পিএসসির প্রশ্নফাঁস
গাবতলী (বগুড়া) প্রতিনিধি : বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বগুড়ার দুই জন রয়েছে। এরা হলো গাবতলী উপজেলার নাড়ুয়া মালা ইউনিয়নের নিয়ামুল হাসান জেমস (৩৩) এবং একই উপজেলার দুর্গাহাটা ইউনিয়নের বাইগুনী সাইরপাড়া গ্রামের মামুনুর রশিদ (৩৫)।
নিয়ামুল হাসান জেমস ও মামুনুর রশিদকে গ্রেপ্তারের পর এক এক করে বের হয়ে আসছে অবৈধভাবে চাকরি দেয়ার ভিন্ন ভিন্ন সংবাদ। এদের মাধ্যমে চাকরিপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছে তাদের স্ত্রী, ভাই-বোনসহ আত্বীয়-স্বজনসহ এলাকার অর্ধ শতাধিক ব্যক্তি। জেমস ও মামুনুর চাকরি দেওয়ার বিনিময়ে টাকা ছাড়াও জমির বিনিময়ে চাকরি দিয়েছে। তারা নিজ নিজ এলাকায় সুস্থ একাধিক ব্যক্তিকে প্রতিবন্ধী কোঠায় চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন।
গ্রেপ্তারকৃত নিয়ামুল হাসান জেমস গাবতলী উপজেলার নারুয়ামালা ইউনিয়নের দোয়ার পাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল গফুর মন্ডল ওরফে জিল্লুরের ছেলে এবং মামুনুর রশিদ দুর্গাহাটা ইউনিয়নের বাইগুনি সাইরপাড়া মধ্য মন্ডল পাড়ার মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে। নিয়ামুল হাসান জেমস ঢাকা সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান হিসেবে এবং মামুনুর রশিদ ঢাকায় ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে অফিস সহকারী-কাম-মুদ্রাক্ষরিক পদে কর্মরত। এর আগে জেমস পিএসসিতে অফিস সহায়ক পদে কর্মরত থাকা অবস্থায় সেখান থেকে চাকরিচ্যুত হয়।
এ বিষয়ে গত বছরের ১২ জুন গাবতলী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুর বিপ্লব বগুড়া জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) লিখিত অভিযোগ করলেও তার কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে বিপ্লব জানান।
জেমসের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে তার মা ও স্বামী পরিত্যক্তা বড় বোনকে পাওয়া যায়। তারা এব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান। জেমসের চাচা আব্দুল কুদ্দুস মন্ডল বলেন, জেমসের এলাকায় তার বাবার অনেক সম্পত্তি আছে, তার অবৈধ ভাবে কিছুই করার প্রয়োজন হবে না। তবে আব্দুল কুদ্দুস মন্ডল বলেন জেমস এর স্ত্রী বিসিএস ক্যাডার ও তার আপন বোন ও শ্যালকসহ এলাকায় খায়রুল ও হযরতসহ পাঁচ জনকে জেমস চাকরি নিয়ে দিয়েছে।
জেমসের এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একব্যক্তি বলেন তার কাছ থেকে চাকরি দেয়ার নাম করে প্রায় ১৮ লাখ টাকা নিয়ে ছিল কিন্ত চাকরি হয়নি, তবে জেমস টাকা ফেরত দিয়েছে। সে আরও জানায় জেমস প্রায় ১০/১২জনকে চাকরি দিয়েছে। ওই এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, কুদ্দুস মন্ডলের দোকানের পূর্ব পাশে দোয়ারপাড়া মৌজার একটি জমির মালিক ছিলেন মৃত ইসমাইল হোসেনের ছেলে পলাশ। তাকে সরকারি চাকরি দিয়ে জেমস ওই জমি লিখে নিয়েছে। এলাকায় অনেক কৃষি জমিও কিনেছে জেমস।
এলাকার একাধিক ব্যক্তিকে প্রতিবন্ধী সাজিয়ে চাকরি দিয়েছে এবং স্ত্রীর চাকরির ক্ষেত্রে তথ্য গোপন করেছে বলেও জানা গেছে। জেমসের পরিবার এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ কিছু বলতে রাজি হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুকেরা জানায়, নিজের স্ত্রী, বোন ছাড়াও শ্যালক আবু সাঈদ এবং একই এলাকার বাসিন্দা খায়রুল ইসলাম স্বাস্থ্য বিভাগে ও হযরত আলীসহ আরও অনেককে বিভিন্ন অফিসে চাকরি দিয়েছে।
এদিকে মামুনুরের বাড়ির এলাকাবাসীরা জানান, মামুনুর পাসপোর্ট অফিসে চাকরি করেন। তার স্ত্রী ও এক সন্তানসহ তিনি এক বছর যাবৎ ঢাকায় থাকেন। তার এক ভাই ফারুক হোসেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলায় এবং তার স্ত্রী রিমা খাতুন গাবতলী অফিসে কর্মরত আছে। তার বাবা মোস্তাফিজ বগুড়া এসেনশিয়াল ড্রাগসে অফিস সহকারী পদে চাকরি করেন।
জানা গেছে, মামুনুরের মাধ্যমে ওই এলাকায় অনেকেই চাকরি পেয়েছে। তার ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী ছাড়াও সমবায় বিভাগে কর্মরত আব্দুল গফুর, তার ভাই গোলজার রহমান আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীতে কর্মরত আছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে কর্মরত জাহিদ হাসান, কৃষি বিভাগে কর্মরত জয় কবির রিকো, কৃষি অফিসে কর্মরত সাইফুল ইসলামসহ অনেক ব্যক্তিকেই টাকার বিনিময়ে চাকরি দিয়েছে সে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।