবাল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেনে। নিহতরা হলেন, ফেনীর ফাজিলপুর উপজেলার সাইদুল ইসলাম (২৫), সদর উপজেলার শিহাব উদ্দিন (২২), দুই রিকশাচালকসহ আরও চারজন। তাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। বগুড়ায় পুলিশ-আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে নিহত ৫ : বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার এ ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ হয়ে দুটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮০ জন। তিনজনের মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করেছেন বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ। এছাড়া আরও একজন দুপচাঁচিয়ায় মারা যান। নিশ্চিত করেছেন বীরকেদার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। কিশোরগঞ্জে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ৪ : কিশোরগঞ্জে বিক্ষোভকারী, পুলিশ ও ছাত্রলীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।
তাদের মধ্যে অনেকেই গুলিবিদ্ধ। এদিকে বিক্ষোভ চলাকালে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল ইসলামের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। নিহত চারজনের মধ্যে তিনজনের পরিচয় জানা গেছে। তাদের একজন হলেন সদর উপজেলার কর্শাকড়িয়াল এলাকার দিলু মিয়ার ছেলে মো. মবিন মিয়া (৩২)। তিনি যুবলীগের কর্মী বলে জানা গেছে।
বাকি দুজন হলেন সদরের যশোদল বীরদাম পাড়া এলাকার অঞ্জনা বেগম (৩৫) ও জেলা শহরের নিউ টাউন এলাকার জুয়েল মিয়া (৩০)। আনুমানিক ৫০ বছর বয়সী এক ব্যক্তির পরিচয় জানা যায়নি। ভোলায় সংঘর্ষে নিহত ৩ : ভোলায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষে রোববার তিনজন নিহত হয়েছেন। সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত সংঘর্ষে পুলিশসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। বিএনপির দাবি, তাদের দুই কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।
এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দাবি, তাদের এক যুবলীগ কর্মীকে বিক্ষোভকারীরা পিটিয়ে হত্যা করেছে। নিহদের পরিচয় জানা যায়নি। শেরপুরে সংঘর্ষে নিহত ৪ : শেরপুর জেলা শহরে আজ একাধিক স্থানে আন্দোলনকারী, আওয়ামী লীগ এবং পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ২ জন। আহত হয়েছেন অন্তত পক্ষে ৩০ জন।
এদিকে শহরের তিনআনী বাজার মোড়ে আন্দোলনকারীদের ওপর প্রশাসনের টহল গাড়ি উঠিয়ে দিলে বেশ কয়েকজন আহত হন। আহতদের শেরপুর জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন। শেরপুর সদর হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট ডা. মো. সেলিম মিঞা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিহতরা হলেন- আহসান উল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান) শেষ বর্ষের ছাত্র ও জেলা শহরের বাগরাকশা মহল্লার বাসিন্দা তুষার (২৪), আইটি উদ্যোক্তা ও স্বেচ্ছাসেবক জেলা সদরের পাকুড়িয়া চৈতনখিলার মাহবুব (২২)। অন্য একজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
জয়পুরহাটে আ.লীগ-ছাত্রলীগ কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ, নিহত ১ : জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছেন বিক্ষোভকারীরা। রোববার এসব ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও ছররা গুলি ছোড়ে। এ সময় গুলিতে মেহেদী হাসান বিশাল (১৮) নামে এক তরুণ নিহত হয়েছেন। হামলা ও সংঘর্ষে স্থানীয় সংসদ সদস্য সামছুল আলম দুদুসহ শতাধিক আহত হয়েছেন।
হবিগঞ্জে সংঘর্ষে একজন নিহত : হবিগঞ্জে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে রোববার রিপন শীল (২৭) নামের এক তরুণ নিহত হয়েছেন। তার চোখের ওপর গুলির চিহ্ন দেখা গেছে। তিনি শহরের ইনাতাবাদ এলাকার বাসিন্দা। কেরানীগঞ্জে নিহত ১ : ঢাকার কেরানীগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচিকে ঘিরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে রোববার দুপুরে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের প্রধান ফটকে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় অফিসের ভেতর আটকা পড়ে আওয়ামী লীগ কর্মী মো. ইফতি (৩২) নামের একজন নিহত ও প্রায় ১৫ জন আহত হন। বরিশালে সংঘর্ষে আওয়ামী লীগ নেতাসহ নিহত ২ : বরিশালে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে টুটুল চৌধুরী (৬২) নামে এক আওয়ামী লীগ নেতা নিহত হয়েছেন। আজ রোববার (৪ আগস্ট) দুপুরের দিকে নগরীর সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের পাশে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারান তিনি।
নিহত টুটুল চৌধুরী বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এছাড়া আরেকজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আশুলিয়ায় সংঘর্ষ-গুলি, যুবক নিহত : সাভারের আশুলিয়ায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহতের পিঠে গুলির চিহ্ন রয়েছে। আজ রোববার (৪ আগস্ট) বিকেল তিনটার দিকে এ খবর নিশ্চিত করেছেন ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আহমেদুল হক তিতাস।
তিনি বলেন, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আশুলিয়ার বাইপাইল থেকে আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী একজনকে নিয়ে আসেন কয়েকজন যুবক। নিহতকে হাসপাতালে রেখে তারা চলে যান। নিহত ওই যুবককে হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মারা যান। তবে তার বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ১১টার দিকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের শ্রীপুর এলাকায় জমায়েত হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীরা বাইপাইল এলাকায় এসে ট্রাফিক পুলিশ বক্স ভাঙচুর করে।
পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ধাওয়া দেয়। এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণ হয় ককটেল, ছোড়া হয় গুলি। আন্দোলনকারীদের একজন গুলিবিদ্ধ হলে তাকে স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে নিলে ফেরত দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় উভয় পক্ষের অন্তত ৮ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
মন্তব্য করুন